রবিবার, ১০ মার্চ ২০১৩, ২৬ ফাল্গুন ১৪১৯
সাতক্ষীরা
মিজানুর রহমান, সাতক্ষীরা ॥ সাতক্ষীরাসহ দেশজুড়ে সংখ্যালঘু নির্যাতনের সঙ্গে জড়িতসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশ মাঠ পর্যায়ে তামিল হচ্ছে না। সিভিল ও পুলিশ প্রশাসনে থাকা চাকরিজীবীরা দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ায় সরকারের নির্দেশাবলী বাস্তবায়নে গড়িমসির করার পাশাপাশি এ সকল কর্মকর্তার ধীরে চলো নীতির জন্য জামায়াত-শিবির চক্র সুবিধা নিচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। দু’ভাগে বিভক্ত প্রশাসনের পাশাপাশি সরকারী দলের নেতাকর্মীদের নেতৃত্বের কোন্দল, সমন্বয়হীনতা ও মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীদের যোগাযোগ না থাকায় জামায়াত-শিবিরের রোষানলের শিকারে পরিণত হচ্ছে এ সকল আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী। জামায়াত নেতা সাঈদী ইস্যুতে গত ৮ দিনের জামায়াত বিএনপির লাগাতার হরতালে সহিংসতার শিকার সংখ্যালঘু পরিবারের সদস্য ছাড়াও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা এখনও হুমকি ও আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটালেও প্রশাসনিকভাবে এরা সহযোগিতা পাচ্ছে না বলে নির্যাতিতদের অভিযোগ। সাতক্ষীরা সদর ও আশাশুনিতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা এখনও জামায়াত-শিবিরের অব্যাহত হুমকির মুখে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে এমন অভিযোগ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের।
সরকারের শেষ বছরে প্রশাসনে থাকা কর্মকর্তারা এখান ধীরে চলো নীতি অনুসরণ করছেন। এই সরকারের কাছ থেকে যারা সুবিধা পেয়েছেন তারা সুবিধাভোগী হিসেবে চিহ্নিত হলেও তারা সরকারের শেষ বছরে আর নতুন করে ঝুঁকি নিতে চাইছে না। ফলে সুবিধাভোগীরা সরকারের নির্দেশ পালনে হার্ডলাইনে না যাওয়ায় জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসের পরও তারা অব্যাহত হুমকি দিয়ে চলেছে। আর প্রশাসনে থাকা সুবিধাবঞ্চিতরা এই সরকারের কোন নির্দেশাবলী পালন না করেই পক্ষান্তরে জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের দায়ভার সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর চাপানোর জন্য প্রপাগা-া চালিয়ে যাচ্ছেন বলে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের অভিযোগ। এ কারণেই জঙ্গী ও সন্ত্রাস দমনে সরকারের নির্দেশ মাঠ পর্যায়ে দ্রুত তামিল হচ্ছে না এমন অভিযোগ এখন ওপেন সিক্রেট। এদিকে পুলিশ প্রশাসনে থাকা বিভিন্ন থানার ওসিদের ভূমিকাও এখন রহস্যজনক। বিএনপি সরকারের আমলে চাকরিতে যোগদানকারী এ সকল কর্মকর্তা সন্ত্রাস দমনে নীরব ভূমিকা পালন করার পাশাপাশি পরোক্ষভাবে জামায়াত-শিবিরকে মদত দিচ্ছে বলে ১৪ দলীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ। ইতোমধ্যে সাতক্ষীরা সদর থানার ওসি গাজী ইব্রাহিমকে এমন সুবিধাভোগী হিসেবে চিহ্নিত করে জেলা ১৪ দল তার প্রত্যাহার দাবি করলেও অজ্ঞাত কারণে তিনি বহাল তবিয়তে আছেন। তবে সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মোঃ আসাদুজ্জামান তাঁর প্রশাসনে সুবিধাভোগী ও সুবিধাবঞ্চিতদের সমস্যা নেই দাবি করে শনিবার জনকণ্ঠকে বলেন, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা নিজেরাই হুমকির অভিযোগ তুললে কারও কিছু করার থাকে না। গত কয়েকদিনে কোন হামলার ঘটনা ঘটেনি দাবি করে তিনি বলেন, বিভিন্ন মামলার আসামিদের ধরার জন্য অভিযান চলছে।
সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ জাকির হোসেন গ্রাম ছেড়ে এখন সাতক্ষীরা শহরে আশ্রয় নিয়েছেন। জামায়াতীরা তার ইউনিয়ন পরিষদে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করলেও এই মামলায় কেউ গ্রেফতার হয়নি। আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীদের ৬টি ওষুধের দোকান ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করলেও এ সকল ঘটনায় দায়ের করা মামলায় কোন আসামি গ্রেফতার হয়নি। উপরন্তু প্রতাপনগরে সাঈদী মুক্তমঞ্চ তৈরি করে সেখানে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ব্যক্তিদের বক্তব্য দিতে বাধ্য করা হয়েছে। মামলা তুলে না নিলে গ্রামছাড়া করাসহ হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে এমন অভিযোগ করে আওয়ামী লীগ নেতা ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন শনিবার জনকণ্ঠকে বলেন, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশ মাঠ পর্যায়ে তামিল হচ্ছে না।
জামায়াতীদের ভয়াবহ তাণ্ডবের পরও মাঠ পর্যায়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছে না। মাঠ পর্যায়ে সন্ত্রাসবিরোধী কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়া হলেও জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা, নেতৃত্বের কোন্দল ও দায়িত্বহীনতার অভাবে এখনও জামায়াতের হুমকির মুখে থাকতে হচ্ছে গ্রাম পর্যায়ের নিবেদিত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের। জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রতিহত করতে পৌরসভাসহ জেলা ও উপজেলার বেশিরভাগ নেতাকর্মীই দলীয় কর্মসূচীতে মাঠে থাকছেন না বলে জামায়াতীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে।
দৈনিক জনকণ্ঠ। লিংক
No comments:
Post a Comment