ফিরোজ শিবলী, চট্টগ্রাম ব্যুরো
'বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে আমি ঘুমে ছিলাম। ঘুম থেকে ডেকে মসজিদের দেয়াল ভাঙতে বলে এমদাদ উল্লাহ ও লোকমান। পরে তাদের কথামতো মসজিদের বারান্দার দেয়াল ভাঙি। তারা আমাকে ৫০ টাকা দেয়।' গতকাল বৃহস্পতিবার বিচারিক হাকিম মাসুদ পারভেজের খাস কামরায় হাটহাজারীর নন্দীরহাট এলাকার রাজমিস্ত্রি মোঃ জসিম ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব কথা স্বীকার করেন।
জবানবন্দিতে জসিম আরও বলেন, মসজিদ ভাঙতে রাজি না হলেও এমদাদ ও লোকমান তাকে বাধ্য করে। তাকে ৫০ টাকা দিয়ে বিষয়টি কাউকে না বলতেও নিষেধ করে। পরদিন মসজিদ ভাঙার গুজব ছড়িয়ে পড়লে শত শত লোক চট্টগ্রাম-হাটহাজারী সড়কে ব্যারিকেড দেয় ও হাটহাজারীতে মন্দির পুড়িয়ে দেয়।
হাটহাজারী সার্কেলের সিনিয়র এএসপি বাবুল আকতার সমকালকে জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় লোকমান ও এমদাদসহ হিন্দু এবং মুসলিম উভয়পক্ষের লোকজন নিয়ে সমঝোতা বৈঠকের চেষ্টা চলছিল। ওই সময় লোকমান ও এমদাদের ছেলেরা লোকনাথ মন্দিরে হামলা ও ভাংচুর চালায়। সে ঘটনা ধামাচাপা দিতে একই দিন রাতে রাজমিস্ত্রি জসিমকে দিয়ে মসজিদের কিছু অংশ ভাঙা হয়। লোকমান ও এমদাদের পেছনে কারা ইন্ধনদাতা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জামায়াত-শিবিরের কোনো ইন্ধন আছে কি-না তারও তদন্ত চলছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হাটহাজারী থানার
ওসি (তদন্ত) অং সা তোয়াই সমকালকে বলেন, গ্রেফতার হওয়া ১০ জনের মধ্যে চার জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে বেশকিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসবে। ইতিমধ্যে গ্রেফতার হওয়া জসিম মসজিদ ভাঙার কথা স্বীকার করেছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, নন্দীরহাট এলাকায় লোকনাথ মন্দিরে উৎসব উপলক্ষে গত ৯ ফেব্রুয়ারি দুপুরে র্যালি বের করা হয়। এ সময় একই এলাকার হাজিপাড়া মসজিদের বাসিন্দারা নামাজ চলাকালে মাইক ছোট করে বাজানোর অনুরোধ করেন। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে র্যালির পেছনে থাকা কে বা কারা মসজিদে ঢিল ছুড়ে মারলে কাচ ভাংচুর ও তিনজন মুসল্লি আহত হন। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে সন্ধ্যায় সমঝোতা বৈঠকের চেষ্টা চালায় প্রশাসন। এরই মধ্যে মন্দিরে ভাংচুর ও লুটপাট চালায় কে বা কারা।
১০ জন কারাগারে
চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে সংঘর্ষ ও ভাংচুরের ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া ১০ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিচারিক হাকিম বেগম ইয়াসমিন আরা এ নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে চার জনের রিমান্ড আবেদনের শুনানির দিন ধার্য্য করেন ২২ ফেব্রুয়ারি।
জানা গেছে, তদন্ত কর্মকর্তা হাটহাজারী থানার ওসি অং সা তোয়াই গ্রেফতার হওয়া ১০ আসামির মধ্যে চার জনের সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। গত বুধবার রাতে এএসপি বাবুল আকতারের নেতৃত্বে হাটহাজারীর নন্দিরহাট হাজিপাড়া থেকে রাজমিস্ত্রি জসিমকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী নয় জনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা হলেন_ এমদাদুল্লাহ, মোঃ লোকমান, মোঃ আবদুল করিম, মোঃ ফরিদ, মোঃ মনজুর আলম, মোঃ শাফি, মোঃ আবু তাহের, মোঃ ওসমান ও হাজী মোঃ বাদশা।
সূত্র: সমকাল
No comments:
Post a Comment