প্রায় ২ হাজার মন্দির-বাড়িঘর আক্রান্ত

আমাদের সময় ডেস্ক
মানবতাবিরোধী অপরাধে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায়ের পর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর বেপরোয়া আক্রমণ চালাচ্ছে জামায়াত-শিবিরকর্মীরা। মন্দির, উপাসনালয়ে হামলার পাশাপাশি হিন্দুদের বাড়িঘর আক্রমণ করে পুড়িয়ে দিয়েছে তারা। গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত সংখ্যালঘু পরিবারের প্রায় ২ হাজার বাড়িঘর ও মন্দিরে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করা হয়। টানা ৪ দিন নৈরাজ্যের পর সোম ও গতকাল মঙ্গলবারও খুলনার পাইকগাছা, নাটোরের সিংড়া, চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ ও বরিশালের উজিরপুরে মন্দির এবং সংখ্যালঘু পরিবারের ঘরবাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি জানান, গতকাল বিএনপির ডাকা হরতাল চলাকালে কয়রা উপজেলার আমাদীবাজারে বেলা সাড়ে ১১টায় বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলার পর বাজারসংলগ্ন হিন্দু অধ্যুষিত ধোপাপাড়ার ৭টি বাড়িতে হামলা চালিয়ে অগ্নিসংযোগ করা হয়। মন্দির কমিটির সভাপতি প্রণব কান্তি মণ্ডল ও সাধারণ সম্পাদক স্বপন বিশ্বাস জানান, ৩০-৩৫ জনের একদল দুর্বৃত্ত মন্দিরে হামলা চালিয়ে ঘরের দরজা-জানালা ভাঙচুর করে এবং টিনের চাল নামিয়ে ফেলে।

নাটোর প্রতিনিধি জানান, সিংড়া উপজেলার ১২ নম্বর রামানন্দখাজুরা ইউনিয়নের সোয়াইড় বাজারে অবস্থিত কালীমন্দিরে হামলা করে হরি দেবের প্রতিমা ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। একই সময় আগুন দেওয়া হয় মন্দিরের পাশে মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক সমর কুমারের খড়ের গাদায়।

চাঁদপুর প্রতিনিধি জানান, সোমবার গভীর রাতে হাজীগঞ্জের বড়কুল পূর্ব ইউনিয়নের মালিবাড়ীর মহাদেব মন্দির ও মন্দিরে থাকা প্রতিমা ভাঙচুর করে পুকুরে ফেলে দেয় দুষ্কৃতকারীরা। মন্দিরের সেবায়েত দীনেশ চন্দ্র জানান, রাতে মুখোশধারী একদল সন্ত্রাসী এসে মন্দিরটি ভাঙচুর করে।

বানারীপাড়া (বরিশাল) প্রতিনিধি জানান, উজিরপুর উপজেলার শত বছরের ঐতিহ্যবাহী গুঠিয়ার মালাকার বাড়ির কালীমন্দিরে সোমবার রাতে দুর্বৃত্তরা অগ্নিসংযোগ করলে মন্দিরের একাংশ পুড়ে যায়।

লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানান, সোমবার রাতে উপজেলার পলাশী ইউনিয়নের মদনপুর শ্মশান কালীমন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়।

বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি জানান, গত সোমবার রাত ১১টায় উপজেলার আদাবাড়িয়া ইউনিয়নের মাধবপুর বাজার সর্বজনীন দুর্গামন্দিরে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। পরে বাজারের লোকজন এসে দ্রুত আগুন নিভিয়ে ফেলে।

সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার আরও খবর : বৃহস্পতিবার সাঈদীর ফাঁসির রায়ের পর ওই রাতেই নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের রাজগঞ্জ গ্রামে ৪৫টি ঘরে আগুন দেওয়া ছাড়াও ৯টি বাড়ি ও ৫টি মন্দিরে হামলা, লুটপাট করা হয়। জামায়াত-শিবিরকর্মীদের দেওয়া আগুনে পুড়ে মারা যান একজন। একই দিন লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জ বাজারে হিন্দুদের ৫টি সোনার দোকান লুট, একটি মন্দিরে হামলা ও লুটপাট হয়েছে। রায়পুরের গাইয়ারচরে একটি মন্দির ও দুটি আশ্রমে আগুন লাগানো হয়। পরদিন শুক্রবার রাত ৮টা পর্যন্ত চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে ১২টি হিন্দু বাড়ি ও ৩টি মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। হত্যা করা হয় একটি মন্দিরের পুরোহিতকে। সাতকানিয়ায় ৮টি বাড়ি ও একটি বৌদ্ধ মন্দির ভাঙচুর এবং চট্টগ্রাম শহরের চট্টেশ্বরী সড়কে সংখ্যালঘুদের কয়েকটি দোকানে হামলা করা হয়েছে। এছাড়া কক্সবাজারের কুতুবদিয়া ও মহেশখালীতে মন্দিরে আগুন দেওয়া হয়েছে।

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে বেলকা গ্রামে ৩৫টি বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। ভাঙচুর করা হয় ব্রাহ্মণডাঙ্গা গ্রামের ৬টি বাড়ি ও দোকান। সিলেটের কানাইঘাটের গাছবাড়ী বাজারে হিন্দুদের দোকান লুট হয়েছে। এছাড়া মৌলভীবাজারের বড়লেখার জুড়ীবাজার, ঠাকুরগাঁওয়ের গড়েয়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট, সাতক্ষীরার শ্যামবাজার, বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে, কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া, রংপুরের মিঠাপুকুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটেছে।

শনিবার গভীর রাতে দিনাজপুর সদর উপজেলার রানীগঞ্জ উত্তর মহেশপুর গ্রামে মানিক বসাক, সুদেব বসাক, নিশীথ বসাক, রচিত বসাক, সুরেশ বসাক, সুবল বসাক, সুদীব বসাক, মৃণাল বসাকসহ ১২টি সংখ্যালঘু কৃষক পরিবারের ঘরবাড়ি ও খড়ের গাদা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় জামায়াত-শিবির-সমর্থিত দুর্বৃত্তরা। এসব পরিবারের লোকজন এখনও আকাশের নিচে বসবাস করছে। পরদিন রোববার ভোরে শিবির ক্যাডাররা সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বেতিল হালদারপাড়া, গুপীনাথপুর ও রূপসী এলাকায় ৩টি কালীমন্দিরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।

আমাদের সময়

No comments:

Post a Comment