সমকাল প্রতিবেদক
দুর্বৃত্তরা রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরে ঢুকে ২শ' ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও সাড়ে চার লাখ টাকা চুরি করেছে। গতকাল রোববার ভোররাতে মন্দিরের তালা ভেঙে এ দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মন্দিরের এক নিরাপত্তাকর্মীসহ ৪ জনকে আটক করেছে। মন্দিরের পূজা উদযাপন কমিটির নেতারা জানান, ঢাকেশ্বরী মন্দিরে ইতিপূর্বে লুটপাটের ঘটনা ঘটলেও এত বড় চুরির ঘটনা আর কখনোই ঘটেনি। এ দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনায় মন্দির সংশ্লিষ্ট লোকজন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। এদিকে এ দুর্ধর্ষ চুরির পর গতকাল ঢাকেশ্বরী মন্দিরে কোনো পূজা করেননি পুরোহিতরা। মন্দিরে চুরির খবর পেয়েই মন্দির কমিটির লোকজন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। মন্দিরের ভক্ত ও পূজা কমিটির নেতারা অবিলম্বে এ চুরির সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার ও লুট হওয়া মালামাল উদ্ধারের দাবি জানিয়েছেন।
মন্দিরের লোকজন জানান, শনিবার রাত ৯টার দিকে পুরোহিত রতন চক্রবর্তী ও নিত্য গোপাল চক্রবর্তী পূজা শেষ করে মন্দিরের ভেতরের গেট বন্ধ করে যান। বরাবরের মতো রোববার ভোর সাড়ে ৬টায় তারা মন্দিরের কলাপসিবল গেট খুলতে এসে দেখেন গেটের চারটি তালার মধ্যে তিনটি তালাই নেই। অপর তালাটিরও কিছু অংশ লোহা
কাটার যন্ত্র দিয়ে কেটে ফেলা হয়েছে। তারা মন্দিরের ভেতরে ঢুকে দেখেন পুরো কক্ষটিই তছনছ করা। দেবীর অঙ্গসজ্জার কাজে ব্যবহৃত কোনো স্বর্ণালঙ্কারই নেই। ৬টি প্রণাম বাক্স ভাঙাচোরা অবস্থায় পড়ে আছে। দেবীর ঘরে এমন দৃশ্য দেখে দুই পুরোহিতই অবাক হন। তারা দ্রুত মন্দির কমিটির লোকজনকে খবর দেন। কমিটির লোকজনের কাছে খবর পেয়ে সকালে পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা ঘটনাস্থলে আসে।
মন্দিরের ব্যবস্থাপক তপন ভট্টাচার্য্য সাংবাদিকদের জানান, দুর্বৃত্তরা মন্দির থেকে প্রায় ২০০ ভরি স্বর্ণ, নগদ প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা এবং ৫-৬ ভরি রৌপ্য চুরি করেছে।
মন্দিরের নিরাপত্তায় ছিল পুলিশের তিন সদস্য :ঢাকেশ্বরী মন্দিরের নিরাপত্তায় নিয়মিতই পুলিশ পাহারা দেয়। শনিবার রাতেও পুলিশের তিনজন সদস্য ছিলেন মন্দিরের নিরাপত্তা রক্ষায়। ওই রাতে তাদের মন্দিরের মূল গেটে দায়িত্ব পালন করার কথা ছিল। এছাড়াও রাতে ঢাকেশ্বরী মন্দিরের আশপাশের রাস্তায় রাতভর থাকে পুলিশের টহল গাড়ি। পুলিশ ছাড়াও মন্দিরের নিজস্ব নিরাপত্তাকর্মী রয়েছে। বেসরকারি একটি সিকিউরিটি প্রতিষ্ঠানের ৬ জন নিরাপত্তা কর্মী মন্দিরে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে থাকেন বলে মন্দির সংশ্লিষ্ট লোকজন জানায়। শনিবার রাতে নিরাপত্তাকর্মী আনিসুর রহমান ছিলেন দায়িত্বে। কিন্তু পুলিশ ও নিরাপত্তা কর্মীদের এত নিরাপত্তার পরও মন্দিরের অন্তত ৩টি গেট পার হয়ে শক্তিশালী লোহার গেটের তালা ভেঙে চুরির ঘটনায় উদ্বিগ্ন মন্দির সংশ্লিষ্ট লোকজন। মন্দিরের কয়েকজন ভক্ত ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এত বড় ঘটনার সঙ্গে নিশ্চয় মন্দিরের নিরাপত্তাকর্মীসহ সংশ্লিষ্ট লোকজন জড়িত। তা না হলে অনায়াসে এত বড় চুরির ঘটনা ঘটতে পারে না।
তবে ঢাকা মহানগর পুলিশের লালবাগ জোনের উপ-কমিশনার খুরশিদ হোসেন ভক্তদের এসব সন্দেহ উড়িয়ে না দিলেও তিনি সমকালকে বলেন, পুলিশ মন্দিরের বাইরের গেটে ডিউটি দেয়। শনিবার রাতেও ঢাকেশ্বরী মন্দিরের প্রথম গেটে পুলিশ ডিউটি ছিল। পুলিশ যেখানে দায়িত্ব পালন করেছে সেখান থেকে অনেক ভেতরে চুরির ঘটনা ঘটেছে। ফলে পুলিশের কিছুই করার ছিল না। তবে রাতে দায়িত্ব পালনকারী একজন নিরাপত্তাকর্মী ও মন্দিরের তিনজন পরিচ্ছন্নতা কর্মীকে আটক করা হয়েছে। তারা ওই রাতে মন্দিরের ভেতরেই ছিল। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
এদিকে শনিবার রাতে দায়িত্ব পালনকারী নিরাপত্তাকর্মী আনিসুর জানায়, তিনি রাতভরই মন্দিরের মূল গেটে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ সময়ের মধ্যে মন্দিরের ভেতর কাউকে ঢুকতে দেখেননি। তবে রাত ১২টার দিকে তার ক্ষুধা লাগলে তিনি মন্দিরের গেটের একটু দূরে বটতলা মোড়ে খেতে যান। এ সময়ের মধ্যে কেউ মন্দিরে ঢুকেছে কি-না তা তিনি দেখেননি।
ঢাকেশ্বরী মন্দির ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সর্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট তাপস পাল সমকালকে বলেন, ঢাকেশ্বরী মন্দিরে এত বড় চুরি আর কখনই হয়নি। এ ধরনের চুরির ঘটনায় তারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। তিনি জানান, গত মাসে বরদেশ্বরী কালী মন্দির ও জয়কালী মন্দিরেও চুরির ঘটনা ঘটে। এরই ধারাবাহিকতায় জাতীয় মন্দিরেও চুরি হলো বলে তিনি মন্তব্য করেন।
চকবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আলী সমকালকে বলেন, এ ঘটনায় মন্দির কর্তৃপক্ষ থানায় একটি মামলা করেছে। পুলিশ আটক চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে চুরির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
খবর ও ছবি: সমকাল
No comments:
Post a Comment