পূর্ণিমা ভোটার হলেও ভোট দিতে সিরাজগঞ্জ যাচ্ছেন না

সিরাজগঞ্জ ও উল্লাপাড়া প্রতিনিধি
জোট সরকারের আমলে পৈশাচিক নির্যাতনের শিকার পূর্ণিমা শীল এবার ভোটার হয়েছেন; কিন্তু নিরাপত্তার কারণে তিনি ভোট দিতে এলাকায় আসবেন না। শুধু পূর্ণিমাই নন, নির্মম এ ঘটনার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কায় তার পরিবারের অন্য সদস্যরাও ভোটকেন্দ্রে যাবেন কি-না তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দে ভুগছেন। বর্তমানে পূর্ণিমা ও তার পরিবারের সদস্যরা ঢাকায় অবস্থান করলেও গত সপ্তাহে তার মা এলাকায় এসেছেন। তিনি মহাজোট প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাইছেন। তার ভাষায়, মেয়ের সম্ভ্রমহানির সুষ্ঠু বিচারের পরিবেশ সৃষ্টি করতেই ওই প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় নেমেছেন।
দেশজুড়ে চাঞ্চল্যকর পূর্ণিমা ধর্ষণ মামলার অভিযুক্ত আসামিরা এখন আদালত থেকে জামিনে মুক্ত। আসন্ন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীকে জয়ী করতে প্রচারণায় ব্যস্ত অভিযুক্তরাও এখন নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে পূর্ণিমার পরিবারকে- এমন অভিযোগ রয়েছে।
২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নির্বাচনী কাজে অংশ নেওয়ার অভিযোগে উল্লাপাড়া উপজেলার পূর্ব দেলুয়া গ্রামের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী পূর্ণিমা শীলকে সম্ভ্রম হারাতে হয়। ৮ অক্টোবর সন্ধ্যায় স্থানীয় চারদলীয় জোটের কতিপয় নেতা-কর্মী পূর্ণিমা শীলকে বাড়ি থেকে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে তার ওপর পাশবিকতা চালায়। এ সময় তাদের হামলায় আহত হন তার বাবা অনীল শীলসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা। এ ব্যাপারে পূর্ণিমার বাবা অনীল চন্দ্র শীল আদালতে একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করলেও জোট সরকারের আমলে মামলাটি পরিচালনায় নানাভাবে বিঘ্নিত হয়েছে। মামলার প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত শেষে ১৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দিলেও পরে বিএনপিদলীয় সাংসদ এম আকবর আলীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে মামলাটি পুনর্তদন্তের জন্য সিআইডি পুলিশে স্থানান্তর করা হয়।
তদন্ত শেষে পুলিশ আরো ৫ জনের বিরুদ্ধে একটি সম্পূরক চার্জশিট জমা দেয়। এতে আওয়ামী লীগের সাবেক সাংসদ আবদুল লতিফ মির্জা, আওয়ামী লীগ নেতা গাজী শফিকুল ইসলাম শফি, সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট আবদুর রহমান মীর, শহিদুল ইসলাম ও পৌর চেয়ারম্যান মারুফ বিন হাবিবকে চার্জশিটে আসামির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এরপর দীর্ঘদিন মামলাটি স্থবির থেকেছে।
সর্বশেষ জোট সরকারের আমল শেষে বিচারিক আদালত সিআইডি পুলিশের সম্পূরক চার্জশিট অগ্রাহ্য করে ১৭ জনের বিরুদ্ধে দেওয়া চার্জশিটটি আমলে নেন। পরে বিভিন্ন সময়ে অভিযুক্ত আসামিরা আদালত থেকে জামিন পেয়েছে। বর্তমানে জামিনপ্রাপ্ত আসামিরা মামলাটি উঠিয়ে নেওয়ার জন্য ওই পরিবারকে চাপ দিচ্ছে বলে অভিযোগ পূর্ণিমার ভাই প্রভাত শীলের।

সমকাল, ২৪ ডিসেম্বর, ২০০৮

No comments:

Post a Comment