বেগমগঞ্জে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ভাংচুর, লুট

জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডব
নিজস্ব সংবাদদাতা, নোয়াখালী, ১ মার্চ ॥ নোয়াখালীর রাজগঞ্জ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে জামায়াত-শিবির ও লুটেরা চক্রের হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সর্বস্ব হারানো পরিবারগুলো বসবাস করছে খোলা আকাশের নিচে। তবে; প্রশাসনসহ বিভিন্ন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে ক্ষতিগ্রস্তদের দিকে।
রাজগঞ্জ ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত জামায়াত-শিবির চক্রের হামলা তা-বের সময় ইউনিয়নের ৮টি বাড়িতে ৪০টি ঘরে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও লুটতরাজ শেষে আসবাবপত্রে আগুন দেয়া হয়। এ ছাড়া বসতঘর ও রান্নাঘরসহ ১৭ পরিবারের আরও ৩০টি ঘর সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়। সবচেয়ে বেশি ঘর ২৬টি পোড়ানো হয় আলাদিনগর গ্রামের মালী বাড়িতে।
দুর্বৃত্তরা একই সময়ে ৬টি মন্দিরে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও আগুন দেয়া হয়। মন্দিরগুলো হচ্ছে- রাজগঞ্জ বাজারের কালি মন্দির, বাজারের পশ্চিম পাশের কালিতলার নবনির্মিত কালি মন্দির, বনিক্য বাড়ির সেবা ঠাকুর আশ্রম মন্দির, বনিক্য বাড়ির মনসা মন্দির, কুরি বাড়ির নিজস্ব মন্দির, কালির হাটের কালি মন্দির। সরেজমিনে গেলে আলাদিনগর গ্রামের মালী বাড়ির বিশাখা রানী দাস জানান, হামলাকারীদের ভয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে পার্শ্ববর্তী মুসলমান বাড়িতে তারা আশ্রয় নিয়েছিলেন। পরনের কাপড় ছাড়া তারা কিছুই নিয়ে যেতে পারেননি। সবকিছু পুড়ে গেছে তার।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শুক্রবার রাজগঞ্জ বাজারসহ আশপাশের এলাকায় পুলিশের পাশাপাশি, বিজিবি ও র‌্যাব মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে এ মর্মন্তুদ ঘটনার খবর পেয়ে জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি এ্যাডভোকেট সুধীর রঞ্জন সাহা ও সাধারণ সম্পাদক বিনয় কিশোর রায়ের নেতৃত্বে পরিষদের নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে হামলাকারীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন।
শুক্রবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নোয়াখালী জেলা পরিষদের প্রশাসক ডা. এ বি এম জাফর উল্যা ভস্মীভূত ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য পরিবার প্রতি ৫০ হাজার টাকা এবং প্রতিটি মন্দিরের জন্য ১ লাখ টাকা করে জেলা পরিষদ থেকে অনুদান ঘোষণা করেন। এ সময় জেলা পরিষদের প্রশাসক জাফর উল্যা হামলাকারী জামায়াত-শিবির কর্মীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারের আশ্বাস দেন।
একই সময় চৌমুহনী পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশিদ কিরনের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ এবং উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার আবুল হোসেন বাঙালীর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল হামলার শিকার হিন্দু বাড়িগুলো পরিদর্শন করে সহমর্মিতা প্রকাশ করেন।
বেগমগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ উল্যা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার নুরুল হকের নেতৃত্বে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ৫০ কেজি করে চাল, ২ কেজি মসুর, ৫ কেজি করে আলু বিতরণ করেন শুক্রবার বিকেলে।
এছাড়া শুক্রবার দুপুরের পর থেকে বিকেল পর্যন্ত গান্ধী আশ্রম ট্রাস্টের পক্ষ থেকে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ১৭ পরিবারের মাঝে খাবারের জন্য চাল, ডাল, আলু, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ করা হয়। এ সময় ট্রাস্টের মানবাধিকার বিষয়ক কর্মকর্তা অসীম কুমার বকসি বলেন-এ হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে গান্ধী আশ্রম ট্রাস্ট। একই সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার ও শাস্তির জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

সূত্র: দৈনিক জনকণ্ঠ। ২ মার্চ ২০১৩। লিঙ্ক

No comments:

Post a Comment