সিলেটে হিন্দুদের গরুর মাংস খাওয়ানো: ব্যবস্থা নিতে বলেছেন হাইকোর্ট

04 Jan 2012 04:20:03 PM
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: সিলেটে না জানিয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের গরুর মাংস খাওয়ানোর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

এ সংক্রান্ত এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেনের বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট অমিত দাস গুপ্ত ও রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আলতাফ হোসেন।

আদালতের আদেশে সিলেটের জেলা প্রশাসক, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের ওই ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, দৈনিক মানবজমিনে গত ২৮ ডিসেম্বর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২৫ ডিসেম্বর সিলেটের অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ১০৮ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে খাসি ও মুরগীর মাংসের কথা বলে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের গরুর মাংস খাওয়ানোর ঘটনা ঘটে।

এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে পূর্তি অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক ড. শায়েলা খাতুন, সদস্য সচিব নাজমা বেগম এবং ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষকে আগামী ১৬ জানুয়ারি আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

একই সঙ্গে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে একই দিন এ বিষয়ে একটি অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

মানবজমিনের এ প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করে হাইকোর্টের আইনজীবী অমিত দাস গুপ্ত এ রিটটি দায়ের করেন।

মানবজমিনের ওই রিপোর্টে বলা হয়, অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ১০৮ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে সনাতন ধর্মালম্বীদের বিভ্রান্ত করে গরুর মাংস খাওয়ানোকে কেন্দ্র করে সিলেটে উত্তেজনা চলছে। বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন হিন্দু সমাজের লোকজন। এজন্য দু’দিন ধরে তারা আন্দোলনে রয়েছেন।

এ ঘটনায় অগ্রগামী স্কুলের অনুষ্ঠান কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে। এরপর আরও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।

মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিস-এইচআরসিবিএম সিলেট জেলা শাখার নেতারা এ ঘটনার জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছেন।

একই সঙ্গে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তারা।

হিন্দু নেতারা জানান, সিলেট অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ১০৮ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানের আগে সাবেক ছাত্রীদের কাছ থেকে খাওয়া বাবদ চাঁদা নেওয়া হয়।

ওই সময় জানানো হয়, হিন্দুদের জন্য খাসি ও মোরগের মাংসের ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু খাওয়ার সময় মুসলমানদের সঙ্গে সবাইকে একসঙ্গে গরুর মাংস খাওয়ানো হয়।

এ বিষয়টি পরে জানাজানি হওয়ার পর সিলেটের সনাতন ধর্মালম্বীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সংক্ষুব্ধ হিন্দু সমাজ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মানববন্ধন করে।

এদিকে, এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে সরকারি অগ্রগামী বালিকা বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রী শিক্ষক পুনর্মিলনী কমিটি এ ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে।

কমিটির আহ্বায়ক ডা. শায়লা খাতুন ও সদস্য সচিব নাজমা বেগম জানান, পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে গিয়ে খাবার ব্যবস্থাপনায় অনিচ্ছাকৃত কিছু ভুল-ত্রুটির জন্য দুঃখ প্রকাশ করা হলো।

এদিকে, এ দুঃখ প্রকাশের মধ্য দিয়ে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়ে উঠেছে। এর কারণ উল্লেখ করে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনরিটিস-এইচআরসিবিএম সিলেট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক রাকেশ রায় জানান, দুঃখ প্রকাশের মধ্যে দিয়ে অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে নেওয়া হলো।

তিনি বলেন, এ ঘটনার খবর যতই ছড়িয়ে পড়ছে ততই বিক্ষোভ ছড়াচ্ছে।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

No comments:

Post a Comment