মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ-৭
তপন বিশ্বাস ॥ ২০০২ সালের ১৫ ফ্রেব্রুয়ারি রাত ১২টার দিকে মাতুভুঞা ইউনিয়নের উত্তর চানপুর গ্রামের আবুল হোসেনের পুত্র অসংখ্য অভিযোগের আসামি সন্ত্রাসী হারুনের নেতৃত্বে ১৫-২০ জনের বিএনপি-জামায়াতের একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল মহেশপুর গ্রামে সংখ্যালঘু দাসপাড়াতে ধর্ষণ, হামলা ও লুটপাট চালায়। রাত ১২টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত সন্ত্রাসীদের নারকীয় তাণ্ডবে জয়বিহারী দাসের বাড়ি, ডাক্তারবাড়িসহ বিভিন্ন বাড়ির লোকজন দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করতে থাকে। এ সময় সন্ত্রাসীদের একটি গ্রুপ তিন সন্তানের জননী পুতুল রানী দাসকে (৩২) ঘরের দরজা বন্ধ করে তার স্বামী-পুত্রের সামনে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। তদন্ত কমিশনের কাছে পুতুল বলে, ইজ্জত রক্ষার জন্য আমি সন্ত্রাসী হারুনের হাতে এক হাজার টাকা ঘুষ দেই। কিন্তু তাতেও আমার ইজ্জত রৰা হয় না। নরপিশাচরা আমাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এই রাতে চানপুর গ্রামের ফারুক, শাহআলম ও মোঃ ইউনুস হেমন্ত কুমার দাসের স্ত্রী আলো রানীকেও পালাক্রমে ধর্ষণ করে।সাকা চৌধুরীর তাণ্ডব ॥ সংখ্যালঘু নির্যাতনে কোন দিনই পিছিয়ে ছিলেন না সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী (সাকাচৌ)। কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সারাদেশে যখন চলছে আওয়ামী লীগ ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নানা নির্যাতন, তখন তিনিও শরিক হলেন এ কর্মকাণ্ডে। জাতীয় সংসদের এই নির্বাচনে বিজয়ী হন সাকাচৌ। এরপর তিনি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম জিয়ার সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা নির্বাচিত হন। উপদেষ্টা নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি তাঁর নিজ গ্রাম গহিরায় যান। গ্রামে যাওয়ার পর তাঁর সন্ত্রাসী ক্যাডার ফজল হক, আবু তাহের ও বিধান বড়ুয়াকে হুকুম দেন নির্বাচনে তাঁর বিপক্ষে প্রচারে অংশ নেয়া মহিলা মেম্বার রত্না ঘোষের বাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে ভস্মীভূত করার। সন্ত্রাসীরা সঙ্গে সঙ্গে এলাকায় গিয়ে মহিলা মেম্বারের বাড়িতে আগুন দিলে এই আগুন পার্শবর্তী আরও তিনটি বাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে। পাশাপাশি বাড়ি হওয়ায় রত্না ঘোষের বাড়ির সঙ্গে চন্দন ঘোষ, সনজিত ঘোষ ও অজিত ঘোষের বাড়িও আগুনে ভস্মীভূত হয়। এভাবে সাকাচৌর ক্যাডাররা বাড়িঘরসহ ৩৭টি স্থাপনা ধ্বংস করে। নির্বাচনে বিপক্ষে কাজ করার অপরাধে শতকাতুল ইসলামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গোল্ডেন ফার্নিচার সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর হুমকির মুখে বন্ধ করতে বাধ্য হয়।
ইজ্জতের মূল্য সাড়ে ১৯ হাজার টাকা ॥ ২০০১-এর নির্বাচন-পরবর্তী ৯ অক্টোবর রাতে মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার সবদালপুর ইউনিয়নের নহাটা গ্রামের পালপাড়ার পাশের গ্রামের বাকি মিয়ার নেতৃত্বে মিজানুর রহমান, জাহাঙ্গীর, বাবলু, আবু সাইদ, কেনালসহ ২০-২৫ জন বিএনপি সন্ত্রাসী একই গ্রামের অনিল পাল, নিখিল পালসহ কয়েকজনের বাড়িতে ভাংচুর, মারপিট ও লুটপাট করার একপর্যায়ে কলেজ ও স্কুল পড়ুয়া দুই তরুণীকে অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে পার্শ্ববর্তী মাঠে রাতভর পাশবিক নির্যাতন চালায়। পরের দিন সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন ধারায় মামলা হয়। তদন্ত শেষে আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশীট দাখিল করা হয়। ২০০২ সালের ১২ এপ্রিল পার্শবর্তী আমতৈল দাখিল মাদ্রাসায় স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ঘটনাটি আপোস মীমাংসা করার জন্য এক সালিশ বৈঠকে বসে। ওই সালিশ বৈঠকের মোড়লগণ গণধর্ষণের শিকার হওয়া দুই তরুণীর ইজ্জতের মূল্য ১৯ হাজার ৫শ' টাকা নির্ধারণ করে।
সূত্র: দৈনিক জনকণ্ঠ, ১৮ জুন
No comments:
Post a Comment