সমকাল প্রতিবেদক
পুরান ঢাকার সূত্রাপুরে আওয়ামী লীগ পরিচয়ধারী সন্ত্রাসীরা গতকাল কয়েকটি হিন্দু-মুসলমান পরিবারের ৩২ কাঠা সম্পত্তি দখলের চেষ্টা চালায়। গতকাল বেলা ১টায় রেবতী মোহন দাস রোডে এ ঘটনা ঘটে। দখল করতে যাওয়াদের সঙ্গে ওই এলাকার আওয়ামী লীগের নেতাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। পরে স্থানীয় লোকজনের ধাওয়া খেয়ে দখলদার ক্যাডাররা ফাঁকা গুলি ছুড়ে সূত্রাপুর থানায় আশ্রয় নেয়। কিন্তু পুলিশ তাদের গ্রেফতার করেনি।
এলাকার বাসিন্দারা জানান, দীর্ঘদিন স্থানীয় সন্ত্রাসীরা জমিটি দখলের পাঁয়তারা করছে। ক্ষমতাসীনদের সহায়তায় এর আগেও একাধিকার হামলা চালানো হয়েছে। কিছু পরিবারকে উচ্ছেদও করা হয়েছে। তবে হামলাকারীদের দাবি, তাদের সম্পত্তিতে অবৈধভাবে পূজামণ্ডপ তৈরি করার সময় বাধা দিতে গেলে স্থানীয়রা বরং তাদের ওপরই হামলা করে। যারা বর্তমানে ওই জমিতে বসবাস করছে তাদের বৈধ কাগজপত্র নেই।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার দুপুরে আট-দশ সন্ত্রাসী রেবতী মোহন দাস রোডের ৮৮, ৯৬ ও ৯৮ নম্বর প্লট দখল করতে যায়। বাড়ির বাসিন্দাদের জায়গাটি ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয় তারা। চলে না গেলে গুলি করার ভয় দেখায় সন্ত্রাসীরা। ভেতরে কোনো মূর্তি রাখা হয়েছে কি-না তাও জানতে চায়। পরে স্থানীয় বাসিন্দারা সংঘবদ্ধ হয়ে তাদের ধাওয়া করে। এ সময় তারা ফাঁকা গুলি ছুড়তে ছুড়তে সূত্রাপুর থানায় গিয়ে আশ্রয় নেয়। পরে স্থানীয় জনতা থানার সামনে অবস্থান নেয় এবং সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের দাবি জানাতে থাকে। কিন্তু পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
এলাকার বাসিন্দারা জানান, ওই জায়গায় ওইসব পরিবার দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত মার্চ মাসে পুলিশ ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক নেতার প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ৪টি পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়। বাকি প্রায় ১৪টি পরিবারকে উচ্ছেদ করার জন্য বিভিন্ন সময় হুমকি দেওয়া হচ্ছিল।
স্থানীয় বাসিন্দা শিক্ষিকা ডালিয়া ইমাম জানান, ওই সম্পত্তির একটি অংশে আগে থেকেই মন্দির ছিল। পূজা উপলক্ষে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন মন্দিরের পাশে পূজামণ্ডপ তৈরির জন্য জায়গাটি পরিষ্কার করে। এর জের ধরে নাহিদ, আসাদ মাহমুদ, কাইয়ুম ও দীপুর নেতৃত্বে ৮-১০ সন্ত্রাসী পূজামণ্ডপ তৈরি না করার হুমকি দেয়। এ সময় তারা মূর্তি ভাংচুর করে।
ওই জমির বাসিন্দা রানী দাস বলেন, সন্ত্রাসীরা দীর্ঘদিন ধরে পুরো জায়গা দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতার সঙ্গে সব-সময় চলাফেরা করে তারা। গতকাল হামলার পর ধাওয়া খেয়ে সন্ত্রাসীরা অস্ত্রসহ থানায় আশ্রয় নিলেও পুলিশ তাদের জামাই আদরে রেখেছে। থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি। সন্ত্রাসীরা গতকাল মণ্ডপের মূর্তি ভেঙে ফেলেছে।
সম্পত্তির দাবিদার মৃত মাহবুব আলীর সন্তান আসাদ মাহমুদ বলেন, বায়নাসূত্রে তারা ওই ৩২ কাঠা সম্পত্তির বৈধ মালিক। এক বছর আগে তারা জনৈক আমির আলী জামালের কাছ থেকে এটি ক্রয় করেন। তবে তারা দখল বুঝে নিতে পারেননি। পরে আদালত থেকে তারা রায় পান। রায়ের পর ওই সম্পত্তির চারপাশে দেয়াল নির্মাণও করেন। কিন্তু তারা পুরো জমির দখল নিতে পারছিলেন না।
গতকাল ওই সম্পত্তিতে যাওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, নিজেদের জায়গায় যে কোনো সময় যাওয়ার অধিকার তাদের আছে। তাদের জায়গায় বর্তমান বাসিন্দারা মন্দির করে মূর্তি রেখেছে। এর প্রতিবাদ করতে এবং বাকি সম্পত্তি ছেড়ে দেওয়ার কথা বলতে গিয়েছিলেন তারা।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, ৮০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নিজাম উদ্দিন নিজামের সঙ্গে আসাদ মাহমুদ ও আরশেদ মাহমুদের মামাতো-ফুফাতো ভাই সম্পর্ক। গতকালের ঘটনায় নিজামের ভাই আবদুল কাইয়ুম সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়। তার আশ্রয়েই এ বাড়িটি দখল করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে সূত্রাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোফাজ্জল হোসেন বলেন, যারা ওই জমিতে বসবাস করছেন তাদের বৈধ কাগজপত্র নেই। আদালতের সিদ্ধান্তে আসাদ মাহমুদ গং জমির প্রকৃত মালিক। তাদের দখলে রয়েছে ২০ কাঠা। বাকি জমিতে ৪/৫টি হিন্দু পরিবার ছাড়াও কয়েকটি মুসলমান পরিবারও রয়েছে। আসাদ মাহমুদ গংয়ের বৈধ মালিকানার ব্যাপারে তিনি অবগত আছেন।
ওসি আরও জানান, হামলার হাত থেকে রক্ষা পেতে লাইসেন্সধারী অস্ত্র থেকে এক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়েছে। অবৈধভাবে যারা জমিতে বসবাস করছেন তারা এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্টের পাঁয়তারা করছে। থানায় আশ্রয় না নিলে বিক্ষুব্ধ লোকজন আসাদ মাহমুদকে মেরে ফেলত।
সমকাল, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০০৯
No comments:
Post a Comment