৩৩ দিন আটকে রেখে কিশোরীকে গণধর্ষণ

ধুনট (বগুড়া) প্রতিনিধি
বগুড়ার ধুনট উপজেলার এক কিশোরীকে টানা ৩৩ দিন আটকে রেখে কয়েক দফা গণধর্ষণ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, তাকে বিদেশে পাচারের চেষ্টাও করা হয়েছে। তবে কৌশলে সে পালিয়ে আসে।
মেয়েটি উপজেলার কালেরপাড়া ইউনিয়নের কান্তনগর উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্রী। এই ঘটনায় আদলতে মামলা করা হয়েছে।
মামলা ও ভুক্তভোগী পরিবারসূত্রে জানা গেছে, উপজেলার কালেরপাড়া ইউনিয়নের হাঁসখালী গ্রামের ওই কিশোরী গত ১২ জুলাই স্থানীয় কান্তনগর বাজারে গোবিন্দ চন্দ্র সরকার নামের এক ব্যক্তির স্টুডিওতে ছবি তুলতে যায়। এ সময় স্টুডিওতে গোবিন্দ চন্দ্র না থাকায় দোকানের কর্মচারী বিলচাপড়ী গ্রামের প্লাবন (১৭) তার ছবি তোলে। প্লাবন তার ছবি বাড়িতে পৌঁছে দেবে জানালে মেয়েটি চলে যায়। পরে সেদিনই রাত আটটার দিকে প্লাবন ও তার সহযোগী আশরাফ আলীসহ বেশ কয়েকজন অপরিচিত যুবক একটি সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে মেয়েটির বাড়ির সামনের রাস্তায় যায়। মুঠোফোনে মেয়েটিকে তার ছবি নিতে সেখানে আসতে বলা হয়। রাস্তায় যাওয়ামাত্র প্লাবন ও তার সহযোগীরা কাপড় দিয়ে বেঁধে মেয়েটিকে অটোরিকশায় তুলে বগুড়ার শাহজাহানপুর থানার মাদলা গ্রামে নিয়ে যায়। সেখানে প্লাবনের সহযোগী আশরাফ আলীর শ্বশুরবাড়িতে আটকে রেখে তাকে গণধর্ষণ করা হয়।
মেয়েটিকে জানায়, গণধর্ষনের পর প্লাবন তাকে ভুয়া বিয়ে করে মাদলা গ্রাম থেকে সাত দিন পর কৌশলে ঢাকায় নিয়ে যায়। সেখানে সাভার থানার জামগড়া বস্তিতে আটকে রেখে প্লাবন ও তার সহযোগীরা মেয়েটির ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায়। এক পর্যায়ে ৩৩ দিন পর ১৫ আগস্ট ভোরে সে কৌশলে সেখান থেকে পালিয়ে আসে। পরে তার নাকের ফুল আড়াই শ টাকায় বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে বাড়িতে আসে।
মেয়েটি বলেছে, আসামিরা তাকে শুধু ধর্ষণই করেনি, একটি ঘরে আটকে রেখে দিনে মাত্র একবার খেতে দিয়েছে। এমনকি তাকে বিদেশে পাচার করতেও চেয়েছিল।
এই ঘটনায় গ্রামের মাতব্বরেরা কয়েক দফা সালিশ বৈঠক করেছেন, কিন্তু কোনো সমাধান করতে পারেননি। তা ছাড়া মেয়েটির পরিবার সংখ্যালঘু হওয়ায় ভয়ে এত দিন বিষয়টি প্রশাসনকেও জানায়নি।
অবশেষে মেয়েটির বাবা বাধ্য হয়ে গত বৃহস্পতিবার বগুড়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। বিচারক জেব-উন-নেছা বিষয়টি তদন্ত করে ধুনট থানার পুলিশকে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।
জানতে চাইলে গ্রাম্য মাতব্ব ও কালেরপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জুলফিকার আলী গতকাল শুক্রবার প্রথম আলো'কে বলেন, ধর্ষিতা হিন্দু পরিবারের মেয়ে আর ধর্ষকেরা মুসলমান। এ কারণে এলাকার লোকজন বিষয়টি গোপনে মীমাংসার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ধর্ষণকারীদের পক্ষ থেকে কোনো সহযোগিতা না পাওয়া তারা মামলা করতে বাধ্য হয়েছেন।
ধর্ষক প্লাবনের বাবা ময়না মিয়া বলেন, 'বিষয়টি নিয়ে এলাকায় কয়েক দফা সালিস বৈঠক হয়েছে, কিন্তু মীমাংসা হয়নি। তবে মামলা হয়েছে কি না, তা জানি না।'
যোগাযোগ করা হলে ধুনট থানার পরিদর্শক তোজাম্মেল হক বলেন, মেয়েটি বাড়ি থেকে হারিয়ে গেছে মর্মে গত ১৬ জুলাই তার বাবা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন। তবে আমি তাকে মামলা দিতে বলেছিলাম। কিন্তু তিনি কেন মামলা দিতে ভয় পেয়েছেন তা জানাননি। মামলার নথি হাতে পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঘটনার পর থেকে প্লাবন পলাতক বলে তিনি জানান।
প্রথম আলো ২৭ আগস্ট, ২০১১

No comments:

Post a Comment