জাজিরায় এক পরিবারকে পুড়িয়ে মারার হুমকি - শরীরে সিগারেটের ছ্যাঁকা, ওরা চেয়ারম্যানকেও মানে না!

আসাদুজ্জামান জুয়েল

জাজিরায় সিগারেটের আগুনের ছ্যাঁকা দিয়ে একজনকে নির্যাতন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় প্রভাবশালীরা তার পরিবারকে উৎখাত করে সম্পত্তি দখলের পাঁয়তারা করছে। বর্তমানে পরিবারটি চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নির্যাতনের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, 'অপর গ্রুপ প্রভাবশালী হওয়ায় আমি বিচার করতে পারিনি।' এদিকে জাজিরা থানায় নির্যাতিত পরিবারটি অভিযোগ করলেও ওসি বলছেন, তিনি কিছুই জানেন না।

সরেজমিন ঘুরে ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জেলার জাজিরা উপজেলার বড়কান্দি ইউনিয়নের সুধন্য মণ্ডলের কান্দি গ্রামের বিষ্ণুপদ মণ্ডল নিজ জমিতে কয়েক দিন ধরে বাড়ি করার জন্য মাটি কাটছিলেন। গত শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে স্থানীয় নয়াবাজারে বিষ্ণুপদ মণ্ডল একটি চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছিলেন। এ সময় একই গ্রামের হোসেন মোড়ল ও আমজাদ মোড়ল, কাচারি কান্দি গ্রামের নুরু মৃধা ও তমিজদ্দিন এবং মালের কান্দি গ্রামের তোফাজ্জল হোসেন মাল এসে বিষ্ণুপদ মণ্ডলকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে জমি নিজেদের দাবি করে মাটি কাটতে নিষেধ করে। এক পর্যায়ে তোফাজ্জল হোসেন মাল বিষ্ণুপদ মণ্ডলকে জ্বলন্ত সিগারেটের আগুন দিয়ে হাতে ছ্যাঁকা দিলে তার শার্ট পুড়ে যায়। এ সময় তোফাজ্জল বিষ্ণুপদ মণ্ডলকে বাজারের মধ্যে প্রকাশ্যে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার হুমকি দেয়। বাজারে উপস্থিত লোকজন বিষ্ণুপদ মণ্ডলকে উত্তেজিত তোফাজ্জল মালের হাত থেকে রক্ষা করেন। এ ব্যাপারে বিষ্ণুপদ মণ্ডল গত শনিবার জাজিরা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। বর্তমানে বিষ্ণুপদ মণ্ডলের পরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এদিকে জাজিরা থানায় সাধারণ ডায়েরি করলেও এ ব্যাপারে ওসি কিছুই জানেন না বলে জানান। ঘটনার দুদিন পেরিয়ে গেলেও পুলিশ এখন পর্যন্ত তদন্তে যায়নি।

প্রত্যক্ষদর্শী কাদের বক্স, সরদার কান্দি গ্রামের আলী আকবর সরদার ও নজুমদ্দিন, বেপারী কান্দি গ্রামের মনির হোসেন মাদবর বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যায় হোসেন মোড়ল, আমজেদ মোড়ল, নুরু মৃধা, তোফাজ্জল মালসহ কয়েকজন লোক বাজারে এসে বিষ্ণুপদ মণ্ডলকে গালাগাল করে জীবন্ত পুড়ে মারার হুমকি দেয়। এ সময় তোফাজ্জল মাল জ্বলন্ত সিগারেট বিষ্ণুপদ মণ্ডলের হাতে চেপে ধরলে তাঁর জামা পুড়ে যায়।

নির্যাতিত বিষ্ণুপদ মণ্ডল বলেন, আমার বাবার দাদা হচ্ছেন সুধন্য মণ্ডল। তাঁর নামেই এ গ্রামের নাম সুধন্য মণ্ডলের কান্দি। এ গ্রামে বর্তমানে আমিই একমাত্র হিন্দু পরিবার। আমার সম্পত্তি দখল এবং আমাকে উৎখাত করার জন্য তারা আমাকে নানা হুমকি-ধমকি দিচ্ছে।

এ ব্যাপারে হোসেন মোড়ল ও তোফাজ্জল হোসেন মালের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

জাজিরা উপজেলার বড়কান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এস এম সিরাজ বলেন, ঘটনাটি জানার পর আমি দুই পক্ষকে জমির কাগজপত্র নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে আসতে বলেছিলাম। কিন্তু হোসেন মোড়ল ও তোফাজ্জল মাল আসেনি। তারা বলেছে চেয়ারম্যানকে মানি না, সে ক্ষেত্রে আমার কী করার আছে। সংখ্যালঘু হওয়ায় তারা নির্যাতিত হবে এটা দুঃখজনক। আমি তাকে আইনের আশ্রয় নিতে বলেছি। জাজিরা থানার ওসি সৈয়দ আবদুল্লাহ বলেন, এ ব্যাপারে আইজিপির নির্দেশ ছাড়া আমি কোনো কথাই বলব না। থানায় কোনো অভিযোগ আসেনি। সাংবাদিকরা থানার জিডির কপি দেখালে তিনি এসআই মো. আবদুস সালামের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। পরে জিডি তদন্তের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত এএসআই শফিক বলেন, শনিবার জিডি হয়েছে। আমরা তদন্তে যাব। তদন্তসাপেক্ষে আমরা অ্যাকশনে যাব।

কালের কণ্ঠ, ১১ মে, ২০১০, লিংক

No comments:

Post a Comment