নোয়াখালী অফিস ও মাদারীপুর প্রতিনিধি
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় গত শুক্রবার রাতে একটি মন্দিরে ভাঙচুর এবং অন্য একটি মন্দিরে লুটপাট চালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। একই রাতে মাদারীপুর শহরের কুলপদ্বী এলাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি বাড়িতে দুষ্কৃতকারীরা আগুন দিয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের বিবরণ অনুসারে, গত শুক্রবার রাত একটার দিকে চার-পাঁচজনের একটি দল বেগমগঞ্জ উপজেলার কৃষ্ণরামপুর উচ্চবিদ্যালয়সংলগ্ন কালিরহাট শ্রীশ্রীরক্ষাকালী মন্দিরের সদ্যনির্মিত সীমানাপ্রাচীর ভাঙতে শুরু করে। এ সময় লোকজন শব্দ শুনে মন্দিরের দিকে এগিয়ে যায়। এ সময় তাদের দেখে মন্দিরের সামনে থেকে দুই ব্যক্তি দ্রুত হেঁটে চলে যান। একই রাতে চৌমুহনী চৌরাস্তায় শ্রীশ্রীরক্ষাকালী মন্দিরের লোহার ফটক ও কাঠের দরজার তালা ভেঙে দুষ্কৃতকারীরা প্রণামী বাক্স থেকে কয়েক হাজার টাকা এবং প্রতিমার সামনে থাকা স্বর্ণালংকার লুটপাট করে।
বেগমগঞ্জ থানার ওসি সৈয়দ আহসানুল ইসলাম বলেন, মন্দিরের সীমানাপ্রাচীর ভাঙচুরের ঘটনায় দুজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। আর চৌমোহনী চৌরাস্তার ঘটনাটি চুরির। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে মাদারীপুর জেলা শহরের কুলপদ্বী এলাকায় গত শুক্রবার রাতে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের এক লোকের বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, কুলপদ্বী এলাকার উত্তম কুমার মালো রাত দুইটার দিকে মাদারীপুর লেকে মাছ ধরার জন্য বাড়ি থেকে বের হন। এর কিছুক্ষণ পর একদল দুষ্কৃতকারী তাঁর ঘরের টিনের চালায় রাসায়নিক পদার্থ ছিটিয়ে আগুন দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। এ সময় গৃহকর্ত্রী চায়না রানী মালো চিৎকার করলে এলাকাবাসী সেখানে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
প্রথম আলো
বাংলাদেশের হিন্দু
বাংলাদেশের হিন্দুদের যাপিত জীবন
৩২ জেলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতা, ২৪ দিনে ৩১৯টি মন্দির, বাড়ি-দোকানে হামলা
৩২ জেলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতা, ২৪ দিনে ৩১৯টি মন্দির, দেড় হাজার বাড়ি-দোকানে হামলা |
২৮ ফেব্রুয়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায়ে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষণার পর থেকে এসব হামলা চালানো হয়। জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা ফাঁসির আদেশে ক্ষুব্ধ হয়ে হামলা চালান বলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি, প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানিয়েছে। কিছু এলাকায় বিএনপির কর্মী-সমর্থকেরাও হামলায় জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে শুরু থেকেই জামায়াত এ ধরনের হামলায় জড়িত, থাকার কথা অস্বীকার করে বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে আসছে।
অবশ্য এক সপ্তাহ ধরে গভীর রাতে বিভিন্ন স্থানে মন্দিরে হামলা চালানো হচ্ছে। এসব হামলায় কারা জড়িত পুলিশ ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা তা বলতে পারছে না।
২৪ দিনের ঘটনায় সংখ্যালঘু ব্যক্তিরা ২৬টি মামলা করেছেন। পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে ১৭টি। এসব মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছে ১৮৯ জন।
চট্টগ্রাম: রায় ঘোষণার দিন জামায়াত-শিবির বাঁশখালী উপজেলার জলদী ও গুনাগরি এলাকায় সাতটি বাড়ি, তিনটি মন্দির ও ৪০টি দোকানে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। জলদীর ধোপাপাড়া এলাকায় কুপিয়ে হত্যা করা হয় বৃদ্ধ দয়াল হরিকে। এতে আহত হয় অন্তত ১৫ জন।
একই দিন সাতকানিয়া উপজেলার চরতি ইউনিয়নে নয়টি মন্দির, নয়টি দোকানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে ৫৮ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে প্রশাসন জানিয়েছে।
৮ মার্চ রাতে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার পদুয়ার আঁধারমানিক শীলপাড়ার তিনজনের বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। বাড়ির লোকজন কোনোরকমে বাঁচতে পারলেও পুড়ে ছাই হয়ে যায় বসতভিটা। চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ১৩টি দোকানে আগুন দেওয়া হয়।
নোয়াখালী: ২৮ ফেব্রুয়ারি বেলা পৌনে দুইটা থেকে বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত বেগমগঞ্জ উপজেলার রাজগঞ্জ বাজার এবং পাশের আলাদীনগর ও টঙ্গীরপার গ্রামে ব্যাপক তাণ্ডব চালানো হয়। আগুনে আটটি বাড়ির ২১টি ঘর সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয় ৪৬টি ঘরে।
ছয়টি মন্দির ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। ভেঙে ফেলা হয় মন্দিরের প্রতিমাগুলো। হামলা চালানো হয় রাজগঞ্জ বাজারের হিন্দুদের সাতটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে। পরে আগুন দেওয়া হয় চাটখিল উপজেলায় একটি মন্দিরসহ সেনবাগ ও কবিরহাট উপজেলার সাতটি বাড়ির ১০টি খড়ের গাদায়।
এর মধ্যে আলাদীনগর গ্রামের মালীবাড়িতেই পুড়িয়ে দেওয়া হয় ১২টি বসতঘর। বাড়ির বাসিন্দা অমূল্য চন্দ্র জানান, পরনের কাপড় ছাড়া কিছুই রক্ষা করতে পারেননি তাঁদের বাড়ির লোকজন।
এসব ঘটনায় বেগমগঞ্জ থানার পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করে। এতে জামায়াত-শিবির ও বিএনপির ৭১ জনের নাম উল্লেখ করে দেড় থেকে দুই হাজার অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। পুলিশ গ্রেপ্তার করে ৩৮ জনকে।
সর্বশেষ শুক্রবার রাতে বেগমগঞ্জের রাজগঞ্জের কালিরহাট রক্ষাকালী মন্দিরে আবারও হামলা চালিয়ে মন্দিরের সীমানা প্রাচীর ভাঙচুর করা হয়। একই রাতে চৌমুহনী চৌরাস্তায় আরেকটি রক্ষাকালী মন্দিরে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা।
রংপুর: ২৮ ফেব্রুয়ারি মিঠাপুকুর উপজেলার পাঁচটি মন্দির ও ৮ মার্চ নগরের আমাশু কুকরুল এলাকায় একটি মন্দির ও মন্দিরভিত্তিক পাঠাগার পুড়িয়ে দেয় জামায়াত-শিবির। পীরগাছার তাম্বুলপুর বাজারে হিন্দুদের পাঁচটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। পুলিশ তিনটি মামলা করলেও কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
দিনাজপুর: ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ২ মার্চ জেলার খানসামা, চিরিরবন্দর ও সদর উপজেলায় সংখ্যালঘুদের ১৪টি বাড়ি, সাতটি দোকান ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এসব ঘটনায় সাতটি মামলা করেছে তিন থানার পুলিশ।
বগুড়া: ৩ থেকে ২০ মার্চ পর্যন্ত জেলার গাবতলী ও দুপচাঁচিয়া উপজেলার পাঁচটি মন্দিরে হামলা, প্রতিমা ভাঙচুর এবং একটি মন্দিরে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। হিন্দুদের দুজনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেও হামলা হয়েছে। শেরপুর উপজেলায় দুই ব্যক্তির খড়ের গাদায় অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা।
জয়পুরহাট: পাঁচবিবি ও সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে হিন্দুদের ২৪টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও আটটি বাড়ি ভাঙচুর, লুটপাট এবং সেগুলোতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। জামায়াত-শিবিরের নেতৃত্বে এ হামলায় একটি মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়। রায় ঘোষণার পরপর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। জেলার তিনটি থানায় পুলিশ ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা বাদী হয়ে ৫২টি মামলা করেছেন। পাঁচবিবি থানায় ৪১টি, সদর থানায় সাতটি ও কালাই থানায় চারটি মামলায় ৪০০ জনের নামে এবং অজ্ঞাত পরিচয় আরও ১৫ থেকে ১৬ হাজার ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
জয়পুরহাট জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্যপরিষদের সভাপতি নৃপেন্দ্রনাথ মণ্ডল বলেন, জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডবে জেলার সংখ্যালঘু ব্যক্তিদের প্রায় দেড় থেকে দুই কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
খুলনা: বিএনপির ডাকা হরতাল চলাকালে ৫ মার্চ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মিছিল নিয়ে খুলনার কয়রা উপজেলার আমাদী বাজারের হামলা করে ২০টির বেশি দোকান ভাঙচুর করা হয়। এলাকাবাসী ও ব্যবসায়ীরা প্রতিরোধ করলে হামলাকারীরা বাজারের পাশে রজকপাড়ায় (ধোপা) ঢুকে বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট শুরু করে। একপর্যায়ে হামলাকারীরা নারীদের আটকে রেখে কয়েকটি বাড়ি ও একটি মন্দিরে আগুন ধরিয়ে দেয়।
১৮ মার্চ রাত সাড়ে আটটার দিকে একদল দুর্বৃত্ত ককটেল ফাটিয়ে ও লাঠি, রামদা, ইট নিয়ে খুলনা নগরের দৌলতপুর পাবলা বণিকপাড়ার দুটি হিন্দু মন্দির এবং তাদের অর্ধশতাধিক বাড়িঘরে হামলা ও ভাঙচুর চালায়।
পাবলা বণিকপাড়া সর্বজনীন কালীমন্দিরের সাধারণ সম্পাদক তিলক গোস্বামী বলেন, ‘দেশ স্বাধীনের পর আগে কখনো এমন ঘটনা দেখিনি।’ এ ঘটনায় দুটি মামলায় ২৮ জন গ্রেপ্তার হয়েছে।
সাতক্ষীরা: জেলা সদর, শ্যামনগর ও দেবহাটা উপজেলায় ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৯ মার্চ পর্যন্ত হিন্দুদের ১৩টি দোকান, একটি বাড়িতে ভাঙচুর, অগ্নিংযোগ ও লুটপাট করা হয়।
গত বুধবার সদর উপজেলার শাখরা বাজারে গেলে একজন গ্রাম্যচিকিৎসক বলেন, ৪ মার্চ রাত সাড়ে সাতটার দিকে জামায়াত-শিবিরের কর্মী-সমর্থক তাঁর ক্লিনিকসহ বাজারের কয়েকজন হিন্দু ব্যবসায়ীর প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও লুটপাট করে।
ওই বাজারের একটি দোকানের মালিক জানান, ৪ মার্চ ভোমরার দিক থেকে আসা জামায়াত-শিবিরের কয়েক শ নেতা-কর্মীর মিছিল থেকে তাঁর দোকানের শোকেস ও ফ্রিজ ভাঙচুর করে টাকা, মিষ্টি ও দই লুটপাট করা হয়।
শ্যামনগরের নওয়াবেকি বাজারের একজন ব্যবসায়ী তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, বসতবাড়ি ও মন্দিরে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের কথা বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি আক্ষেপের সঙ্গে বলেন, লুটপাট করলে কিছু থাকে। কিন্তু পুড়িয়ে দিলে সব শেষ হয়ে যায়। সেই ছাই দিয়েও কোনো কাজ করা যায় না।
সাতক্ষীরা জেলা পূজা উদ্যাপন কমিটির সভাপতি মনোরঞ্জন মুখার্জি বলেন, দেশে কিছু ঘটলেই সংখ্যালঘু ব্যক্তিরা তার বলি হচ্ছে। প্রশাসনের কাছে বারবার সহযোগিতা চেয়েও পাওয়া যায়নি। হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের পর সংখ্যালঘু ব্যক্তিরা মামলা করারও সাহস পাচ্ছেন না।
পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০ মার্চ পর্যন্ত হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও হত্যার অভিযোগে ৬৫টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় এক হাজার ৯৬ জনের নাম উল্লেখ করে কয়েক হাজার মানুষকে আসামি করা হয়েছে। বুধবার ৯০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ: ২৮ ফেব্রুয়ারি কানসাট পল্লী বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে অগ্নিসংযোগের পর কানসাট গঙ্গা আশ্রম, গঙ্গামন্দির ও কালীমন্দিরেও হামলা চালানো হয়। দুর্বৃত্তরা আশ্রমঘাটের ১৩০ ফুট পাকা সীমানাপ্রাচীরসহ দুটি গেট, গঙ্গামন্দিরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ এবং কালীমন্দিরের প্রাচীর ভেঙে ফেলে।
৩ মার্চ রাতে দুর্বৃত্তরা শিবগঞ্জ পৌর এলাকার আলীডাঙ্গা গ্রামের দুর্গামন্দিরের বাঁশ-কাঠ-খড়ের দুর্গা প্রতিমার কাঠামো পুড়িয়ে দেয়। মন্দির থেকে সরস্বতী দেবীর একটি প্রতিমাও চুরি করে নিয়ে যায়।
সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর ও বেলকুচি উপজেলায় পাঁচটি; কক্সবাজারের কুতুবদিয়া, গাজীপুরের সদর ও শ্রীপুরে তিনটি করে; পটুয়াখালীর বাউফল, লালমনিরহাটের আদিতমারী ও হাতীবান্ধা, লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও রায়পুর, নেত্রকোনার সদর ও পূর্বধলা, কুমিল্লার দাউদকান্দি ও ব্রাহ্মণপাড়া এবং মুন্সিগঞ্জের লৌহজং ও সিরাজদিখান উপজেলায় দুটি করে মন্দির ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে বরগুনার বামনা, ময়মনসিংহের ফুলবাড়ী, গোপালগঞ্জ, পাবনা, বরিশালের গৌরনদী, মৌলভীবাজারের বড়লেখা, নাটোর, শেরপুর ও নীলফামারীতে। লক্ষ্মীপুর, ফেনী, নাটোর ও গাইবান্ধায় একটি করে বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় চারটি দোকান ও মৌলভীবাজারের বড়লেখায় তিনটি দোকান এবং সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার এক সংখ্যালঘু ব্যক্তির দেবতাঘরে আগুন দেওয়া হয়।
গত শুক্রবার রাতে মাদারীপুর শহরের কুলপদ্বী এলাকায় মৎস্যজীবী উত্তম কুমার মালোর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে দুর্বত্তরা।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রতিনিধি ও সংবাদদাতারা]
প্রথম আলো
সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তাহীনতা
এসব আক্রমণ কি বন্ধ হবে না?
মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের বিরোধিতাকে কেন্দ্র করে গত মাসের শেষ থেকে যে রাজনৈতিক সহিংসতা দেখা দিয়েছিল তা এখন বন্ধ হয়েছে, কিন্তু সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ বন্ধ হচ্ছে না কেন? অস্থির ও সহিংস রাজনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলোর সম্পর্ক কী? কেন তারা আক্রান্ত হচ্ছে? কেন তাদের নিরাপত্তাহীনতার অবসান ঘটছে না? বাংলাদেশের নির্বাচিত সরকার, সব রাজনৈতিক দল ও সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসাধারণের জন্য এটা যারপরনাই লজ্জা ও গ্লানির বিষয়।
সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার দিবাগত গভীর রাতে গাজীপুরে হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি মন্দিরে অগ্নিসংযোগের খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। লোকজন আগুন নিভিয়ে ফেলেছে, কিন্তু চারটি প্রতিমা আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার রাতে বগুড়ার গাবতলী উপজেলার চারটি মন্দিরের ১১টি প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে। বুধবার বাগেরহাট জেলায় মন্দিরে ভাঙচুর করা হয়েছে দ্বিতীয় দফায়। ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনের ঘরবাড়ি, দোকানপাট ও মন্দিরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার খবর দেশি ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের হিসাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দেড় হাজারেরও বেশি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি, দোকানপাট ও মন্দিরে আক্রমণের ঘটনাগুলোর অধিকাংশই ঘটেছে প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে, যেখানে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যথেষ্ট দৃঢ়তার সঙ্গে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। আক্রান্ত অধিকাংশ মানুষ দরিদ্র, সামাজিক প্রভাব-প্রতিপত্তিহীন। তাঁরা কোনো সামাজিক বা রাজনৈতিক সুরক্ষাও পাননি। তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য যথেষ্ট দৃঢ় ব্যবস্থা যে এখনো নেওয়া হয়নি, উল্লিখিত সাম্প্রতিক আক্রমণের ঘটনাগুলো থেকে সেটাই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সরকার এসব ঘটনায় আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করার চেয়ে বেশি উৎসাহ দেখিয়েছে রাজনৈতিক বক্তব্য প্রচারে। জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে প্রধান প্রতিপক্ষ দল বিএনপিকেও দোষারোপ করেছে। অন্যদিকে, বিএনপি উল্টো দোষারোপ করেছে সরকারি দলকে। সব মিলিয়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষগুলোর নাজুকতাকে পুঁজি করে যে রাজনীতি চলেছে, তা এককথায় ন্যক্কারজনক।
রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন মোটামুটি শান্ত, অন্তত সেই সহিংস পরিস্থিতির আপাত-অবসান ঘটেছে, যা সব মানুষের জীবনকে নিরাপত্তাহীন ও শঙ্কাময় করে তুলেছিল। এখন হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন মন্দিরে আক্রমণ চালিয়ে আগুন লাগানো ও প্রতিমা ভাঙচুর করার ঘটনাগুলো ঘটছে রাতের অন্ধকারে। সংবাদমাধ্যমে আক্রমণকারীদের বলা হচ্ছে ‘দুর্বৃত্ত’। আক্রান্ত জনগোষ্ঠী দুর্বৃত্তদের সম্পর্কে পুলিশকে বিশেষ কিছু জানাচ্ছে না বা জানাতে পারছে না। স্বভাবতই তাদের মধ্যে ভীতি-শঙ্কা কাজ করছে। এ রকম পরিস্থিতিতে অত্যন্ত কঠোর হাতে আইন প্রয়োগের মাধ্যমে অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া প্রথম কর্তব্য। এ দায়িত্ব সরকারের, এটা পালন করতে হবে দলীয় রাজনৈতিক স্বার্থের বিবেচনা ঝেড়ে ফেলে দিয়ে, পুলিশের দুর্নীতির সুযোগ পুরোপুরি বন্ধ করে। আর প্রয়োজন সামাজিক শক্তি-সমাবেশ; আক্রান্ত সংখ্যালঘুদের পাশে দাঁড়াতে হবে সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের মানুষকে, সাম্প্রদায়িক আক্রমণের বিরুদ্ধে গড়ে তুলতে হবে প্রবল ও ব্যাপক সামাজিক প্রতিরোধ।
সম্পাদকীয় | তারিখ: ২৪-০৩-২০১৩ প্রথম আলো
মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের বিরোধিতাকে কেন্দ্র করে গত মাসের শেষ থেকে যে রাজনৈতিক সহিংসতা দেখা দিয়েছিল তা এখন বন্ধ হয়েছে, কিন্তু সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ বন্ধ হচ্ছে না কেন? অস্থির ও সহিংস রাজনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলোর সম্পর্ক কী? কেন তারা আক্রান্ত হচ্ছে? কেন তাদের নিরাপত্তাহীনতার অবসান ঘটছে না? বাংলাদেশের নির্বাচিত সরকার, সব রাজনৈতিক দল ও সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসাধারণের জন্য এটা যারপরনাই লজ্জা ও গ্লানির বিষয়।
সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার দিবাগত গভীর রাতে গাজীপুরে হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি মন্দিরে অগ্নিসংযোগের খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। লোকজন আগুন নিভিয়ে ফেলেছে, কিন্তু চারটি প্রতিমা আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার রাতে বগুড়ার গাবতলী উপজেলার চারটি মন্দিরের ১১টি প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে। বুধবার বাগেরহাট জেলায় মন্দিরে ভাঙচুর করা হয়েছে দ্বিতীয় দফায়। ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনের ঘরবাড়ি, দোকানপাট ও মন্দিরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার খবর দেশি ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের হিসাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দেড় হাজারেরও বেশি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি, দোকানপাট ও মন্দিরে আক্রমণের ঘটনাগুলোর অধিকাংশই ঘটেছে প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে, যেখানে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যথেষ্ট দৃঢ়তার সঙ্গে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। আক্রান্ত অধিকাংশ মানুষ দরিদ্র, সামাজিক প্রভাব-প্রতিপত্তিহীন। তাঁরা কোনো সামাজিক বা রাজনৈতিক সুরক্ষাও পাননি। তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য যথেষ্ট দৃঢ় ব্যবস্থা যে এখনো নেওয়া হয়নি, উল্লিখিত সাম্প্রতিক আক্রমণের ঘটনাগুলো থেকে সেটাই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সরকার এসব ঘটনায় আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করার চেয়ে বেশি উৎসাহ দেখিয়েছে রাজনৈতিক বক্তব্য প্রচারে। জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে প্রধান প্রতিপক্ষ দল বিএনপিকেও দোষারোপ করেছে। অন্যদিকে, বিএনপি উল্টো দোষারোপ করেছে সরকারি দলকে। সব মিলিয়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষগুলোর নাজুকতাকে পুঁজি করে যে রাজনীতি চলেছে, তা এককথায় ন্যক্কারজনক।
রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন মোটামুটি শান্ত, অন্তত সেই সহিংস পরিস্থিতির আপাত-অবসান ঘটেছে, যা সব মানুষের জীবনকে নিরাপত্তাহীন ও শঙ্কাময় করে তুলেছিল। এখন হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন মন্দিরে আক্রমণ চালিয়ে আগুন লাগানো ও প্রতিমা ভাঙচুর করার ঘটনাগুলো ঘটছে রাতের অন্ধকারে। সংবাদমাধ্যমে আক্রমণকারীদের বলা হচ্ছে ‘দুর্বৃত্ত’। আক্রান্ত জনগোষ্ঠী দুর্বৃত্তদের সম্পর্কে পুলিশকে বিশেষ কিছু জানাচ্ছে না বা জানাতে পারছে না। স্বভাবতই তাদের মধ্যে ভীতি-শঙ্কা কাজ করছে। এ রকম পরিস্থিতিতে অত্যন্ত কঠোর হাতে আইন প্রয়োগের মাধ্যমে অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া প্রথম কর্তব্য। এ দায়িত্ব সরকারের, এটা পালন করতে হবে দলীয় রাজনৈতিক স্বার্থের বিবেচনা ঝেড়ে ফেলে দিয়ে, পুলিশের দুর্নীতির সুযোগ পুরোপুরি বন্ধ করে। আর প্রয়োজন সামাজিক শক্তি-সমাবেশ; আক্রান্ত সংখ্যালঘুদের পাশে দাঁড়াতে হবে সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের মানুষকে, সাম্প্রদায়িক আক্রমণের বিরুদ্ধে গড়ে তুলতে হবে প্রবল ও ব্যাপক সামাজিক প্রতিরোধ।
সম্পাদকীয় | তারিখ: ২৪-০৩-২০১৩ প্রথম আলো
মাদারীপুরে সংখ্যালঘুর বাড়িতে আগুন, চার লাখ টাকার মাল পুড়ে ছাই
নিজস্ব সংবাদদাতা, মাদারীপুর, ২৩ মার্চ ॥ মাদারীপুর শহরের কুলপদ্বী এলাকায় একটি সংখ্যালঘুর বাড়িতে আগুন দিয়েছে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা। এতে ঘরের মধ্যে থাকা মাছ ধরার জাল ও মাছের খাবারসহ প্রায় ৪ লাখ টাকার মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। শুক্রবার রাত আড়াইটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, মাদারীপুর শহরের কুলপদ্বী এলাকার মৎস্যজীবী উত্তম কুমার মালো রাত ২টার দিকে মাদারীপুর লেকে মাছ ধরার জন্য বের হয়। গৃহকর্তা বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার কিছু সময় পর পরই একদল দুর্বৃত্ত ঘরের টিনের চালায় এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ ছিটিয়ে আগুন দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। আগুন দেখে গৃহকর্ত্রী চায়না রানী মালো সঙ্গে সঙ্গে টের পেয়ে চিৎকার করলে এলাকাবাসী এগিয়ে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
ক্ষতিগ্রস্ত উত্তম কুমার মালো জানান, মাছ ধরার বড় কয়েকটি জাল, ২ টন মাছের খাবার ও কাঠপাটসহ প্রায় ৪ লাখ টাকার মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। বাড়িতে নির্মাণ কাজের একটি বৈদ্যুতিক পানির পাম্পের সংযোগ থাকায় দ্রুত পানি দিয়ে আশপাশের অন্য ঘরগুলো রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে।
মাদারীপুরের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার (এডিশনাল এসপি) মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম জানান, দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় একদল দুর্বৃত্ত এই পরিবারটিকে হয়রানি ও ক্ষতি করার চেষ্টা করে আসছিল বলে তথ্য পাওয়া গেছে। এরই ধারাবাহিকতায় তারা গত রাতে ঘরে আগুন দিয়েছে। শীঘ্রই দুর্বৃত্তদের চিহ্নিত করা সম্ভব হবে।
দৈনিক জনকণ্ঠ
স্থানীয় সূত্র জানায়, মাদারীপুর শহরের কুলপদ্বী এলাকার মৎস্যজীবী উত্তম কুমার মালো রাত ২টার দিকে মাদারীপুর লেকে মাছ ধরার জন্য বের হয়। গৃহকর্তা বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার কিছু সময় পর পরই একদল দুর্বৃত্ত ঘরের টিনের চালায় এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ ছিটিয়ে আগুন দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। আগুন দেখে গৃহকর্ত্রী চায়না রানী মালো সঙ্গে সঙ্গে টের পেয়ে চিৎকার করলে এলাকাবাসী এগিয়ে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
ক্ষতিগ্রস্ত উত্তম কুমার মালো জানান, মাছ ধরার বড় কয়েকটি জাল, ২ টন মাছের খাবার ও কাঠপাটসহ প্রায় ৪ লাখ টাকার মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। বাড়িতে নির্মাণ কাজের একটি বৈদ্যুতিক পানির পাম্পের সংযোগ থাকায় দ্রুত পানি দিয়ে আশপাশের অন্য ঘরগুলো রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে।
মাদারীপুরের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার (এডিশনাল এসপি) মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম জানান, দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় একদল দুর্বৃত্ত এই পরিবারটিকে হয়রানি ও ক্ষতি করার চেষ্টা করে আসছিল বলে তথ্য পাওয়া গেছে। এরই ধারাবাহিকতায় তারা গত রাতে ঘরে আগুন দিয়েছে। শীঘ্রই দুর্বৃত্তদের চিহ্নিত করা সম্ভব হবে।
দৈনিক জনকণ্ঠ
গুমের ৬ দিন পর সন্তোষের মাটিচাপা লাশ উদ্ধার
ঘাতক বাবুল গ্রেফতার
নিজস্ব সংবাদদাতা, লক্ষ্মীপুর, ২৩ মার্চ ॥ লক্ষ্মীপুরে সন্তোষ চন্দ্র বর্মনকে (৩১) হত্যা করার ৬ দিন পর শনিবার সন্ধ্যায় তার মাটিচাপা লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নিজের স্ত্রীকে উত্ত্যক্ত করার জেরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এই যুবককে হত্যা করে লাশ মাটিচাপা দেয় দুর্বৃত্তরা। লাশ গুম করার ছয়দিন পর শনিবার সন্ধ্যায় লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানা পুলিশ লাশটি উদ্ধার করেছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে ওসি লিটন দেওয়ানের উপস্থিতিতে সদর উপজেলার পশ্চিম লক্ষ্মীপুর স্থানীয় আলী আজম মাস্টার খামার বাড়ীর একটি গর্ত খুড়ে লাশটি উদ্ধার করা হয়। তার কাছে পাওয়া আইডি কার্ডে বাড়ি-গাইবান্ধা জেলার বাজারপাড়ার বেকাটরি গ্রামের কথা উল্লেখ রয়েছে। সন্তোষ চন্দ্র বর্মন ও তার স্ত্রী সদর উপজেলার পশ্চিম লক্ষ্মীপুর স্থানীয় দালাল বাজার ইউপি’ রাধা গোবিন্দের আখড়ার সভাপতি রাধে শ্যাম বাবুর বাসায় কেয়ারটেকার হিসেবে কাজ করত।
নিহতের স্ত্রী ও চার বছর বয়সী কন্যা সন্তানের জননী পলি রানী পঞ্চমী জানান, গত ১৮ মার্চ সোমবার এশার নামাজের আজানের পর একই এলাকার বাবুল (৪০) তার স্বামী সন্তোষকে ডেকে নিয়ে যায়। এর পর আর সে বাসায় ফেরেনি। এর আগে বাবুল নিহতের স্ত্রী পলিকে বিভিন্নভাবে উত্ত্যক্ত করত এবং একা ধিকবার তাকে কু-প্রস্তাবও দেয়। সন্তোষ চন্দ্র এ নিয়ে ঘটনার দিন আসামি বাবুলকে বকাঝকা করে। নিখোজ হওয়ার পর বাবুলের কাছে সন্তোষের খবর জানতে চাইলে বাবুল তাকে জানিয়ে দেয় যে সন্তোষ আর ফিরে আসবে না। এর পরও প্রায় প্রতিনিয়ত পলিকে উত্ত্যক্ত করে যাচ্ছিল বাবুল। ঘটনা আঁচ করতে পেরে ২১মার্চ পলি রানী পঞ্চমী বাদী হয়ে বাবুলসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৩/৪ জনকে আসামি করে সদর থানায় অভিযোগ দায়ের করে। ওইদিন রাতেই পুলিশ বাবুলকে তার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী শনিবার সন্ধ্যায় গর্ত খুড়ে লাশ উদ্ধার করে। পরে ময়নাতদন্তের জন্য রাতে লাশটি সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই মোঃ শাহজাহান, ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সন্তোষ বর্মনকে এলোপাতাড়ি ধারালো অস্ত্রের আঘাতের পর গলায় ফাঁস লাগিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে। পুলিশের সুরতহাল অনুযায়ী নিহতের মাথার পেছনে বামদিকে, বাম ও ডান হাতের বিভিন্ন অংশে ধারালো অস্ত্রের কাটা গভীর গর্ত রয়েছে। হত্যার পর ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার জন্য লাশ গুম করা হয়েছিল। আর সেখানে খুনীদের আস্তানা ছিল। ৬দিন অতিবাহিত হওয়ায় লাশে পচন ধরেছে। জীবন সঙ্গীকে হারিয়ে স্ত্রী পলির আর্তনাদে এলাকার পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। স্বামীর হত্যার বদলে তিনি খুনীদের ফাঁসির দাবি করেছেন।
জনকণ্ঠ
নিজস্ব সংবাদদাতা, লক্ষ্মীপুর, ২৩ মার্চ ॥ লক্ষ্মীপুরে সন্তোষ চন্দ্র বর্মনকে (৩১) হত্যা করার ৬ দিন পর শনিবার সন্ধ্যায় তার মাটিচাপা লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নিজের স্ত্রীকে উত্ত্যক্ত করার জেরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এই যুবককে হত্যা করে লাশ মাটিচাপা দেয় দুর্বৃত্তরা। লাশ গুম করার ছয়দিন পর শনিবার সন্ধ্যায় লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানা পুলিশ লাশটি উদ্ধার করেছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে ওসি লিটন দেওয়ানের উপস্থিতিতে সদর উপজেলার পশ্চিম লক্ষ্মীপুর স্থানীয় আলী আজম মাস্টার খামার বাড়ীর একটি গর্ত খুড়ে লাশটি উদ্ধার করা হয়। তার কাছে পাওয়া আইডি কার্ডে বাড়ি-গাইবান্ধা জেলার বাজারপাড়ার বেকাটরি গ্রামের কথা উল্লেখ রয়েছে। সন্তোষ চন্দ্র বর্মন ও তার স্ত্রী সদর উপজেলার পশ্চিম লক্ষ্মীপুর স্থানীয় দালাল বাজার ইউপি’ রাধা গোবিন্দের আখড়ার সভাপতি রাধে শ্যাম বাবুর বাসায় কেয়ারটেকার হিসেবে কাজ করত।
নিহতের স্ত্রী ও চার বছর বয়সী কন্যা সন্তানের জননী পলি রানী পঞ্চমী জানান, গত ১৮ মার্চ সোমবার এশার নামাজের আজানের পর একই এলাকার বাবুল (৪০) তার স্বামী সন্তোষকে ডেকে নিয়ে যায়। এর পর আর সে বাসায় ফেরেনি। এর আগে বাবুল নিহতের স্ত্রী পলিকে বিভিন্নভাবে উত্ত্যক্ত করত এবং একা ধিকবার তাকে কু-প্রস্তাবও দেয়। সন্তোষ চন্দ্র এ নিয়ে ঘটনার দিন আসামি বাবুলকে বকাঝকা করে। নিখোজ হওয়ার পর বাবুলের কাছে সন্তোষের খবর জানতে চাইলে বাবুল তাকে জানিয়ে দেয় যে সন্তোষ আর ফিরে আসবে না। এর পরও প্রায় প্রতিনিয়ত পলিকে উত্ত্যক্ত করে যাচ্ছিল বাবুল। ঘটনা আঁচ করতে পেরে ২১মার্চ পলি রানী পঞ্চমী বাদী হয়ে বাবুলসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৩/৪ জনকে আসামি করে সদর থানায় অভিযোগ দায়ের করে। ওইদিন রাতেই পুলিশ বাবুলকে তার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী শনিবার সন্ধ্যায় গর্ত খুড়ে লাশ উদ্ধার করে। পরে ময়নাতদন্তের জন্য রাতে লাশটি সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই মোঃ শাহজাহান, ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সন্তোষ বর্মনকে এলোপাতাড়ি ধারালো অস্ত্রের আঘাতের পর গলায় ফাঁস লাগিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে। পুলিশের সুরতহাল অনুযায়ী নিহতের মাথার পেছনে বামদিকে, বাম ও ডান হাতের বিভিন্ন অংশে ধারালো অস্ত্রের কাটা গভীর গর্ত রয়েছে। হত্যার পর ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার জন্য লাশ গুম করা হয়েছিল। আর সেখানে খুনীদের আস্তানা ছিল। ৬দিন অতিবাহিত হওয়ায় লাশে পচন ধরেছে। জীবন সঙ্গীকে হারিয়ে স্ত্রী পলির আর্তনাদে এলাকার পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। স্বামীর হত্যার বদলে তিনি খুনীদের ফাঁসির দাবি করেছেন।
জনকণ্ঠ
গাজীপুরে কেশুরিতা মধ্যপাড়া শ্রীশ্রী লক্ষীমাতা মন্দিরে আগুন
গাজীপুরে শ্রীশ্রী লক্ষীমাতা মন্দিরে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা |
গাজীপুর সদর উপজেলায় একটি মন্দিরে আগুন দিয়েছে ‘দুর্বৃত্তরা’।
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে উপজেলার কেশুরিতা মধ্যপাড়া শ্রীশ্রী লক্ষীমাতা মন্দিরে এ ঘটনা ঘটে।
মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি শ্যামল চন্দ্র দাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, রাত ৩টার দিকে মন্দিরে আগুন জ্বলতে দেখে এলাকাবাসী দ্রুত তা নিভিয়ে ফেলে।
আগুনে মন্দিরের চারটি প্রতিমা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জানালেও কারা এ আগুন দিয়েছে- সে বিষয়ে কিছু বলতে পারেননি শ্যামল চন্দ্র।
সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ফৌজিয়া রহমান সকালে ক্ষতিগ্রস্ত মন্দির পরিদর্শন করে বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধাপরাধের মামলায় জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায়ের পর জামায়াত-শিবির কর্মীরা সারাদেশে টানা তাণ্ডব শুরু করে। এ সময় বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির-বাড়িঘরে হামলা-ভাংচুর-অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
নীলফামারীতে প্রতিমা ভাংচুর
নীলফামারী, প্রতিনিধি, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
নীলফামারী সদরে একটি কালী মন্দিরের প্রতিমা ভাংচুর করেছে দুর্বৃত্তরা।
বুধবার রাতের কোনো এক সময় কে বা কারা সদর উপজেলার টুপামারী ইউনিয়নের রামগঞ্জ কালী মন্দিরের তিনটি প্রতিমা ভাংচুর করে।
নীলফামারী সদর থানার ওসি আবু আক্কাস আহমেদ প্রতিমা ভাংচুরের সত্যতা স্বীকার করে সাংবাদিকদের জানান, পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
এদিকে ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার দুপুরে পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষে মন্দির চত্বরে প্রতিবাদ-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে জেলা পরিষদের প্রশাসক ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মমতাজুল হক, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মসফিকুর রহমান রিন্টু ও টুপামারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মছিরত আলী শাহ ফকির বক্তব্য রাখেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
নীলফামারী সদরে একটি কালী মন্দিরের প্রতিমা ভাংচুর করেছে দুর্বৃত্তরা।
বুধবার রাতের কোনো এক সময় কে বা কারা সদর উপজেলার টুপামারী ইউনিয়নের রামগঞ্জ কালী মন্দিরের তিনটি প্রতিমা ভাংচুর করে।
নীলফামারী সদর থানার ওসি আবু আক্কাস আহমেদ প্রতিমা ভাংচুরের সত্যতা স্বীকার করে সাংবাদিকদের জানান, পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
এদিকে ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার দুপুরে পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষে মন্দির চত্বরে প্রতিবাদ-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে জেলা পরিষদের প্রশাসক ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মমতাজুল হক, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মসফিকুর রহমান রিন্টু ও টুপামারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মছিরত আলী শাহ ফকির বক্তব্য রাখেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Subscribe to:
Posts (Atom)