বাংলাদেশের হিন্দু উত্তরাধিকার আইন সংশোধন, সংযোজন প্রসঙ্গে
সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারের ধর্ম মন্ত্রণালয় বাংলাদেশে প্রচলিত হিন্দু উত্তরাধিকার আইনের প্রয়োজনীয় সংস্কার, অর্থাৎ সংশোধন, সংযোজনের জন্য হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে ১৫/০৭/০৮ তারিখের মধ্যে প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য নির্দেশ দিয়েছে (স্মারক নং-প্র:/৬-৩/২০০৪/৬০৮ তারিখ-৮/৬/২০০৮)। এ প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে বিনীতভাবে জানাতে চাই যে, বাংলাদেশ ধর্মীয় সংখ্যালঘু হিন্দুদের ‘উত্তরাধিকার আইন’ বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সংস্কার বা পরিবর্তনের কোন প্রয়োজন নেই কারণ কোন দেশের কোন সম্প্রদায়ের প্রচলিত বলবৎ আইন সংশোধন, সংযোজন একমাত্র জনপ্রতিনিধিত্ব সরকারই করতে পারে যদি তা ওই জনগোষ্ঠীর সিংহভাগ লোকের সমর্থন থাকে। তাছাড়া এদেশের প্রখ্যাত আইনজ্ঞ, আইনজীবী, পণ্ডিতবর্গ, সমাজপতিরা ও হিন্দু সাংবাদিক বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে হিন্দু আইন সংস্কারের বিরোধী। নিয়মিত পত্রিকা পাঠকরা ইহা অবগত আছেন। উদাহরণস্বরূপ ২/৪টি নিম্নে দেয়া গেল। ১১ এপ্রিল, ১৪ জুন, ৫ ও ২১ জুলাই, ১৪ আগস্ট-৯৯ আজকের কাগজ। ৮ আগস্ট-৯৯ দৈনিক জনকণ্ঠ, ১২ জুলাই-৯৯ দৈনিক মাতৃভূমি, ২০ ডিসেম্বর-৯৯ বাংলার বাণী, ২০ এপ্রিল-২০০০ ভোরের কাগজ, ১৮ সেপ্টেম্বর-২০০০ আজকের কাগজ ইত্যাদি।
পরিশেষে বলতে চাই যদি ক্ষমতা থাকে তবে হিন্দু আইন সংস্কারের আগে মানবতাবিরোধী নিম্ন আইনগুলো ও জরুরি বিষয়গুলো নিরসনের আশু ব্যবস্খা করুন।
১। শত্রু (অর্পিত) সম্পত্তি আইনের জন্মলগ্ন থেকে শর্তহীনভাবে বাতিল।
২। ১৯৭২ সালের ৪ মূলনীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের সংবিধান পুন:প্রবর্তন (পঞ্চম ও অষ্টম সংশোধনী বাতিলসহ)।
৩। Caste Disabilities Removal Act-21 of 1850 (Freedom of Religion act VII of 1850).
৪। জাতীয় সংসদে ৩৩০ আসনের মধ্যে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য ৬৬টি আসন (৬ জন মহিলাসহ) সংরক্ষণ।
৫। শিক্ষালয়গুলো সংস্কৃতসহ ধর্মীয় শিক্ষাদানের নিমিত্ত সরকারি বেতন স্কেলে পণ্ডিতের নিয়োগ দান।
৬। দেবোত্তর, ব্রহ্মোত্তর, ভোগত্তর, শ্মশানঘাটের সম্পত্তি ভূমিদস্যুদের হাত থেকে মুক্ত করে ওয়াকফ সম্পত্তির মতো হিন্দু ট্রাস্ট গঠন করে তাদের হাতে সমর্পণ।
৭। সংখ্যানুপাতে রাষ্ট্রীয় সর্বক্ষেত্রে সংখ্যালঘুদের নিয়োগ দান।
৮। বাংলাদেশ থেকে সন্ত্রাসী নামক দানবদের নির্মূলকরণ।
৯। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করে সাধারণের ধরাছোঁয়ার মধ্যে রাখার লক্ষ্যে সরকারিভাবে কঠোর মনিটরিংকরণ।
১০। ধর্মীয় বা সাম্প্রদায়িক রাজনীতি চিরতরে বকরণ।
পরিশেষে ১১ জুলাই-৯৯ ভোরের কাগজে দেবকী মল্লিক, সাংবাদিকের একটি মন্তব্য দিয়ে আমার বক্তব্য শেষ করছি সেখানে তিনি বলেছেন, আমার অবস্খান যেখানে সেখানকার ভৌগোলিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাষ্ট্রীয় কাঠামো সম্পর্কে সম্মক ধারণা পোষণ করেই আমাকে চলতে ও সন্তুষ্ট থাকতে হবে। তিনি আরও বলেছেন, রাজধানীর বুকে যেসব উদার হিন্দু আইনজীবী, উদার রাজনীতিবিদ, উদার সমাজকর্মী রয়েছেন নিজেদের বাহাবা পেতে আপামর হিন্দু জনগোষ্ঠীর ওপর এ ধরনের আইন চাপিয়ে দিয়ে ভবিষ্যৎ বংশধরদের নিশ্চিহ্ন করে দেবেন না বিনীত অনুরোধ রইল। অতীত ইতিহাসের প্রেক্ষাপট একবার দিব্যচক্ষু উন্মিলিত করে অনুধাবন করুন।
সংবাদ, ২২ জুলাই, ২০০৮
হিন্দু আইনে সম্পত্তি বন্টনের নিয়ম বা হিন্দু উত্তরাধিকার আইন সম্পর্কে জানতে দেখুন এই ভিডিও
ReplyDeletehttps://www.youtube.com/watch?v=szKu1qoEa0w