ডেসটিনি রিপোর্ট
রাজধানীর সূত্রাপুরে একটি বাড়ি থেকে অপহরণ করা এক হিন্দু পরিবারের ৯ সদস্যকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল শনিবার তাদের উদ্ধার করা হয়। বাড়ি দখলের উদ্দেশ্যে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে পুলিশ মনে করছে। এর সঙ্গে জড়িত ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
জানা গেছে, রাত সাড়ে ৩টার দিকে ২০-২৫ জনের একটি দল ঋষিকেশ দাস লেনের ৯৫ নম্বর বাসায় প্রবেশ করে। তারা অস্ত্রের মুখে নিতাই দাস, শম্ভু দাস, মহাবীর দাস, কাজল রানী দাস, লক্ষ্মীশ্রী দাস, বিউটি দাস, সজল দাস, সুইটি রানী দাস ও স্বর্ণা রানী দাসকে মুখে কাপড় বেঁধে ফেলে। সন্ত্রাসীরা তাদের পাশের ৮২ নম্বর বাড়ির জনতা ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসে আটকে রাখে। এ সময় সন্ত্রাসীরা নিতাই দাসসহ অন্যদের সাদা একটি স্ট্যাম্পে জোর করে বাড়িটি লিখে দেয়ার জন্য ভয়ভীতি দেখাতে থাকে। তারা দিতে অস্বীকার করলে প্রাণনাশেরও হুমকি দেয়। ভোর পর্যন্ত এ অবস্থা চলতে থাকে।
দোতলা এ বাড়িটি অনেক পুরনো। মালিক হিসেবে নিতাই দাস, শম্ভু দাস ও মহাবীর দাস বাড়িটির নিয়ন্ত্রণে আছেন। তারা উত্তরাধিকার সূত্রে বাড়িটি পেয়েছেন। তারা অনেক বছর ধরে এখানে বসবাসও করছেন। উদ্ধারের পর নিতাই দাস সাংবাদিকদের বলেন, তারা শুধু অপহরণই করেনি, বাসায় লুটপাট চালিয়েছে। ২৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, টাকা ও মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে যায়। বাড়িটি বিক্রি করার জন্য বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই একটি রিয়েল এসেস্ট কোম্পানি চাপ দিয়ে আসছিল। তারা কয়েকবার প্রস্তাব দিলে তা প্রত্যাখ্যান করা হয়। কোম্পানির লোকজন ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে হামলা করেছে। ওই রাতের কথা কোনো দিন ভুলবার নয় বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
মহাবীর দাস জানান, যারা বাড়ি দখলের চেষ্টা করেছে তারা সবাই পুরান ঢাকার। তারা স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। শুধু এ বাড়ি নয়, পুরান ঢাকার আরো কয়েকটি বাড়ি অবৈধভাবে দখল বা ডেভেলপার দিয়ে নামমাত্র মূল্যে কেনার পাঁয়তারাও করছে একটি মহল। এ কারণে পুরান ঢাকার বেশ কিছু হিন্দু পরিবার আতঙ্কের মধ্যে দিনাতিপাত করছে।
এদিকে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, পুরনো জীর্ণশীর্ণ বাড়িটির চারপাশ ঘিরে পুলিশসহ উৎসুক জনতা ভিড় করছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারাও আসছেন। আবার হামলা হতে পারে এ আশঙ্কায় নিরাপত্তার স্বার্থে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে এক পুলিশ সদস্য জানান। বাড়ির লোকজন লণ্ডভণ্ড আসবাবপত্রের দিকে তাকিয়ে বুক চাপড়ে কাঁদছিলেন। তাদের আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য অভয় দিচ্ছিলেন উপস্থিত লোকজন।
সূত্রাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন দৈনিক ডেসটিনিকে জানান, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তাদের সবাইকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। হামলাকারী সন্ত্রাসীদের মধ্যে ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরা হলো- জনতা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মালিক হোসেন মোহাম্মদ বাবুল, আখতার হোসেন, নিজামউদ্দিন সাগর ও সোহাগ। গ্রেফতারকৃতদের সঙ্গে অজ্ঞাত আরো ১৫-১৬ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। হামলাকারীরা সরকারি দলের লোকজন বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন। তবে এ ব্যাপারে নিশ্চিত কিছু জানা যায়নি।
দৈনিক ডেসটিনি, ২৩ আগস্ট, ২০০৯
No comments:
Post a Comment