এসব আক্রমণ কি বন্ধ হবে না?
মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের বিরোধিতাকে কেন্দ্র করে গত মাসের শেষ থেকে যে রাজনৈতিক সহিংসতা দেখা দিয়েছিল তা এখন বন্ধ হয়েছে, কিন্তু সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ বন্ধ হচ্ছে না কেন? অস্থির ও সহিংস রাজনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলোর সম্পর্ক কী? কেন তারা আক্রান্ত হচ্ছে? কেন তাদের নিরাপত্তাহীনতার অবসান ঘটছে না? বাংলাদেশের নির্বাচিত সরকার, সব রাজনৈতিক দল ও সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসাধারণের জন্য এটা যারপরনাই লজ্জা ও গ্লানির বিষয়।
সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার দিবাগত গভীর রাতে গাজীপুরে হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি মন্দিরে অগ্নিসংযোগের খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। লোকজন আগুন নিভিয়ে ফেলেছে, কিন্তু চারটি প্রতিমা আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার রাতে বগুড়ার গাবতলী উপজেলার চারটি মন্দিরের ১১টি প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে। বুধবার বাগেরহাট জেলায় মন্দিরে ভাঙচুর করা হয়েছে দ্বিতীয় দফায়। ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনের ঘরবাড়ি, দোকানপাট ও মন্দিরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার খবর দেশি ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের হিসাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দেড় হাজারেরও বেশি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি, দোকানপাট ও মন্দিরে আক্রমণের ঘটনাগুলোর অধিকাংশই ঘটেছে প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে, যেখানে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যথেষ্ট দৃঢ়তার সঙ্গে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। আক্রান্ত অধিকাংশ মানুষ দরিদ্র, সামাজিক প্রভাব-প্রতিপত্তিহীন। তাঁরা কোনো সামাজিক বা রাজনৈতিক সুরক্ষাও পাননি। তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য যথেষ্ট দৃঢ় ব্যবস্থা যে এখনো নেওয়া হয়নি, উল্লিখিত সাম্প্রতিক আক্রমণের ঘটনাগুলো থেকে সেটাই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সরকার এসব ঘটনায় আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করার চেয়ে বেশি উৎসাহ দেখিয়েছে রাজনৈতিক বক্তব্য প্রচারে। জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে প্রধান প্রতিপক্ষ দল বিএনপিকেও দোষারোপ করেছে। অন্যদিকে, বিএনপি উল্টো দোষারোপ করেছে সরকারি দলকে। সব মিলিয়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষগুলোর নাজুকতাকে পুঁজি করে যে রাজনীতি চলেছে, তা এককথায় ন্যক্কারজনক।
রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন মোটামুটি শান্ত, অন্তত সেই সহিংস পরিস্থিতির আপাত-অবসান ঘটেছে, যা সব মানুষের জীবনকে নিরাপত্তাহীন ও শঙ্কাময় করে তুলেছিল। এখন হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন মন্দিরে আক্রমণ চালিয়ে আগুন লাগানো ও প্রতিমা ভাঙচুর করার ঘটনাগুলো ঘটছে রাতের অন্ধকারে। সংবাদমাধ্যমে আক্রমণকারীদের বলা হচ্ছে ‘দুর্বৃত্ত’। আক্রান্ত জনগোষ্ঠী দুর্বৃত্তদের সম্পর্কে পুলিশকে বিশেষ কিছু জানাচ্ছে না বা জানাতে পারছে না। স্বভাবতই তাদের মধ্যে ভীতি-শঙ্কা কাজ করছে। এ রকম পরিস্থিতিতে অত্যন্ত কঠোর হাতে আইন প্রয়োগের মাধ্যমে অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া প্রথম কর্তব্য। এ দায়িত্ব সরকারের, এটা পালন করতে হবে দলীয় রাজনৈতিক স্বার্থের বিবেচনা ঝেড়ে ফেলে দিয়ে, পুলিশের দুর্নীতির সুযোগ পুরোপুরি বন্ধ করে। আর প্রয়োজন সামাজিক শক্তি-সমাবেশ; আক্রান্ত সংখ্যালঘুদের পাশে দাঁড়াতে হবে সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের মানুষকে, সাম্প্রদায়িক আক্রমণের বিরুদ্ধে গড়ে তুলতে হবে প্রবল ও ব্যাপক সামাজিক প্রতিরোধ।
সম্পাদকীয় | তারিখ: ২৪-০৩-২০১৩ প্রথম আলো
এটা কোন ধরনের বরবরতা। এটা কিভাবে মেনে নেওয়া যায়???এখনি এর প্রতিকার ও প্রতিবাদ করা দরকার। অনেক উপকারি একটা জিনিস আপনার কাজে লাগতে পারে Office Space rental
ReplyDelete