স্টাফ রিপোর্টার, সিরাজগঞ্জ ॥ বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলের দেশব্যাপী বহুল আলোচিত উল্লাপাড়ার পূর্ণিমা রানী ধর্ষণ মামলার সোমবার পূর্ণিমা রানী শীল সিরাজগঞ্জের আদালতে জবানবন্দী দিয়েছে।
প্রায় ৯ বছর পর এই প্রথম পূর্ণিমা রানী সিরাজগঞ্জে এসে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল আদালত বিচারক ওসমান হায়দারের কাছে তার জবানবন্দী প্রদান করে। জবানবন্দীতে মামলার এজাহারভুক্ত ৩ আসামিকে আদালত থেকে অব্যাহতি দেয়ায় পূর্ণিমা অসন্তোষ প্রকাশ করে। এ সময় পূর্ণিমাকে সহায়তা করেন সরকারের পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুর রহমান ও স্পেশাল পিপি আব্দুল হামিদ লাভলু। আদালতে জবানবন্দী দেয়ার সময় পূর্ণিমাকে বেশ সাবলীল মনে হয়েছে। চোখে-মুখে ছিল দৃঢ়তা। এ সময় আদালতে উৎসুক জনতার ভিড় ছিল। একই দিন তার বড় ভাই অর্জুন শীলও আদালতে জবানবন্দী দিয়েছেন। মামলার মূল বাদী পূর্ণিমার বাবা অনীল শীলের মৃত্যুর পর অর্জুন শীলই মুখ্য বাদী হিসেবে মামলার জবানবন্দী দিয়েছেন।
২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর জোট সরকারের নেতাকর্মীরা সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার সংখ্যালঘু পরিবারের ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী পূর্ণিমা রানীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গণধর্ষণ করে। এ নিয়ে প্রথমে উলস্নাপাড়া থানায় মামলা হয়। আসামি করা হয় ১৭ জনকে। কিন্তু সকল আসামি বিএনপিদলীয় নেতাকর্মী হওয়ায় পুলিশ মামলা নিয়ে টালবাহানা করে। পরে মামলা করা হয় সিরাজগঞ্জের আমলি আদালতে। এর পরে আদালতের আদেশে পুলিশ পূর্ণিমাকে নিয়ে সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে মেডিক্যাল পরীক্ষা করায়। মেডিক্যাল রিপোর্টে ধর্ষণের ভয়ঙ্কর চিত্র ফুটে ওঠে। এর পর পুলিশ মামলার তদনত্ম শেষে আদালতে ১৭ জনকে আসামি করে চার্জশটি প্রদান করে। পরে বিচার চলাকালে আদালত তিন জনকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছে।
কিন্তু মামলা শুনানি চলাকালে তৎকালীন জোট সরকারের এমপি আকবর আলী মামলা ভিন্ন খাতে প্রবাহের চেষ্টা করে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে মামলার বর্ধিত তদন্তের আদেশ পেয়ে সিআইডি সম্পূরক চার্জশীট প্রদান করে। এতে মূল আসামিদের বাদ দেয়া না হলেও পূর্ণিমাকে সহায়তাকারী আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি আব্দুল লতিফ মির্জা, এ্যাডভোকেট আব্দুর রহমানসহ ৬ জনকে আসামি হিসাবে অনর্ভুক্ত করা হয়। তবে মামলার বাদী পূর্ণিমার বাবা অনিল শীল এই সম্পূরক চার্জশীটে না রাজি পিটিশন দাখিল করে। এমনই অনেক আইনী লড়াই শেষে ২০০৭ সালের নবেম্বরে মামলা মূল ধারায় ফিরে আসে। বাতিল হয়ে যায় সম্পূরক চার্জশীট।
এর পরে মূল আসামিরা জামিন নিয়ে পালিয়ে যায়। তবে এখনও আলতাফ ও জলিল দু'জন এ মামলায় জেল হাজতে রয়েছে। ৪ জন জামিন নিয়ে নিয়মিত হাজিরা দিচ্ছে। বাকি ৮ জনের জামিন বাতিল করে সোমবার আদালত তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে।
দৈনিক জনকণ্ঠ। ১৬ মার্চ, ২০১০
No comments:
Post a Comment