সিলেটে সর্বজনীন অনুষ্ঠানে গরুর মাংস, ক্ষুব্ধ হিন্দু সমাজ

বুধবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০১১
ডেস্ক রিপোর্ট (হিন্দুবার্তা ডটকম):

অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ১০৮ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে সনাতন ধর্মালম্বীদের বিভ্রান্ত করে গরুর মাংস খাওয়ানোকে কেন্দ্র করে সিলেটে উত্তেজনা চলছে। বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন হিন্দু সমাজের লোকজন। গত কয়েক দিন ধরে তারা আন্দোলনে রয়েছেন।

এ ঘটনায় অগ্রগামী স্কুলের অনুষ্ঠান কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে। এর পর আরও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। গত সোমবার রাতে সিলেটের ব্রহ্মময়ী মন্দিরে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্যপরিষদ ও পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা যৌথভাবে সভা করেছেন। আর ইস্কন মন্দিরে সভা করেছেন সংক্ষুব্ধ হিন্দু সমাজের লোকজন।

মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনরিটিস-এইচআরসিবিএম সিলেট জেলা শাখার নেতারা এ ঘটনার জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছেন। একই সঙ্গে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তারা।

হিন্দু নেতারা জানান, গত ২৬ ডিসেম্বর রোববার শেষ হওয়া সিলেট অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ১০৮ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানের আগে সাবেক ছাত্রীদের কাছ থেকে খাওয়া বাবদ চাঁদা নেয়া হয়। ওই সময় জানানো হয়, হিন্দুদের জন্য খাসি ও মোরগের মাংসের ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু খাওয়ার সময় মুসলমানদের সঙ্গে সবাইকে একসঙ্গে গরুর মাংস খাওয়ানো হয়। এ বিষয়টি পরে জানাজানি হওয়ার পর সিলেটের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

সোমবার বিকালে সংক্ষুব্ধ হিন্দু সমাজ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মানববন্ধন করে।

এদিকে, সোমবার রাতে এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে সরকারি অগ্রগামী বালিকা বিদ্যালয়ের ‘প্রাক্তন ছাত্রী শিক্ষক পুনর্মিলনী কমিটি’ এ ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে। কমিটির আহ্বায়ক ডা. শায়লা খাতুন ও সদস্য সচিব নাজমা বেগম জানান, পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে গিয়ে খাবার ব্যবস্থাপনায় অনিচ্ছাকৃত কিছু ভুল-ত্রুটির জন্য দুঃখ প্রকাশ করা হলো।

এদিকে, এ দুঃখ প্রকাশের মধ্য দিয়ে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়ে উঠেছে। এর কারণ উল্লেখ করে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনরিটিস-এইচআরসিবিএম সিলেট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক রাকেশ রায় জানান, দুঃখ প্রকাশের মধ্যে দিয়ে ঘটনার স্বীকার করে নেয়া হলো।

এ ঘটনার খবর যতই ছড়িয়ে পড়ছে ততই বিক্ষোভ ছড়াচ্ছে। সোমবার রাতেই দুই মন্দিরে এ নিয়ে বৈঠকে বসেছেন হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান পরিষদের নেতারা। বৃহস্পতিবার এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বরাবর স্মারকলিপি পেশ করা হবে বলে জানান তারা।

শহীদ মিনারে মানববন্ধন: নগরীর ঐতিহ্যবাহী অগ্রগামী উচ্চ বালিকা বিদ্যায়ের ১০৮ বছর পূর্তি ও পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে সাবেক হিন্দু শিক্ষার্থীদের গরুর মাংস পরিবেশনের মাধ্যমে অসামপ্রদায়িক চেতনায় আঘাতের প্রতিবাদে নগরীতে সংহতি মানববন্ধন পালিত হয়েছে। সোমবার বিকালে চৌহাট্টাস্থ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে ‘সংক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ’-এর ব্যানারে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।

মানববন্ধনকালে বক্তারা একটি ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয়ের পুনর্মিলনীর মতো সর্বজনীন একটি উত্সবের খাবার হিসেবে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য নিষিদ্ধ গরুর মাংস পরিবেশন করার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, আয়োজকরা এ ধরনের স্পর্ধা দেখিয়ে কেবল হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ধর্মানুভূতিতেই আঘাত দেননি তারা; রাষ্ট্রের অসাম্প্রদায়িক চেতনাকেও ভূলুণ্ঠিত করেছেন। টাকা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে যেসব হিন্দু শিক্ষার্থী এ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছে তাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন আয়োজকরা।

বক্তারা বলেন, একটি সর্বজনীন উত্সবে কখনোই একটি ধর্মের জন্য নিষিদ্ধ খাদ্য খাবারের তালিকায় থাকতে পারে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেখানে আমাদের অসাম্প্রদায়িকতার শিক্ষা দেবে সেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই যদি সাম্প্রদায়িকতা চর্চার কেন্দ্রস্থল হয়ে ওঠে তাহলে তা এ দেশের অসাম্প্রদায়িক মানুষ তা শক্ত হাতে প্রতিরোধ করবে।

এ সময় বক্তারা অবিলম্বে পুনর্মিলনী আয়োজক কমিটির সকল সদস্য, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ সকল দায়িত্বরতদের অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার দাবি জানান। একই দাবিতে আগামী বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদানের কর্মসূচিও ঘোষণা করেন আয়োজকরা।

‘সংক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ'-এর অন্যতম উদ্যোক্তা আবদুল করিম কীমের সঞ্চালনায় মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য রাখেন অগ্রগামী উচ্চ বিদ্যালয় পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের সংস্কৃতিবিষয়ক উপ-কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপিকা সর্বাণী অর্জুন, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্যপরিষদের জেলা সাধারণ সম্পাদক অসিত ভট্টাচার্য, জ্যোতির্ময় সিংহ মজুমদার চন্দন, এডভোকেট প্রদীপ ভট্টাচার্য, এডভোকেট বিমানচন্দ্র দাশ, দিবাকর ধর রাম, মলয় পুরকায়স্থ, পূজা উদযাপন পরিষদের জেলা সাধারণ সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় ধর ভোলা, নাট্যকর্মী নীলাঞ্জন দাশ টুকু, শিশু সংগঠক অরূপ শ্যাম বাপ্পী, সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রজত চক্রবর্তী, সংস্কৃতিকর্মী সুজিত শ্যাম জন, হরিদাস শ্যাম, বিপ্লব শ্যাম পুরকায়স্থ, কুমার গণেশ পাল, সংস্কৃতিকর্মী দেবাশিষ দেবু, ছাত্রযুব ঐক্যপরিষদের সভাপতি দেবব্রত চৌধুরী লিটন, ভাটি বাংলা অগ্রদূত সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন বর্মণ, চিত্রশিল্পী আবুল বাতিন, চিত্রশিল্পী ইসমাইল গণি হিমন, কবি রাজীব চৌধুরী, সংস্কৃতি কর্মী রাজীব রাসেল, জামান তাপাদার, চৌধুরী নাঈম বিন আতিক প্রমুখ।

এদিকে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনরিটিস-এইচআরসিবিএম সিলেট জেলা শাখার উদ্যোগে এক প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা শাখার চেয়ারম্যান ড. দিলীপ কুমার দাস চৌধুরী। বক্তব্য রাখেন, ড. শরদিন্দু ভট্টাচার্য, রাকেশ রায়, এডভোকে বন্ধু গোপাল দাস প্রমুখ।

তারা দাবি করেন, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের ঘটনায় আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের মাধ্যমে শাস্তির পাশাপাশি রাষ্ট্রীয়ভাবে সর্বজনীন ও সামাজিক অনুষ্ঠানে গরুর মাংস নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবি জানানো হয়।

কৃতজ্ঞতায়: মানবজমিন ও হিন্দুবার্তা সিলেট প্রতিনিধি
HinduBarta

No comments:

Post a Comment