প্রথম আলো ডেস্ক
ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার ও রাজবাড়ীতে পূজার অনুষ্ঠান চলাকালে বিচ্ছিন্ন ঘটনায় হামলা ও ভাঙচুর হয়েছে। ময়মনসিংহের গৌরীপুরে এমন একটি ঘটনায় দুই শিশু ও চারজন নারী আহত হয়েছেন। পণ্ড হয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা একটি পূজামণ্ডপের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন এক ইউপি সদস্য ও আট মণিপুরি নারী। রাজবাড়ীতে একটি পূজামণ্ডপে চাঁদা চেয়ে না পেয়ে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা।
গৌরীপুর: গৌরীপুরে সরকারপাড়া মন্দিরের পূজামণ্ডপে গত রোববার রাতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলাকালে স্থানীয় সন্ত্রাসী ভুট্টোর নেতৃত্বে হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
উপজেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক স্বপন কুমার জানান, অনুষ্ঠান চলাকালে ভুট্টো তাঁর দুই অতিথির বসার জন্য দুটো চেয়ার দাবি করেন। কিন্তু পর্যাপ্ত চেয়ার না থাকায় তাঁর অতিথিদের বসতে দেওয়া যায়নি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ভুট্টো তাঁর সহযোগীদের নিয়ে অনুষ্ঠানের মঞ্চে হামলা চালান।
গৌরীপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হযরত আলী জানান, এ ব্যাপারে সরকারপাড়া পূজা মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক রোটন কুমার গতকাল সোমবার গৌরীপুর থানায় মামলা করেছেন। অভিযুক্ত ভুট্টোকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
কমলগঞ্জ: কমলগঞ্জ উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের তিলকপুর গ্রামে দয়াময় সিংহ উচ্চবিদ্যালয় মাঠে নবারুণ সংঘ আয়োজিত পূজামণ্ডপের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের হামলায় আটজন আহত ও অনুষ্ঠান পণ্ড হয়েছে।
নবারুণ সংঘের উপদেষ্টা আলীনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য নরেন্দ্র কুমার সিংহ ও পূজা কমিটির সভাপতি রুপেন্দ্র সিংহ জানান, রোববার রাতে পূজামণ্ডপে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠান চলাকালে কমলগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের নেতা মঞ্জুর আহমেদ, ছাত্রলীগের সদস্য মেহেদী হাসান ও ইব্রাহীমসহ ১০-১৫ জন কর্মী মঞ্চের সামনে গিয়ে নাচতে থাকেন। এতে পেছনের লোকজনের অনুষ্ঠান দেখার অসুবিধা হওয়ায় তাঁদের সরে যেতে বলা হয়। তাত্ক্ষণিকভাবে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা চলে গেলেও কিছুক্ষণ পর সহযোগীদের নিয়ে ফিরে এসে তাঁরা মঞ্চ ও দর্শকদের ওপর হামলা চালান। এতে আট মণিপুরি নারী আহত হন।
পূজামণ্ডপের দর্শনার্থীদের অনেকে অভিযোগ করেছেন, হামলার সময় ছাত্রলীগের কর্মীরা তাঁদের পরনের স্বর্ণালংকার লুট করেছে।
জনতা ঘটনাস্থল থেকে ছাত্রলীগের তিন কর্মীকে ধরে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। পরে পুলিশ ছাত্রলীগের আরও দুই সদস্যকে আটক করে। আটক ব্যক্তিরা হলেন মঞ্জুর আহমেদ, মেহদী হাসান, মো. ইব্রাহীম (২৫), হায়াত আলী (২০) ও জাফর মিয়া (২৭)।
আটককৃতরা কমলগঞ্জ থানায় প্রথম আলোকে বলেন, হামলার সঙ্গে তাঁরা জড়িত ছিলেন না।
তবে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সানোয়ার হোসেন হামলার কথা স্বীকার করে জানান, মঞ্জুর আহমেদকে এ ব্যাপারে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। অন্যদের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাজবাড়ী: রাজবাড়ী সদর উপজেলার আল্লাদীপুরের একটি পূজামণ্ডপে চাঁদা দাবি করে না পেয়ে হামলা চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা। পূজামণ্ডপের আয়োজক ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আল্লাদীপুর গ্রামের সন্তোষ কুমার শিকদার তাঁর বাড়িতে পূজার আয়োজন করেন। গত রোববার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে স্থানীয় মিঠুন মোল্লা, সুমন, দিদার এবং বহিরাগত পলাশ ও রায়হানসহ অজ্ঞাত আরও পাঁচ-ছয়জন মিলে সন্তোষ কুমারের ছেলে উত্তম কুমারের কাছে ১০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা উত্তমকে মারধর করে এবং পূজামণ্ডপের সামনের চেয়ার ভাঙচুর করে। এ সময় মণ্ডপের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যরা এগিয়ে এলে সন্ত্রাসীরা তাঁদের ওপর হামলা চালায়। এতে এক আনসার সদস্য আহত হন। পরে পূজামণ্ডপের দর্শনার্থীরা চাঁদাবাজদের ধাওয়া করলে তারা পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম খান মণ্ডপের কাছ থেকে এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আরিফুল ইসলাম (২৫) নামের এক যুবককে আটক করেন। পরে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হাবিবুর রহমান বাদী হয়ে মিঠুন, সুমন, দিদার, পলাশ ও রায়হানসহ আজ্ঞাত আরও পাঁচ-ছয়জনকে আসামি করে চাঁদাবাজির অভিযোগে একটি মামলা করেন।
প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছেন গৌরীপুর (ময়মনসিংহ), কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) ও গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি।
প্রথম আলো, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০০৯
No comments:
Post a Comment