বরিশালে রোববার তদন্ত কমিটির কাছে ২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী সহিংস ঘটনায় নির্যাতনের চিহ্ন দেখাচ্ছেন এক বৃদ্ধ । ছবি: সমকাল
২০০১ সালে নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ গ্রহণ করেছে সরকার ঘোষিত তদন্ত কমিশন। কমিশনের প্রধান সাবেক জেলা ও দায়রা জজ মোঃ শাহাবউদ্দিন এবং সদস্য সিআইডি পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মোঃ শহীদুল ইসলাম ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মনোয়ার হোসেন আকন গতকাল বরিশাল সার্কিট হাউসে সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্তদের লিখিত অভিযোগ নেন। নির্যাতিতদের অভিযোগ গ্রহণে তদন্ত কমিশন আজ সোমবার গৌরনদী ও আগৈলঝাড়ায় বসছে।
গতকাল সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত অভিযোগ গ্রহণকালে গৌরনদী, বানারীপাড়া, মুলাদী, হিজলা, উজিরপুর এলাকার কয়েকশ' নারী-পুরুষ সার্কিট হাউসে উপস্থিত হয়েছিলেন। কমিশনের প্রধান মোঃ শাহাবউদ্দিন জানিয়েছেন, তিনি প্রায় ৫শ' লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। এদিকে অভিযোগ নেওয়ার আগে সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত তদন্ত কমিশন স্থানীয় সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
গতকাল অভিযোগ দেওয়া নির্যাতিতদের মধ্যে উৎকণ্ঠাও ছিল। তাদের সবার অভিযোগ, হামলাকারীরা এখনও এলাকায় রয়েছে। কেউ কেউ আবার প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতাদের ছত্রছায়ায় আওয়ামী লীগে যোগদান করেছে। অভিযোগের যদি বিচার না হয় তাহলে আবার বিএনপি ক্ষমতায় এলে নালিশ দেওয়ার অপরাধে তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হবে। এমন আকুতি জানিয়ে গৌরনদীর কমলাপুর গ্রামের শাহনুর মৃধা তদন্ত কমিশনের সামনে চিৎকার করে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
গতকাল তদন্ত কমিশনে নালিশ জানাতে এসেছিলেন হিজলার চরকুশরিয়ার ৭০ বছরের বৃদ্ধ আবুল খায়ের। ২০০১ সালে নির্যাতনের শিকার হয়ে পঙ্গু হয়েছেন তিনি। গতকাল দুটি ক্র্যাচে ভর করে সার্কিট হাউসে যান। একই গ্রামের শাহজাহান মোল্লা এসেছিলেন তার ভাই কালাম মোল্লার হত্যাকারীদের বিচার চাইতে। ওই সময় বিএনপি-জামায়াত জোটের নির্যাতনে ফুসফুস ফেটে মারা যান শাহজাহান মোল্লার ভাই।
এদিকে বরিশালের গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলায় চারদলীয় জোট ক্যাডার এবং সন্ত্রাসীদের হাতে নির্যাতিত সংখ্যালঘু ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অভিযোগ শুনতে সংখ্যালঘু নির্যাতন তদন্ত কমিশন আজ সোমবার সেখানে বসছে।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, এই দুই উপজেলার নির্যাতিতরা ঘটনার অধিকতর তদন্তের জন্য কমিশনকে ঘটনাস্থলে এসে তদন্তের দাবি জানান। এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কমিশন আজ সোমবার গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলার ডাকবাংলোতে অভিযোগ গ্রহণ করতে বসবেন। কমিশনের কাছে নির্যাতিতদের হাজির করাতে বরিশাল জেলা প্রশাসকের দফতর থেকে আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপংকর বিশ্বাস ও গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাঈদ মাহাবুব খানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তদন্ত কমিশনের সদস্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মনোয়ার হোসেন আকন জানান, আজ সোমবার সকালে গৌরনদী উপজেলা ডাকবাংলোতে এবং বিকেলে আগৈলঝাড়া উপজেলা ডাকবাংলোতে বসে নির্যাতিত সংখ্যালঘু ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অভিযোগ কমিশন গ্রহণ করবে। প্রয়োজনে নির্যাতিত নারী-পুরুষের সঙ্গে কথা বলতে এবং বাড়ি ভাংচুর ও লুটপাটের আলামত দেখতে তদন্ত কমিশন সদস্যরা সরেজমিন ঘটনাস্থলে যাবেন।
No comments:
Post a Comment