২০০১ সালে নির্বাচন পরবর্তি বিএনপি কর্তৃক সাম্প্রদায়িক হামলার কয়েকটি ঘটনা

 মুক্তমনা ওয়েবসাইটের "ফিরে দেখা ২০০১ সাল এবং যুদ্ধাপরাধী প্রেমিক বিএনপি" নামক লেখাতে ২০০১ সালের নির্বাচনের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপি এর দ্বারা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উপর নির্যাতনের কয়েকটি খবর পাওয়া গেল। প্রাসঙ্গিক হওয়ায় লেখাটির নির্বাচিত অংশ এখানে প্রকাশ করা হল।

৪ অক্টোবর ২০০১ প্রথম আলো
বরিশালে বিএনপির দখল অভিযান।

বরিশাল অফিস: সরকার গঠনের আগেই বরিশালে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে দখল অভিযানে নেমেছে বিএনপি। গতকাল রাত থেকে শহরের কয়েকটি আওয়ামী লীগ অফিস ক্লাব দখল করে নিয়েছে বিএনপির ক্যাডাররা। এছাড়াও শহরে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত কয়েকটি এলাকা থেকেও বিএনপি কর্মীদের হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের খবর পাওয়া গেছে। এদিকে মঙ্গলবার রাতে শহরের ভাটিখানা ও কাউনিয়া এলাকায় বেশ কিছু হিন্দু পরিবারকে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মী-সমর্থকরা বাড়িঘর ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

৮ অক্টোবর ২০০১ প্রথম আলো
সরিষাবাড়ীতে বিএনপির নির্বাচনোত্তর তাণ্ডব।
আ.লীগ নেতা-কর্মী-সমর্থক ও সংখ্যালঘুরা ভয়ে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিচ্ছে।

জামালপুর প্রতিনিধি: জামালপুর প্রতিনিধি জানা, জেলার সরিষাবাড়ীতে নির্বাচনোত্তর বিএনপির সন্ত্রাসী তাণ্ডবলীলা, লুট ও হুমকি ধামকি অব্যাহত রয়েছে। ওই সন্ত্রাসের শিকায় হয়ে অনেক আওয়ামি লীগ নেতা-কর্মী-সমর্থকরা এলাকা ছেড়ে জামালপুর শহরসহ সরিষাবাড়ির আশেপাশে আশ্রয় নিচ্ছে। তাদের অভিযোগ থানা পুলিশ গ্রহণ করছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। সরিষাবাড়ীর পিংনা ইউনিয়নের বাড়ইপটল গ্রামের বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য সুলীল চন্দ্র ঘোষ গত শনিবার রাতে এ প্রতিনিধিকে জানান বিএনপির স্থানীয় ২০/২৫ জন সশস্ত্র যুবক গত ২ অক্টোবর সকালে মিছিল নিয়ে গিয়ে তার বাড়িতে চড়াও হয়। পরদিন সন্ত্রাসীরা বাড়ইপটল বাজারের রিন্টু ঠাকুর ও লিচু মিয়ার দুটি কাপড়ের দোকান ও মোতালেবের মনোহারী দোকানে ভাঙচুর লুটপাট করে। বাড়ইপটল এলাকায় ২২৫ জন সংখ্যালঘু ভোটার রয়েছেন। সন্ত্রাসীরা তাদের প্রত্যেকের বাড়িতে হুমকি দিচ্ছে। ভয়ে আতঙ্গে অনেকে গ্রাম ছেড়ে শহরে আশ্রয় নিচ্ছে।

৯ অক্টোবর ২০০১ মঙ্গবার প্রথম আলো
আওয়ামী লীগ সমর্থক ও সংখ্যালঘুরা অসহায়
বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন এলাকায় নির্যাতিন অব্যাহত, প্রশাসন নীরব

তৌফিক মারুফ, বরিশাল: বরিশাল জেলাসহ বিভাগের বিভিন্ন এলাকায় ভোটের পরদিন থেকে আওয়ামী লীগ কর্মী, সমর্থকদের উপর একের পর এক হামলা, বাড়িঘর দোকারপাট ভাঙচুর লুটপাট অব্যাহত রয়েছে। এসব সহিংসতা বন্ধে প্রশাসন থেকে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। বরিশালের উজিরপুরে শুধু আওয়ামী লীগই নয় ওয়ার্কাস পার্টি, জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থীদের সমর্থক সংখ্যালঘু পরিবারের ওপরও চলছে নির্যাতন। কেবল হামলা, ভাঙচুর, লুট বা হুমকিই নয়, নারী নির্যাতনের ঘটনাও ঘটে গেছে ভোটের দিন থেকে এ পর্যন্ত কয়েক দফা।

১০ অক্টোবর ২০০১ প্রথম আলো
লুটপাটের পর বাড়ির সামনে ‘বিক্রি হবে’ সাইনবোর্ড!

মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি: জেলার বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ সমর্থক ও সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা অব্যাহত রয়েছে। গত কয়েকদিনে স্থানীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও লুটপাটের কারণে তারা প্রাণ বাঁচাতে অন্য জায়গায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। সদর উপজেলার চরাঞ্চল নলবিনিয়াকান্দিতে বিএনপি সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে সংখ্যালঘুদের গরু-ছাগল ও নৌকাসহ সব কিছু লুট করে নিয়ে যায়।

১২ অক্টোবর ২০০১ আজকের কাগজ
গৌরনদী-আগৈলঝাড়ায় নির্বাচনী বিজয়ের পাশবিক উল্লাস, প্রশাসন নীরব

কাগজ প্রতিনিধি: অষ্টম জাতীয় সংসদের নির্বাচনের আগেই গৌরনদী আগৈলঝাড়ায় যে আওয়ামী লীগ নেতাকর্ম ও সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন ও সন্ত্রাস শুরু হয়েছে, নির্বাচনের পর তা আরো বেড়ে গেছে। সংখ্যালঘু ও আওয়ামী লীগ নেত-কর্মীরা কেউ কেউ নির্যাতনের শিকার হয়ে আবার কেউ কেউ নির্যাতনের আশঙ্কায় ভীত সন্ত্রাস্তভাবে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে গৃহবন্দি জীবন কাটাচ্ছেন। গৌরনদী-আগৈলঝাড়া থানার বিভিন্ন গ্রামে লুট-পাট, অগ্নিসংযোগ ও শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটেছে।
স্থানীয় সূত্র জানায় গৌরনদী থানায় বিএনপির কতিপয় নেতা-কর্মী ও নিষিদ্ধ ঘোষিত সর্বহারা পার্টির জিয়া গ্রুপের আঞ্চলিক নেতা রেজাউল করিম, সেকান্দার মৃধা, জাহাঙ্গির মৃধা ও জাহাঙ্গির গোমস্তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর অত্যাচার নিপীড়ন চালাচ্ছে, এরা চাঁদাবাজি লুটপাট, ধর্ষণসহ গরুছাগল পর্যন্ত লুট করে নিয়ে যাচ্ছে।


১২ অক্টোবর ২০০১ প্রথম আলো
বরিশালের হিজলায় বিএনপি ক্যাডারদের দাপট
গ্রামছাড়া নিতাই মায়ের মৃত্যুর খরব পেয়েও ঘরে ফিরতে পারেননি।

বরিশাল অফিস: বরিশালের হিজলার ধুলখোলা ইউনিয়নের আলীগঞ্জ বাজারের ক্ষুদ্র সেলুন ব্যবসায়ী নিতাই শীল বৃদ্ধা মায়ের সঙ্গে শেষ দেখাও করতে পারেননি। ধর্মীয় বিধান অনুসারে মায়ের মৃত্যুর পর শেষ কৃত্যানুষ্ঠানেও যোগ দিতে পারেন নি তিনি। বিএনপির সন্ত্রাসীরা তাকে গ্রাম ছাড়া করেই ক্ষান্ত হয় নি, উপরন্ত মায়ের মৃত্যুর পর নিতাইকে নিজ গ্রামে ঢুকতে দেয়নি।

২০ অক্টোবর ২০০১ জনকণ্ঠ
নির্বাচনের পর নির্যাতন। পার্বতীপুর নৌকার সমর্থকরা হাটে যেতে না পেরে বসিয়েচে আলাদা বাজার

পার্বতীপুর, ১৯ অক্টোবর, সংবাদদাতা: নির্বাচনোত্তর সহিংসতায় পার্বতীপুরের পরিস্থিতি এখনও অশান্ত ও উত্তপ্ত। আওয়ামী লীগ সমর্থক ও সংখ্যালঘুদের নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হতে হচ্ছে। সুযোগ পেলেই নৌকার সমর্থক বলে তাদের মারধর করা হচ্ছে। এই অত্যাচারে শেষ পর্যন্ত বাজার-হাট করার জন্য আলাদাভাবে বাজার বসানো হয়েছে।

৭ নভেম্বর ২০০১ আজকের কাগজ
মীরসরাই দাশপাড়ায় মধ্যরাতে বিএনপি সন্ত্রাসীদের তাণ্ডব। নিহত ১ আহত ৩০

চট্টগ্রাম অফিস: মীরসরাই উপজেলার মিঠানালার দাশপাড়ায় সোমবার মধ্যরাতে বিএনপি সন্ত্রাসীদের হামলায় আওয়ামী লীগ কর্মী সুনিল দাস সাধু (২৮) নিহত এবং প্রায় ৩০ জন নারী ও শিশু আহত হয়েছে। জানা গেছে হামলা ও লুটপাটে ৫১টি ঘর ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।

১৭ নভেম্বর ২০০১ যুগান্তর
চট্টগ্রামে নিজ বাসভবনে অধ্যক্ষ গোপাল মুহুরীকে গুলি করে হত্যা
হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জামাত-শিবির ক্যাডাররা জড়িত, পুলিশ

চট্টগ্রাম ব্যুরো: গতকাল শুক্রবার সকাল সোয়া ৭টায় নগরীর কেন্দ্রস্থল জামাতখান রোডে নিজ বাসায় নৃশংসভাবে খুন হয়েছে হাটহাজারী উপজেলা নাজিরহাট ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ গোপালকৃষ্ণ মুহুরী (৫৮)। সস্ত্রাসীরা সকালে তার বাসায় ঢুকে মাথায় রাইফেল ঠেকিয়ে গুলি করে তাকে তাকে হত্যা করার পর বেবিট্যাক্সি নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়।

১২ ডিসেম্বর ২০০১ জনকণ্ঠ
সাকা ক্যাডাররা পাঁচ লাখ টাকা না পেয়ে অপহরণ করেছে নলিনী মাস্টারকে
স্টাফ রির্পোটার, চট্টগ্রাম অফিস: রাউজানে নলিনী মাস্টার বলে পরিচিত এক ব্যক্তিতে সা’কার ক্যাডাররা অপহরণ করে নিয়ে গেছে। পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা না দেওয়ায় রাউজানের ডাবুয়া এলাকার জগন্নাথহাট হতে ক্যাডাররা তাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়।

সূত্র: ফিরে দেখা ২০০১ সাল এবং যুদ্ধাপরাধী প্রেমিক বিএনপি। লিংক

No comments:

Post a Comment