বাড়ি দখলের ঘটনায় মারধর লুটপাট। সূত্রাপুরে আ'লীগ সন্ত্রাসীরা এক হিন্দু পরিবারের ৯ জনকে অপহরণ করেছে, পরে উদ্ধার


গতকাল শনিবার ভোরে রাজধানীর সূত্রাপুর এলাকায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের স্বশস্ত্র সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের মুখে একটি বাড়িতে হানা দিয়ে একটি হিন্দু পরিবারের নয় সদস্যকে অপহরণ করে। দীর্ঘ আট ঘণ্টা চেষ্টার পর সূত্রাপুর থানা পুলিশ তাদের উদ্ধার করে -সংগ্রাম

স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীর সূত্রাপুরে আওয়ামী লীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা একটি বাড়ি দখলের জন্য এক হিন্দু পরিবারের ৯ সদস্যকে অপহরণ করেছে। খবর পেয়ে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৮ ঘণ্টা পর তাদেরকে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগের স্থানীয় চার নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সূত্রাপুর থানা পুলিশ এই ঘটনাটি নিয়ে দিনভর নাটকীয়তার আশ্রয় নেয়। গতরাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থানায় মামলা হয়নি। পুলিশ আওয়ামী লীগ নেতাদের পক্ষে সমঝোতার উদ্যোগ নিয়ে দৌড়ঝাঁপ দিচ্ছে। ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটায় সূত্রাপুরের ৯৫ ঋষিকেশ দাস লেনে।

সূত্রাপুর থানা পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রসমূহ জানায়, গতকাল শনিবার একটি বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া এক হিন্দু পরিবারের নয় সদস্যকে উদ্ধার করা হয়েছে। বাড়ি দখলের উদ্দেশ্যেই এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে পুলিশ মনে করছে। এতে জড়িত সন্দেহে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঋষকেশ দাস লেনের ওই বাড়ি থেকে শুক্রবার ভোররাতে ওই পরিবারকে তুলে নিয়ে কাছের একটি দোকানে আটকে রাখা হয়। সকালে পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের ডেমরা অঞ্চলের সহকারী কমিশনার মনিরুজ্জামান টুকু। তিনি বলেন, রাত সাড়ে ৩টার দিকে পুলিশ পরিচয় দিয়ে একদল সন্ত্রাসী ওই বাড়িতে ঢুকে অস্ত্রের মুখে বাড়ির নয়জনকে কাছের জনতা ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস নামে একটি দোকানে আটক করে রাখে। খবর পেয়ে সকালে পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করে।

৯৫ ঋষিকেশ দাস লেনের দোতলা ওই জরাজীর্ণ বাড়ির মালিক মহাবীর দাস, নিতাই দাস ও শম্ভু দাস। তারা সম্পর্কে চাচাত ভাই। রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরোর এমএলএসএস শম্ভু (৫০) বলেন, তাদের ধরে নিয়ে মারধর করা হয়। নিতাই দাস (৭০) জানান, তারা উত্তরাধিকার সূত্রে ওই বাড়ির মালিক। তিনি বলেন, তারা আমাদের মুখ বেঁধে প্রথমে বাড়িতে লুটপাট চালায়। আলমারি থেকে গহণাগুলো নেয়। পরে আমাদের ধরে নিয়ে জনতা ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসে আটকে রাখে।

এ ঘটনার সঙ্গে একটি ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের জড়িত থাকার ইঙ্গিত করে নিতাই বলেন, ওই কোম্পানীটি বাড়ি বিক্রি করার জন্য আমাদের চাপ দিচ্ছিল। কিন্তু আমরা রাজি হইনি। বাড়ি বিক্রিতে আমাদের বাধ্য করতে তারা এ কাজ করতে পারে। নিতাই জানান, আটকে রাখার সময় একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর দিতে তাদের বাধ্য করা হয়। নিতাই ওই বাড়ির সামনেই একটি দোকান চালান। নিতাই ও শম্ভু দাস ছাড়া আর যাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয় তারা হলেন- মহাবীর দাস (৪৫), কাজল রানী দাস (৪২), লক্ষ্মীশ্রী দাস (৪০), বিউটি দাস (১৮), সজল দাস (১৪), সুইটি রানী দাস (১২) ও স্বর্ণা রানী দাস (৮)। বিউটি এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন। তবে এ ঘটনার জন্য গতকাল শনিবার ব্যবহারিক পরীক্ষা দিতে পারেননি তিনি।

বাড়ির ভাড়াটে কার্তিক চন্দ্র বলেন, রাতে হঠাৎ শোরগোল শুনে বেরিয়ে দেখি বাড়ির মালিকদের ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সামনে এগিয়ে গেলে দুর্বৃত্তরা মেরে ফেলার হুমকি দেয়। তখন আমরা আবার ঘরে ঢুকে পড়ি। পরে বিভিন্ন স্থানে খবর দেই।

সূত্রাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ডাকাতির খবর পেয়ে পুলিশ ওই বাড়িতে যায়। পরে আশপাশে অনুসন্ধান চালিয়ে গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হওয়ায় হোসাইন বাবুলসহ চারজনকে আটক করা হয়। তার দেয়া তথ্যে অপহৃত নয়জনকে সকাল ১১টার দিকে উদ্ধার করা হয়। বাবুল (৩২) জনতা ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসের মালিক। তার সঙ্গে আর যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তারা হলেন- আখতার হোসেন (২৭), নিজামউদ্দিন সাগর (২৮) ও সোহাগ (২৮)। পুলিশ কর্মকর্তা তোফাজ্জল বলেন, বাড়ি দখলের জন্য পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে, তা আমরা নিশ্চিত। তবে এর সঙ্গে কারা জড়িত তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তিনি জানান, একটি ডেভেলপার কোম্পানীর বিরুদ্ধে ওই এলাকায় একটি মন্দিরসহ বেশ কয়েকটি জমি বিক্রির জন্য চাপ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। বাবুলসহ গ্রেফতারকৃত চারজন আওয়ামী লীগ কর্মী বলে স্থানীয়রা জানায়।

ঢাকা মহানগরের ৮০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী তা স্বীকার করেছেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তারা আওয়ামী লীগের সমর্থক। তবে তাদের এ দুষ্কর্মের সঙ্গে দলের কোনও সংশ্লিষ্টতা নেই।

গতকাল সন্ধ্যায় সূত্রাপুর থানা পুলিশের সাথে যোগাযোগ করা হলে ডিউটি অফিসার এসআই কাদের উল ইসলাম জানান, বাড়ি দখল কিংবা অপহরণ এসব ঘটনায় থানায় এখন পর্যন্ত কোন মামলা হয়নি। তবে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে তিনি জানান। গ্রেফতারকৃতদের বিস্তারিত পরিচয় জানাতে তিনি অপারগতা প্রকাশ করে বলেন, তারা আওয়ামী লীগের কিনা আমার জানা নেই।

সংগ্রাম, ২৩ আগস্ট, ২০০৯

No comments:

Post a Comment