শাহবাগে শিক্ষার্থীদের ৩ ঘণ্টা অবরোধ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, এপ্রিল ০৫ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে ‘ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের’ বাড়িতে লুটপাট ও নির্যাতনের ঘটনায় চার দফা দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে প্রায় তিন ঘণ্টা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের ছাত্ররা।

শিক্ষার্থীরা বৃহস্পতিবার সকালে হল থেকে মিছিল করে পুরো ক্যাম্পাস ঘুরে শাহবাগে যায়। এরপর বেলা পৌনে ১১টার দিকে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়ে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। ফলে শাহবাগ থেকে মৎস্য ভবন, বিশ্ববিদ্যালয়, ফার্মগেইট ও সায়েন্স ল্যাবরোটরিমুখী সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক এবং পুলিশ কর্মকর্তাদের অনুরোধে তারা আবরোধ তুলে নিলে বেলা ১টা ৪০ এ যান চলাচল আবার শুরু হয়।

এর আগে বুধবার রাতেও একই অভিযোগে প্রায় এক ঘণ্টা শাহবাগ এলাকা অবরুদ্ধ করে রাখে জগন্নাথ হলের ছাত্ররা।

এদিকে রাজধানীর গুলশান লেক সংলগ্ন কড়াইল বস্তি উচ্ছেদ করায় বস্তিবাসী সকালে মহাখালী থেকে গুলশান এক নম্বর মোড় পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করলে ওই এলাকাতেও যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

শহরের দুটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় যান চলাচল বন্ধ থাকায় পুরো শহরে সৃষ্টি হয় অসহনীয় যানজট। অফিসগামী যাত্রী ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা সকালে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েন।

শহবাগ এলাকায় বিক্ষোভে অংশ নেওয়া এক শিক্ষার্থী জানান, গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার ফতেহপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে একটি নাটক মঞ্চস্থ হয়। ওই নাটকে ইসলাম ধর্মকে কটাক্ষ করা হয়েছে- এমন অভিযোগ এনে কয়েকটি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক সংগঠনের কর্মী-সমর্থকরা স্থানীয় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কয়েকটি বাড়িতে লুটপাট চালায় এবং তাদের ওপর নির্যাতন করে।

শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা জগন্নাথ হলের আবাসিক ছাত্র মানিক রক্ষিত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কিছুদিন আগে চট্টগ্রামের হাটহাজারিতে একই রকম ঘটনা ঘটেছে। এবার ঘটেছে সাতক্ষীরায়। এভাবে বারবার কেন সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে? সরকার কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না?”

আরেক শিক্ষার্থী অনন্ত ভৌমিক অভিযোগ করেন, বারবার সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন হলেও মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান এর কোনো প্রতিবাদ করছেন না।

বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের হাতে এ সময় বিভিন্ন বক্তব্য লেখা প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। এর একটিতে লেখা ছিল- ‘মিতা রানী আমার নাম, এই কি আমার অপরাধ?’

অ্যাকাউন্টিং শেষ বর্ষের ছাত্র মানিক রক্ষিত বলেন, তাদের দাবি চারটি। কালিগঞ্জে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। হামলার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। সারা দেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং এসব বিষয়ে প্রশাসনকে সক্রিয় অবস্থান নিতে হবে।

পুলিশের রমনা জোনের সহকারী কমিশনার এস এম শিবলী নোমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জগন্নাথ হলের শিক্ষার্থীরা সংখ্যালঘু নির্যতনের প্রতিবাদে রাস্তা অবোরধ করে রাখে। তবে তারা যানবাহন ভাংচুর করেনি।”

বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ঘটনাস্থলে এসে শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে তাদের অবরোধ তুলে নিতে অনুরোধ করেন।

তিনি বলেন, “সাতক্ষীরায় যে ঘটনা ঘটেছে তা লজ্জাকর, বেদনাদায়ক। তারা যে দলের সদস্য হোক না কেন- এই ঘটনা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। দোষীদের শাস্তির আওতায় নেওয়া হোক- এটা আমাদের দাবি। আমরা আশা করি, সরকার এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেবে।”

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে উপাচার্য বলেন, “এই সড়ক দিয়ে পুরো ঢাকার মানুষ চলাচল করে। আমি অনুরোধ করবো- তোমরা অবরোধ তুলে নাও। তারপরও আমাদের অন্তহীন প্রতিবাদ চলবে।”

পুলিশের রমনা জোনের সহকারী উপ কমিশনার নুরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা তাদের সড়ক থেকে সরে যেতে অনুরোধ করেছি। বলেছি, তারা যেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে স্মারকলিপি দেয়। সেখানে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি তাদের স্মারকলিপি নেবেন।”

সাতক্ষীরার ঘটনায় পুলিশ সুপার ও সদর থানার ওসিকে ইতোমধ্যে প্রত্যাহার করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

উপাচার্য ও পুলিশ প্রশাসনের অনুরোধে বেলা দেড়টার দিকে অবরোধ তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেয় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

মানিক রক্ষিত বলেন, “আমরা শাহবাগ থেকে সরে যাচ্ছি। তবে আমাদের আন্দোলন চলবে।”

শিক্ষার্থীরা সরে যাওয়ার পর বেলা ১টা ৪০ থেকে যান চলাচল আবার স্বাভাবিক হয়।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/প্রতিনিধি/এলএইচ/এএসটি/জেকে/১৩৪৫ ঘ.

সূত্র: bdnews24.com

No comments:

Post a Comment