প্রস্তাবিত ‘অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ (সংশোধন) আইন-২০০৯’ পাস করতে সরকার তাড়াহুড়ো করছে। এ আইন পাস হলে সমস্যা আরও জটিল আকার ধারণ করবে। সমস্যা সমাধানে সরকারকে প্রতি জেলায় একজন সাবেক জেলা জজের নেতৃত্বে ট্রাইব্যুনাল গঠন করার প্রস্তাব করেছেন দেশের বিশিষ্টজনেরা। গতকাল বৃহস্পতিবার অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ (সংশোধন) আইন নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এ কথা বলেন।
বিচারপতি গোলাম রাব্বানীর সভাপতিত্বে জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল বারকাত, নিজেরা করির সমন্বয়ক খুশী কবির, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়েশা খানম প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশে সাড়ে ছয় লাখ একর ভূমি শত্রু সম্পত্তি হিসেবে নথিভুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র দুই লাখ একর ভূমি সরকারের দখলে রয়েছে। বাকি সাড়ে চার লাখ একর ভূমি কোথায়, কার দখলে, কী অবস্থায় আছে তার কোনো হদিস সরকারের কাছে নেই।
সভাপতির বক্তব্যে বিচারপতি গোলাম রাব্বানী বলেন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রয়োজন। কিন্তু প্রস্তাবিত সংশোধনী আইনে তা নেই। আইনের খসড়া দেখে মনে হচ্ছে, বিদ্যমান আইনকে উঠিয়ে দিয়ে লুটেপুটে খাওয়াই উদ্দেশ্য। তিনি বলেন, আইনের গোড়াতেই গলদ রয়ে গেছে। এ আইন সমস্যার সমাধান না করে সমস্যাকে আরও জটিল করে তুলবে। ১৪ দিনের যুদ্ধের কারণে দেশের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে ৪৪ বছর ধরে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আইন নিয়ে আলোচনার জন্য সাংসদরা কথা বলবেন। কিন্তু বিরোধী দল সংসদে যাচ্ছে না। কেন যাচ্ছে না, তা জানি না। কিন্তু তারা বেতন ঠিকই নিচ্ছে। এ অবস্থায় আইনের দুর্বলতাগুলো সংবাদমাধ্যমকেই তুলে ধরতে হবে বলে তিনি জানান।
সুলতানা কামাল বলেন, সাম্প্রদায়িক মানসিকতা থেকে শত্রুসম্পত্তি আইন তৈরি করা হয়েছিল। বর্তমান সরকারের কাছে প্রত্যাশা, তারা এ আইন বাতিল করে প্রকৃত মালিকদের কাছে সম্পত্তি ফিরিয়ে দেবে। কিন্তু সংশোধনের প্রস্তাব দেখে মনে হচ্ছে, সমস্যা আরও জটিল হবে। আইন চূড়ান্ত করার আগে তিনি সবার সঙ্গে আলোচনা করার পরামর্শ দেন।
অধ্যাপক আবুল বারকাত বলেন, ২৬ লাখ একর জমি অর্পিত সম্পত্তি আইনের কারণে বেহাত হয়েছে। কিন্তু সরকার তা অস্বীকার করছে।
অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন, অর্পিত (শত্রু) সম্পত্তি আইন প্রতিরোধ আন্দোলন, এইচডিআরসি, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, নিজেরা করি, হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনরিটিজ, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
প্রথম আলো | তারিখ: ২৭-১১-২০০৯
No comments:
Post a Comment