বগুড়া ও বাগেরহাটে মন্দিরে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ

প্রথম আলো ডেস্ক |
গত মঙ্গলবার রাতে মন্দিরের প্রতিমা ভাঙা হয়েছে এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বামুনিয়া গ্রামের মানুষ গতকাল সকালে তাত্ক্ষণিকভাবে বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করেন
গত মঙ্গলবার রাতে মন্দিরের প্রতিমা ভাঙা হয়েছে এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বামুনিয়া গ্রামের মানুষ গতকাল সকালে তাত্ক্ষণিকভাবে বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করেন। ছবি: প্রথম আলো
বগুড়ার গাবতলী উপজেলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের চারটি মন্দিরে ১১টি প্রতিমা গত মঙ্গলবার রাতে ভাঙচুর করা হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে এলাকাবাসী পীরগাছা-গাবতলী সড়ক অবরোধ করে গতকাল বুধবার দুপুর পর্যন্ত বিক্ষোভ করেন। এদিকে, বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার উত্তর গোপালপুর গ্রামের দক্ষিণপাড়া সর্বজনীন দুর্গামন্দিরে গতকাল ভোরে অগ্নিসংযোগ ও প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে।
আমাদের আঞ্চলিক কার্যালয় ও প্রতিনিধির পাঠানো খবর:


বগুড়া: গাবতলী উপজেলার সোনারায় ইউনিয়নের সাবেকপাড়া ও বামুনিয়া গ্রামের তিনটি মন্দিরের নয়টি প্রতিমা অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তরা ভাঙচুর করে। ভাঙা অবস্থায় তিনটি প্রতিমা পীরগাছা-গাবতলী সড়কে ফেলে রাখা হয়। এ ঘটনায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ ছাড়া পার্শ্ববর্তী রামেশ্বরপুর ইউনিয়নের দেবনাথপাড়া গ্রামের একটি মন্দিরের দুটি প্রতিমা একই রাতে ভাঙচুর করা হয়। মন্দিরে হামলার প্রতিবাদে এলাকাবাসীর উদ্যোগে পীরগাছা বাজারের অদূরে সাবেকপাড়ায় গাছ ফেলে গতকাল সকাল থেকে অবরোধ ও বিক্ষোভ করা হয়। প্রশাসন ও পুলিশ কর্মকর্তাদের আশ্বাসে ওই অবরোধ দুপুরে তুলে নেওয়া হয়।
গাবতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী আহমেদ হাশমী বলেন, পীরগাছা-গাবতলী সড়কে মঙ্গলবার রাত তিনটা পর্যন্ত পুলিশ টহল দিয়েছে। এরপর দুর্বৃত্তরা মন্দিরগুলোতে হামলা করে।
বগুড়ার জেলা প্রশাসক সারোয়ার মাহমুদ, পুলিশ সুপার (এসপি) মোজামেঞ্চল হক, গাবতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনিরা সুলতানা, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ জেলা শাখার সভাপতি এনসি বাড়ৈ প্রমুখ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
গাবতলীর কাগইল বাজারের একটি মন্দিরে গত সোমবার হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল। এ ছাড়া উপজেলার আরও দুটি স্থানে দুই সপ্তাহ আগে মন্দির ভাঙচুর করা হয়।

বাগেরহাট: কচুয়া উপজেলার উত্তর গোপালপুর গ্রামের দক্ষিণপাড়া সর্বজনীন দুর্গামন্দিরের দুটি পৃথক মণ্ডপে গতকাল ভোরে বেশ কয়েকটি প্রতিমা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। কচুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোবিন্দ গোপাল বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তরা দুর্গামন্দির ও সংলগ্ন কালীমন্দিরে হামলা চালিয়ে একাধিক প্রতিমা ভাঙচুর শেষে বেড়ায় আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে আশপাশের লোকজন পানি ছিটিয়ে আগুন নেভাতে সমর্থ হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আশরাফুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

জেলার মোরেলগঞ্জ উপজেলার চিংড়াখালী ইউনিয়নের সিংজোড় গ্রামের গোপালপুর সর্বজনীন মন্দিরের প্রতিমা গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ভাঙচুর করা হয়। এ ছাড়া উপজেলার রামচন্দ্রপুর ও বনগ্রাম ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের স্থানীয় দুই নেতার বাড়িতে এবং রামচন্দ্রপুরের ডুমুরিয়া গ্রামের একটি মন্দিরে ১ মার্চ আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

বেগমগঞ্জের তদন্ত কর্মকর্তা বদলি:
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার রাজগঞ্জে হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির ও বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ইব্রাহীম খলিলকে কোম্পানীগঞ্জ থানায় বদলি করা হয়েছে। মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব এখন জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) স্থানান্তর করা হয়েছে। জেলার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মাহবুবুর রশীদ প্রথম আলোকে গতকাল বলেন, থানার পুলিশকে দৈনন্দিন নানা কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। তাই এই মামলাটির বিশেষ গুরুত্ব বিবেচনায় ডিবি পুলিশকে তদন্তভার দেওয়া হয়েছে।
রাজগঞ্জ বাজার এবং টঙ্গীরপাড় ও আলাদীনগর গ্রামে হিন্দুদের বাড়িঘর-মন্দিরে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল। এসব ঘটনায় জামায়াতের নেতা-কর্মী-সমর্থকেরা জড়িত বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেন। বেগমগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমান ওই ঘটনায় ৭১ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও প্রায় দুই হাজার ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা করেন। এজাহারভুক্ত ছয় আসামিসহ ৩৮ জনকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
প্রথম আলো

No comments:

Post a Comment