যুদ্ধাপরাধী বিচার ঠেকাতে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা
শংকর কুমার দে ॥ যুদ্ধাপরাধীর বিচার ঠেকাতে এবার সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ও সংঘাত সৃষ্টির পরিকল্পনা নিয়েছে জামায়াত শিবির ও জঙ্গীরা। সারাদেশে সাম্প্রদায়িক সংঘাত ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টার অংশ হিসাবে চট্টগ্রাম ও আশপাশের এলাকাকে বেছে নিয়েছে তারা। পাকিস্তানী আমলের ধর্মীয় উন্মাদনার সাম্প্রদায়িক সংঘাতের সেই পুরানো কৌশলকে বেছে নিয়েছে জামায়াত শিবির ও জঙ্গীরা। গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশের উচ্চ পর্যায় সূত্রে এ খবর জানা গেছে।
সূত্র জানিয়েছে, গ্রেনেড, বোমা হামলা, নাশকতা, ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড, আইনশৃক্সখলা বাহিনীর ওপর হামলা করাসহ সকল চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর সাম্প্রদায়িক সংঘাত সৃষ্টির পথ বেছে নিয়েছে জামায়াত শিবির ও জঙ্গীরা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সঙ্গে ছাত্র শিবিরের রক্তক্ষয়ী সহিংসতার পর জামায়াত শিবির চট্টগ্রামে হরতাল দিয়ে জনগণের কাছ থেকে কোনরূপ সাড়া না পেয়ে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ও সংঘাত সৃষ্টির পথ বেছে নিয়েছে। চট্রগ্রামের হাটহাজারীর নন্দিরহাটে জামায়াত শিবির ও জঙ্গীরা সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, মন্দির ও মূর্তি ভাংচুর করে সাম্প্রদায়িক সংঘাত সৃষ্টির চেষ্টা করেছে। চট্টগ্রাম ও আশপাশের এলাকা থেকে বিপুল সংখ্যক ব়্যাব ও পুলিশ নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে বলে জানা গেছে। পুলিশের আইজি হাছান মাহমুদ খন্দকারের সঙ্গে শুক্রবার সন্ধ্যায় যোগাযোগ করে চট্টগ্রামের হাটহাজারীর নন্দিরহাটের ঘটনা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, এই মুহ’র্তে কোন মন্তব্য করবেন না।
পুলিশ সদর দফতরের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম ও আশপাশের এলাকা থেকে বিপুল সংখ্যক র্যাব ও পুলিশ ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে জানানো হয়েছে।
গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেছেন, জামায়াত শিবিরের ক্যাডার ও জঙ্গীরা একটি মসজিদে জড়ো হয়েছিল। মসজিদ থেকে বের হয়ে সংখ্যালঘুদের একটি মহোৎসবের মিছিলে প্রথমে হামলা করে। তারপর লোকনাথ ব্রহ্মচারীর আশ্রমসহ বিভিন্ন মন্দিরে আক্রমণ করে মূর্তি ভাংচুর করেছে। জামায়াত শিবির সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধানোর জন্য পূর্ব পরিকল্পিতভাবে চট্টগ্রামের হাটহাজারীর নন্দিরহাটের ঘটনা ঘটিয়েছে।
পুলিশের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পাকিস্তান আমলে ভিন্ন খাতে দৃষ্টি প্রবাহিত করার জন্য সরকার সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ, নির্যাতন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, মন্দির ও মূর্তি ভাংচুর করার কৌশল বেছে নিত। এখন আবার জামায়াত শিবির সেই পাকিস্তানী আমলের কায়দায় যুদ্ধাপরাধীর বিচারের প্রক্রিয়ার দৃষ্টিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ, মন্দির ও মূর্তি ভেঙে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধানোর কৌশল বেছে নিয়েছে। এ জন্য তারা বেছে নিয়েছে শুক্রবার জুমার দিনটিকে। জুমার দিনে একটি মসজিদ জামায়াত-শিবির ও জঙ্গীরা আগে থেকে ওঁৎ পেতে ছিল। চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানা এলাকার নন্দির হাটের মসজিদ থেকে বের হয়ে তারা সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধানোর চেষ্টা করেছে।
সারাদেশে জামায়াত-শিবিরের নেতৃত্বে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠনের জঙ্গীদের সংগঠিত করে নাশকতার চেষ্টা অব্যাহত আছে। যুদ্ধাপরাধীর বিচার বানচাল করতে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন হিযবুত তাহ্্রীর, জেএমবি, হুজির পলাতক জঙ্গীদের সংগঠিত করছে জামায়াত-শিবির। তাদের তৎপরতা সম্প্রতি বেড়ে গেছে। তারা নাশকতা, ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড, বিশৃক্সখলা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করার পর এখন সাম্প্রদায়িক সংঘাতের পথ বেছে নিয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ ও ছাত্র শিবিরের মধ্যকার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গীরা ছাত্র শিবিরের পক্ষে ব্যবহৃত হয়েছে। ছাত্র শিবিরের ক্যাডাররা নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠনের জঙ্গীদের সঙ্গে নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হলে হামলা চালিয়ে ছাত্রলীগের কর্মীদের বের করে দেয়ার সময়ে নির্মমভাবে পিটিয়েছে। ছাত্রলীগের কর্মীরা খবর পেয়ে পাল্টা হামলা চালালে ছাত্র শিবিরসহ জঙ্গীরা পিছু হটে যায়। দুই পক্ষেই হতাহত হওয়ার পর দিন জামায়াত-শিবির চট্টগ্রামে হরতালের ডাক দেয়। হরতালে জনগণের সাড়া না পেয়ে এবার চট্টগ্রামেই সাম্প্রদায়িক সংঘাত সৃষ্টির পরিকল্পনা অনুযায়ী সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়েছে।
চট্টগামের হামলার আগে গত সোমবার খোদ রাজধানীর মিরপুরে মিছিল করে নাশকতার চেষ্টা করেছে জামায়াত-শিবির। রাজধানীর মিরপুরে মিছিল করার সময় ১৫ শিবির কর্মীকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে, নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন হিযবুত তাহরীর, জেএমবি ও হুজির জঙ্গীরা জামায়াত-শিবিরের ব্যানারে মিটিং-মিছিল করছে। রাজধানী ছাড়াও সারাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গীদের জামায়াত-শিবির সংগঠিত করছে বলে তারা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে। জামায়াতÑশিবির ও জঙ্গিরা সংগঠিত হয়ে অস্ত্র ও গোলাবারুদ মজুদ করছে।
চাঁদপুর ও লক্ষ্মীপুরে বাতিল করা গণমিছিলের ভেতর থেকে আইনশৃংখলা বাহিনীর ওপর হামলা করেছে জামায়াত-শিবিরের ক্যাডার ও জঙ্গীরা। চাঁদপুর ও লক্ষ্মীপুরের ঘটনার একদিন পর রাজশাহীতে ছাত্র শিবিরের ব্যানারে জঙ্গীরা পুলিশের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এতে রাজশাহী, লক্ষীপুর, চাঁদপুরে পাঁচজন নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশে গঠিত ৪টি তদন্ত কমিটি বর্তমানে এসব ঘটনা তদন্ত করছে। তদন্ত সম্পন্ন না হতেই জামায়াত-শিবির চট্টগ্রামের হাটহাজারীর নন্দিরহাটের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ওপর হামলা করে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ও সংঘাত সৃষ্টির চেষ্টা করেছে। পুলিশ, ব়্যাব, গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃংখলা বাহিনী পরিস্থিতি কঠোর হস্তে দমন করায় জামায়াত-শিবির ও জঙ্গীদের সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে বলে জানা গেছে।
গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, চট্টগ্রামের হাটহাজারীর নন্দিরহাটের সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা এবং তাদের মন্দির ও মূর্তি ভাঙার ব্যাপারে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে প্রাথমিক প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। প্রাথমিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, নন্দিরহাটে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পূর্ব ঘোষিত একটি মিছিল যাচ্ছিল। এ সময়ে মসজিদের ভেতরে ওঁৎ পেতে থাকা জামায়াত-শিবির ও জঙ্গিরা মসজিদের ভেতর থেকে বের হয়ে সংখ্যা লঘু সম্প্রদায়ের মিছিলে হামলা করে। জামায়াতী ও জঙ্গীরা ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে নন্দিরহাটে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িতে, মন্দিরে হামলা করেছে। মন্দিরের মূর্তি ও ছবি ভাংচুর করেছে তারা। তাৎক্ষণিক কোন ঘটনা হলে ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে আক্রমণ-হামলা করতো না। জামায়াত-শিবির ও জঙ্গিদের পূর্ব পরিকল্পনা বলেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে আক্রমণ ও হামলার ঘটনা ঘটেছে। তবে জামায়াত-শিবির ও জঙ্গীরা যত চেষ্টাই করুক না কেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হতে দেয়া হবে না।
দৈনিক জনকণ্ঠ
No comments:
Post a Comment