নিজস্ব প্রতিবেদক, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
হিন্দুদের ওপর সাম্প্রদায়িক সহিংসতার নিন্দা জানিয়ে তাদের সুরক্ষা নিশ্চিতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাল।
‘বাংলাদেশ: হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংস হামলা’ শিরোনামের বুধবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে অ্যামনেস্টি।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্প্রতি একটি ইসলামপন্থী দলের নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়ে ৪০টি মন্দিরে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। গত সপ্তাহজুড়ে হামলায় হিন্দুদের দোকান ও বাড়িতে আগুন দেয়ায় কয়েকশ’ মানুষ গৃহহীণ হয়েছেন।
বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচারের প্রেক্ষাপটে হিন্দুদের ওপর হামলা হওয়ার কথাও উঠে এসেছে অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনে।
অ্যামনেস্টি বাংলাদেশ গবেষক আব্বাস ফয়েজ বলেন, “বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায় বিশাল ঝুঁকিতে আছে, বিশেষত বর্তমানের রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে তারা চরম ঝুঁকিতে। এটা খুবই দুঃখজনক যে, শুধু ধর্মের কারণে তারা হামলার শিকার হচ্ছেন। কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই তাদের যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।”
“বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলের হিন্দু সম্প্রদায়ের যে কোনো ধরনের সহিংসতার নিন্দা জানানো উচিত এবং এ ধরনের কোনো হামলায় অংশ না নেয়ার জন্য সব নেতাকর্মীকে নির্দেশ দেয়া উচিত।”
ক্ষতিগ্রস্তদের বরাত দিয়ে অ্যামনেস্টি বলেছে জামায়াতে ইসলামী ও তার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরের নেতাকর্মীরা এসব হামলা চালিয়েছে।
তবে জামায়াতে ইসলামী আনুষ্ঠানিকভাবে হিন্দুদের ওপর হামলার কথা অস্বীকার করেছে বলেও অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু ও অন্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার কথা জানা গেছে। বিশেষত প্রত্যন্ত অঞ্চলে এসব হামলা বেশি হয়েছে।
সর্বশেষ বুধবার কুমিল্লার দাউদকান্দিতে একটি মন্দিরে হামলা চালিয়ে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত একজন ২৮ ফেব্রুয়ারি অ্যামনেস্টিকে বলেন, জামায়াতের সমর্থকরা নোয়াখালীর রাজগঞ্জ বাজারে তাদের বাড়ি-ঘরে আগুন দিয়েছে।
“তারা আমাদের ৩০টি বাড়িতে আগুন দেয়, যেখানে ৭৬টি পরিবার বাস করতো। তারা আমাদের মন্দিরেও আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে।”
সরকারের পক্ষ থেকে তাদের অস্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
আরেক ক্ষতিগ্রস্ত বলেন, ২ মার্চ জামায়াতের শ’ খানেক কর্মী সাতকানিয়ায় হিন্দুদের চারটি দোকানে ভাংচুর ও লুটপাট করে। এ সময় তারা একটি মন্দিরেও হামলা চালিয়ে ভাংচুর চালায়।
অ্যামনেস্টি বলেছে, হিন্দুরা বাংলাদেশের জনসংখ্যার মাত্র আট শতাংশ এবং ঐতিহাসিকভাবেই তারা সাম্প্রদায়িক সহিংসতার শিকার হয়ে থাকেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময় তাদের ওপর ভয়াবহ নিপীড়ন চালানো হয়। এমনকি ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনের পরও সাম্প্রদায়িক হামলার শিকার হন হিন্দুরা।
হিন্দুদের ওপর হামলা রোধে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান ফয়েজ।
অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বাতিলের দাবিতে জামায়াতে ইসলামীর হরতাল ও সহিংসতার প্রেক্ষাপটে দেশে সৃষ্ট রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কথা তুলে ধরা হয়েছে।
জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা পুলিশের সঙ্গেও সংঘর্ষে জড়াচ্ছে এবং তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ও গুলি ছুড়ছে বলেও ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনে বলা হয়, সাম্প্রতিক সহিংসতায় পুলিশসহ অন্তত ৬০ জন নিহত হয়েছে।
“আক্রান্ত হওয়ার পর পুলিশ গুলি ছুড়ছে বলে গ্রহণযোগ্য তথ্য থাকলেও পুলিশের অতিরিক্ত বল প্রয়োগের বিষয়টিও বিবেচনায় নিতে হবে,” বলেন ফয়েজ।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
============================
বাংলাদেশে হিন্দুদের রক্ষায় জরুরি ব্যবস্থা নিতে হবে
সমকাল ডেস্ক
বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে লন্ডনভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার রক্ষায় সোচ্চার সংস্থাটি বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের প্রতি হিন্দুদের নিরাপত্তা রক্ষায় জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ারও আহ্বান জানিয়েছে। বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থাটি এ আহ্বান জানায়।
'বাংলাদেশ :ওয়েভ অব ভায়োলেন্ট অ্যাটাকস এগেইনস্ট হিন্দু মাইনরিটি' বা 'বাংলাদেশ :হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর অব্যাহত সহিংস হামলা' শিরোনামে অ্যামনেস্টির ওই বিবৃতিতে বলা হয়, সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর অব্যাহত সহিংস হামলার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের রক্ষায় কর্তৃপক্ষকে জরুরি ব্যবস্থা নিতে হবে। এতে বলা হয়, গত সপ্তাহজুড়ে ইসলামপন্থি দলগুলোর নামে বিক্ষোভ মিছিল থেকে সারাদেশে ৪০টির বেশি হিন্দু মন্দির ভাংচুর হয়েছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের দোকানপাট ও বাড়িঘরে আগুন দেওয়া হয়েছে। এতে কয়েকশ' পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) এক রায়ের প্রতিবাদে দেশজুড়ে ওই সহিংসতা শুরু হয়েছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ বিষয়ক গবেষক আব্বাস ফায়েজ বলেন, 'বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায় চরম ঝুঁকিতে রয়েছে, বিশেষ করে চলমান এ উত্তেজনাকর সময়ে। এটি দুঃখজনক যে তারা ধর্মীয় মতপার্থক্যের কারণেই টার্গেটে পরিণত হচ্ছে। কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।' তিনি বলেন, বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলের উচিত হবে, হিন্দু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে যেকোনো সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানানো এবং তাদের সব কর্মী-সমর্থককে এ ধরনের হামলায় অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া।
আব্বাস ফায়েজ জানান, ভুক্তভোগীরা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালকে বলেছে, জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের বিক্ষোভ মিছিল থেকে এসব হামলা চালানো হয়েছে। যদিও জামায়াতে ইসলামী হিন্দুদের ওপর এসব হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। বিবৃতিতে কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দিতে প্রত্যন্ত গ্রামে মন্দির ভাংচুর ও অগি্নসংযোগ, নোয়াখালীর রাজগঞ্জে হিন্দুদের বাড়িঘর ও বাজারের দোকানে আগুন, চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ঘরবাড়িতে আগুন ও দোকানপাট লুটসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর অনেক সহিংস ঘটনার কথা সবিস্তারে উল্লেখ করা হয়েছে।
সহিংসতা বন্ধ ও রাজনৈতিক সংলাপের দাবি এফআইডিএইচের : সহিংসতা বন্ধ করে রাজনৈতিক সংলাপের আহ্বান জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস (এফআইডিএইচ)। বাংলাদেশে মাসখানেক ধরে চলা সহিংসতায় নারী-শিশুসহ '৯৮ জন' নিহতের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। এফআইডিএইচ প্রেসিডেন্ট সোহায়ের বেলহাসেন গতকাল বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট সব দলকে রাজনৈতিক সংলাপে বসার এবং তাদের কর্মী-সমর্থকদের সহিংসতায় ও অন্য দলের বিরুদ্ধে কোনো বিরূপ অভিযানে অংশ না নিতে নির্দেশনার আহ্বান জানায়।
সমকাল
No comments:
Post a Comment