নিজস্ব প্রতিবেদক
‘রাতে ঘুমিয়ে ছিলাম। ঘুম থেকে আমাদের তুলে মারতে মারতে নিয়ে গেছে। মুখ ও হাত বাঁধা ছিল। রাস্তার দুই পাশে কিছু মানুষ দাঁড়িয়ে ছিল। তারা শুধু তাকিয়ে দেখেছে, কিছু বলেনি। মনে হয় ওরা ওদেরই লোক। এখন রাস্তায় বের হতেই ভয় লাগে। যদি আবার তুলে নিয়ে যায়! রাতে একটুও ঘুম আসে না।’
পুরান ঢাকার সূত্রাপুরের ৯৫ হূষীকেশ দাস লেনের বাসিন্দা শিশু স্বর্ণা রানী দাস ও সুইটি দাস এভাবে আতঙ্ক আর ভয়ের কথা জানিয়েছে। তারা স্কুলে যাওয়াও বন্ধ করে দিয়েছে। স্বর্ণা একরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ে আর সুইটি পড়ে রোকনপুর সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণীতে। শুধু এই দুই শিশু নয়, এমন আতঙ্কে আছেন সুইটির বাবা মহাবীর দাস ও মা লক্ষ্মী রানী দাসসহ পরিবারের সবাই।
৯৫ নম্বর হূষীকেশ দাস লেনের প্রাচীন বাড়িটি দখলের জন্য গত শুক্রবার গভীর রাতে একদল দুর্বৃত্ত একটি পরিবারের নয় সদস্যকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পুলিশ শনিবার সকাল ১০টার দিকে পাশেই জনতা ওয়ার্কশপ থেকে তাদের উদ্ধার করে। এ ঘটনায় জড়িত চার জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আতঙ্কিত পরিবারের সদস্যরা গতকাল বলেন, এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো এমন অপ্রীতিকর ঘটনার শিকার হলেন তাঁরা। গত বছরও হঠাৎ করেই একদল সন্ত্রাসী এসে ১০ হাজার টাকা দাবি করেছিল। এমনকি টাকা না দেওয়ায় মারধরও করেছে। ওই সময় পুলিশ এসে সমস্যার সমাধান করে। স্থানীয় লোকজন সালিস করে দেয়।
মহাবীর দাস ও শম্ভুনাথ দাস গতকাল প্রথম আলোকে এসব ক্ষোভ আর কষ্টের কথা জানিয়ে বলেন, একটি পরিবারের পক্ষে আর কত সহ্য করা সম্ভব! এই যন্ত্রণা সহ্য করা যায় না। আমাদের চোখের সামনে স্ত্রী ও মেয়েদের মুখ-হাত বেঁধে মারতে মারতে নিয়ে গেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেপ্তার হওয়া মো. ইসমাইল অপহরণের ঘটনার মূল হোতাদের একজন। এ ছাড়া মো. সোহাগ তাঁরই কর্মচারী ও অন্য দুজন আক্তার হোসেন এবং মো. নিজামুদ্দিন পরিচিত।
গতকাল পাঁচ দিন রিমান্ডের প্রথম দিন পুলিশ চার আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। সূত্রাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোফাজ্বল হোসেন জানিয়েছেন, এ ঘটনায় আনন্দধারা হাউজিং সোসাইটির নামটি আসছে। তদন্ত চলছে।
পুলিশ জানায়, ইসমাইল জিজ্ঞাসাবাদের সময় ওই বাড়িটি তাঁর বলে দাবি করেছেন। পুলিশকে তিনি বলেন, ইদ্রিস নামের এক ব্যবসায়ী ১৯৭৪ সালে ২২ হাজার টাকায় গোপালকৃষ্ণ দাসের কাছ থেকে কিনেছেন। গোপালকৃষ্ণ হলেন মহাবীর ও শম্ভুনাথ দাসের বাবা। ইসমাইল আবার এই ইদ্রিসের কাছ থেকে ৯০ লাখ টাকায় বায়নানামা করে এই জমির মালিক দাবি করছেন। এ ব্যাপারে গতকাল মহাবীর ও শম্ভুনাথ বলেন, এখনো তাঁরা তাঁদের ঠাকুরদা হরমোহন দাসের নামে খাজনা দেন।
পুলিশ এখন ইদ্রিসসহ অপহরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যদের ধরতে অভিযান শুরু করেছে। ইদ্রিস ব্যবসায়ী, বাসা জয়দেবপুর বলে জানা গেছে।
প্রথম আলো, ২৫ আগস্ট, ২০০৯
No comments:
Post a Comment