সোমবার, ১০ জানুয়ারী ২০১১
স্টাফ রিপোর্টার: ঢাকেশ্বরী মন্দির ও এক এমপি’র বাসায় দুর্ধর্ষ ডাকাতি হয়েছে শনিবার রাতে। ডাকাত দল দু’টি ঘটনায় ২৮৬ ভরি স্বর্ণালঙ্কার লুট করে নিয়ে গেছে। মন্দিরের তালা ভেঙে মূর্তির গায়ের ২০০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে যায় তারা। এছাড়া মন্দিরের প্রনামীর বাক্সের তালা ভেঙে লুট করে সাড়ে চার লাখ টাকা। ওদিকে এমপি’র বাসায় ডাকাত দল হানা দিয়ে ৮৬ ভরি স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে যায়। দু’টি ঘটনায়ই থানায় মামলা হয়েছে। ঢাকেশ্বরী মন্দিরের ডাকাতির ঘটনায় মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বীরেশ চন্দ্র সাহা বাদী হয়ে চকবাজার থানায় একটি মামলা করেছেন। এতে তিনি ২০০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও ৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করেছেন।
এ ঘটনায় মহানগর সর্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটি, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ও বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতারা নিন্দা জানিয়েছেন। প্রতিক্রিয়ায় মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বীরেশ চন্দ্র সাহা বলেন, জাতীয় মন্দিরে এত বড় ঘটনা সাধারণ কোন বিষয় নয়। এ ঘটনায় আমরা বিস্মিত। সরকার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের খুঁজে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করবেন। এছাড়া আওয়ামী লীগ নেতা ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনও গতকাল সকাল ১১টার দিকে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে যান। মন্দিরের প্রাত্যহিক সব ধরনের পূজা-পার্বণ তিনদিনের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেছেন পুরোহিতরা। মন্দিরের পুরোহিত তপন ভট্টাচার্য বলেন, প্রতিদিনের মতো শনিবার রাত সাড়ে ৯টায় আমরা সবাই ঘুমাতে গিয়েছিলাম। এরপর আর কি হয়েছে জানি না। তবে সকাল সাড়ে ৬টায় পূজার ব্যবস্থা করতে এলে দেখি গেটের চারটি তালার মধ্যে তিনটিই নেই। একটি তালা রেত দিয়ে কাটা। ভিতরে গিয়ে দেখি প্রতিমার গায়ে স্বর্ণালঙ্কার কিছুই নেই। এছাড়া প্রনামীর বাক্স খোলা। তিনি বলেন, মন্দিরে বিভিন্ন প্রতিমার গায়ে ২০০ ভরির বেশি সোনার অলঙ্কার, ৬-৭ ভরি রুপার অলঙ্কার ছিল। এছাড়া প্রনামীর বাক্সে ছিল প্রায় চার লাখ টাকা। খবর পেয়ে চকবাজার থানার পুলিশ, সিআইডি ও র্যাব ঘটনাস্থলে পৌঁছে। দুপুর ১২টার দিকে সেখানে যায় ডিবি পুলিশের একটি দল। চকবাজার থানা পুলিশ এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে মন্দিরের ৪ কর্মচারীকে আটক করেছে। তারা হলো- ঝাড়ুদার চিত্তরঞ্জন দাস, কানু চন্দ্র দাস, নিত্য কুমার দাস ও রাতের পাহারাদার আনিছ। ডিএমপি পুলিশের লালবাগ জোনের এসি মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা প্রাথমিক খবরাখবর নিচ্ছি । মন্দিরের ভেতরে কারা ছিল। সিকিউরিটির দায়িত্বে কারা ছিল। সিআইডি পুলিশ ‘ক্রাইম সিন’ লিখে মন্দিরের চারপাশ ঘিরে রেখেছে।
এমপির বাসায় ডাকাতি
ওদিকে সংসদ সদস্য শাহীদা তারেক দীপ্তির বাড়িতে ডাকাতি হয়েছে। ৮৬ ভরি স্বর্ণালঙ্কারসহ নগদ ৬ লাখ টাকা ডাকাতি করে নিয়ে গেছে ডাকাতরা। শনিবার মধ্যরাতে রাজধানীর পল্লবীর ৩৪/২ নম্বর বাসায় এ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। গতকাল সকালে ৫ জনকে সন্দেহজনকভাবে আটক করে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। সকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এডভোকেট সাহারা খাতুন ও ডিএমপি কমিশনার বেনজির আহমেদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ডাকাতদের অতিসত্বর গ্রেপ্তার করার নির্দেশ দেন পুলিশকে। ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা যায়, ৩৪/২ নম্বর বাড়িটি মেজর (অব.) জিয়াউল হকের। এর তেতলা নির্মাণের কাজ চলছে। দোতলায় থাকেন জিয়াউল হকের স্ত্রী নিগার সুলতানা। নিচতলায় ভাড়ায় থাকেন সরকারদলীয় এমপি শাহীদা তারেক দীপ্তি। এমপির স্বামী তারেক মিন্টু জানান, তারা স্বামী-স্ত্রী বেড রুমে ঘুমিয়ে ছিলেন। পাশের রুমে ছিলেন তাদের একমাত্র মেয়ে। ৪টা ৩৫ মিনিটে জানালার গ্রিল কেটে ৪ ডাকাত তাদের রুমে ঢুকে মশারি টেনে ছিঁড়ে ফেলে। এমপি ও তার স্বামী তারেককে অস্ত্র দেখিয়ে জিম্মি করে হাত-পা ও চোখ-মুখ বেঁধে ফেলে তারা। তাদের দু’জনের হাতে রিভলবার ও অপর দু’জনের হাতে ধারালো অস্ত্র ছিল। তাদের বয়স ২২ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। ১ জন নোয়াখালির ভাষায় কথা বলছিল। দু’জনের কথার মধ্যে হিন্দি ভাষার টান ছিল। এমপি শাহীদা বলেন, অস্ত্র ঠেকিয়ে আলমারির চাবি দিতে বলে। আমি তাদের হাতে চাবি তুলে দিয়ে বলি, পাশের রুমে আমার মেয়ে ঘুমিয়ে আছে। ওই রুমে কিছু নেই। ওই রুমে যেও না। আমার মেয়ে ভয় পাবে। পরে ডাকাতরা আলমারি ভেঙে ৮০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ ৫ লাখ ৫১ হাজার টাকা নিয়ে যায়। পুরো ঘরের আসবাবপত্র লণ্ডভণ্ড করে। প্রায় পৌন ১ ঘণ্টা ডাকাতি শেষে যাওয়ার সময় মোবাইল ফোনের সিম খুলে নিয়ে যায়। পুলিশ জানায়, এর আগে রাত সোয়া ২টায় দোতলায় মৃত মেজর (অব.) জিয়াউল হকের স্ত্রী নিগার সুলতানার বাড়িতে ডাকাতি হয়। পরে নিচতলায় এমপির বাড়িতে ঢোকে ডাকাত দল। নিগার সুলতানা জানান, তার এক আত্মীয় জুলেখাকে নিয়ে বাসায় ছিলেন। সোয়া ২টার দিকে জানালার গ্রিল কেটে ৫ ডাকাত ঘরে ঢুকে তাদের হাত-পা বেঁধে ফেলে। আলমারীর চাবি দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে চড়-থাপ্পড় মারে। প্রতিটি রুমের আসবাবপত্র তছনছ করে সাড়ে ৬ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ ৫৫ হাজার টাকা নেয়ার পর ডাকাতরা তাকে বলে, নিচে এমপির বাসায় গিয়ে এমপিকে ডেকে ওঠাতে। তিনি রাজি না হলে অস্ত্র উঁচিয়ে একজন তাকে জিম্মি করে, বাকি ৪ ডাকাত এমপির বাসায় ঢোকে। পল্লবী থানার ওসি ইকবাল হাসেন বলেন, পূর্ব পরিকল্পিতভাবে এ ডাকাতি সংঘটিত হয়েছে।
সূত্র: মানবজমিন
No comments:
Post a Comment