প্রথম আলো ডেস্ক | তারিখ: ০৬-০৩-২০১৩
খুলনার কয়রা উপজেলায় গতকাল মঙ্গলবার সকালে বিএনপির হরতালের মিছিল থেকে সংখ্যালঘু পাঁচ হিন্দু বাড়ির ১০টি ঘরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। একই দিন পাবনায় মন্দিরে হামলা ও প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়। সোমবার রাতে নোয়াখালীসহ অন্তত ছয় জেলায় মন্দিরে আগুন ও প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়।
আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক, আঞ্চলিক কার্যালয় ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
খুলনা: সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হরতালের সমর্থনে কয়রা উপজেলার চাঁদালী সেতুর কাছ থেকে মিছিল নিয়ে আমাদী বাজারের ২০টির বেশি দোকান ভাঙচুর করা হয়। পরে বাজারের ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ ধাওয়া দিলে তারা পিছু হটে বাজারের পাশে হিন্দু-অধ্যুষিত রজকপাড়ায় ঢুকে অমিয় দাস, অপূর্ব দাস, সুবোধ দাস, কার্তিক দাস ও সোনা দাসদের পূজার ঘরসহ মোট ১০টি ঘরবাড়িতে আগুন দেয়। হামলাকারীরা বাড়ির বাসিন্দাদের মারধর ও মালামাল লুট করে। ঘটনাস্থল থেকে আবু সাঈদ ও লিটন গাজী নামের দুজনকে আটকের পর পুলিশে সোপর্দ করা হয়।
অমিয় দাস প্রথম আলোকে জানান, ‘উরা আমাগে বাড়ি ঢুকে আমার অসুস্থ মা, স্ত্রী ও তিন মেয়েরে মারধর করে। বাড়ির দুটো টেলিভিশন, টাকাপয়সা ও সোনাদানা নিয়ার পরেও উগে সবাইরি দালানের মধ্যি ঢুকোয়ে গ্রিলি তালা দিয়ে ঘরে আগুন লাগায়ে দেয়। শুধু ঘরে না, আমাগে ঠাকুরঘরও পুড়ায়ে দেছে। এখন আমাগে দুপরে খাবারও কিছু নাই।’
আমাদী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আমির আলী বলেন, ‘হরতাল-সমর্থক বিএনপি-জামায়াতের কয়েক শ কর্মী-সমর্থক আমাদী বাজারের বেশ কয়েকটি দোকানে ভাঙচুর করেন। পরে রজকপাড়ায় বাড়িঘর জ্বালিয়ে লুটপাট করেন।’
দোকান ভাঙচুর ও ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগে তাঁদের নেতা-কর্মী জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুর বলেন, ‘মিছিল করে ফেরার পথে রজকপাড়ার লোকজন আমাদের দুই কর্মীকে আটকে মারধর করে পুলিশে দেয়।’
দোকানে ভাঙচুর ও হিন্দুদের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে কয়রা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর খায়রুল কবির জানান, এ ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে।
পাবনা: সকালে আটঘরিয়া উপজেলার বাড়ইপাড়া গ্রামের বারোয়ারি দুর্গামন্দিরে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে একদন্ত বাজার থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা হরতালের সমর্থনে মিছিল বের করেন। মিছিলটি মন্দিরের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় মিছিলকারীরা মন্দিরটিতে হামলা চালিয়ে টিনের বেড়া ভাঙচুর করে।
নোয়াখালী: চাটখিল উপজেলার করটখিল গ্রামের দেবনাথ বাড়ির একটি মন্দিরে গত সোমবার রাত একটার দিকে অগ্নিসংযোগ করে দুষ্কৃৃতকারীরা। পরে আশপাশের লোকজনের সহায়তায় আগুন নেভানো হয়।
গোপালগঞ্জ: সোমবার রাত পৌনে আটটার দিকে কোটালীপাড়া উপজেলার লাকিরপাড় গ্রামের সাতকান্দি সর্বজনীন কালীমন্দিরে আগুন দেয় দুষ্কৃতকারীরা। আশপাশের লোকজন প্রায় আধা ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নেভায়। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে উপজেলা জামায়াতের আমির মান্নান শেখসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বরিশাল: গত সোমবার রাত তিনটার দিকে উজিরপুর উপজেলার গুঠিয়া এলাকায় মালাকার বাড়ির মন্দিরের বারান্দায় থাকা খড়ে অগ্নিসংযোগ করে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।
নাটোর: সিংড়া উপজেলার সোয়াইড় উপজেলায় সোমবার রাতে একদল দুষ্কৃতকারী কালীমন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুর করে। পরে খড়ের গাদায় আগুন দেয়।
বাউফল (পটুয়াখালী): সোমবার রাত ১১টার দিকে উপজেলার মাধবপুর বাজার সর্বজনীন দুর্গামন্দিরে আগুন দেওয়া হয়। পরে বাজারের লোকজন এসে দ্রুত আগুন নেভায়। এ ঘটনায় বাউফল থানায় মামলা হয়েছে।
সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম): সোমবার রাত তিনটার দিকে একদল দুষ্কৃতকারী সাতকানিয়া সদর উপজেলার পূর্ব রূপকানিয়া নাথপাড়ায় কালীমন্দির আগুনে পুড়িয়ে দেয়। আগুনে মন্দিরের অন্তত ১০টি মূর্তি ধ্বংস হয়ে গেছে। মন্দিরের পাশের একটি খড়ের গাদায়ও আগুন দেওয়া হয়। জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দক্ষিণ) মো. ইলতুৎমিশ বলেন, ‘মন্দিরে কারা আগুন দিয়েছে, আমরা তা অনুসন্ধান করছি।’
প্রথম আলো
No comments:
Post a Comment