অর্পিত সম্পত্তি বাংলাদেশি মালিকদের ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে

প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী আমলারাই পেয়েছেন সমস্যা চিহ্নিতকরণের দায়িত্ব
কাজী আব্দুল হান্নান

অর্পিত সম্পত্তি বাংলাদেশি মালিকদের ফেরত দেওয়া হচ্ছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শাসনামলেই দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত এ সমস্যাটি নিরসনের প্রক্রিয়া শুরু হবে। এ উদ্দেশ্যে ২০০১ সালে প্রণীত আইন অনুযায়ী প্রত্যর্পণযোগ্য সম্পত্তির তালিকা প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ ট্রাইব্যুনাল ও আপিল ট্রাইব্যুনাল গঠনেরও প্রস্তুতি চলছে।

প্রত্যর্পণযোগ্য সম্পত্তির তালিকা প্রকাশ করলে কোনো প্রশাসনিক জটিলতা সৃষ্টির আশঙ্কা আছে কি-না তা খতিয়ে দেখতে এরই মধ্যে ভূমি মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টির স্থায়ী নিষ্পত্তির পথে এতদিন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছিল সরকারি কর্মকর্তাদের একটি অংশ। আমলাতন্ত্রের সেই অংশকেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে যেসব সমস্যা হতে পারে সেগুলো চিহ্নিত করতে।

আইন উপদেষ্টা এএফ হাসান আরিফ সমকালকে বলেছেন, প্রশাসনিক জটিলতা সৃষ্টির আশঙ্কা থাকলে সেক্ষেত্রে ২০০১ সালের আইনটিতে প্রয়োজনীয় সংশোধন করে হলেও সরকার এ প্রক্রিয়া শুরু করতে আগ্রহী। এজন্য যেসব সমস্যা সৃষ্টির আশঙ্কা এতদিন করা হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, পাকিস্তান আমলের ‘এনিমি প্রপার্টি’ নামে বহুল পরিচিত ‘শত্রু সম্পত্তি’ এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর পাকিস্তানে চলে যাওয়া অবাঙালিদের পরিত্যক্ত সম্পত্তি একত্র করে অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে সরকারের কর্তৃত্বে আনা হয়।

আওয়ামী লীগ সরকার দেশের অর্পিত সম্পত্তি ইস্যুর স্থায়ী সুরাহা করতে ২০০১ সালে ‘অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন’ নামে একটি আইন প্রণয়ন করে। আইনটি বলবৎ হওয়ার তারিখ ওই বছর ১১ এপ্রিল থেকে ১৮০ দিনের মধ্যে জেলাভিত্তিক প্রজ্ঞাপন জারি করে প্রত্যর্পণযোগ্য অর্পিত সম্পত্তির তালিকা প্রকাশের বিধান ছিল। আইনটিতে স্থাভাবে বন্দোবস্ত দেওয়া কিংবা প্রত্যর্পণের অনুপযুক্ত ঘোষিত অর্পিত সম্পত্তি তালিকার বাইরে রাখার নির্দেশ রয়েছে। এছাড়া অবশিষ্ট সব অর্পিত সম্পত্তিকেই প্রত্যর্পণযোগ্য বিবেচনা করার নির্দেশ আছে। তালিকার কোনো সম্পত্তির মালিকানা নিয়ে কারো কোনো আপত্তি থাকলে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর সেখানে বিষয়টি নিষ্পত্তির ব্যবস্থা রয়েছে। এরই ভিত্তিতে স্থায়ীভাবে এসব সম্পত্তির মালিকানা নিষ্পত্তির উদ্দেশ্যে তালিকাটি প্রণয়নের কাজ শুরু হয়। কিন্তু সারাদেশের প্রত্যর্পণযোগ্য সম্পত্তির তালিকা প্রস্ট‘ত হওয়ার পরও চারদলীয় জোট সরকার তা আর নির্ধারিত সময়ে প্রকাশ করেনি। এমনকি প্রক্রিয়াটি থামিয়ে দিয়ে জোট সরকার ২০০২ সালের শেষ দিকে আইনটিকে এমনভাবে সংশোধন করে, যার ফলে এটি অকার্যকর হয়ে যায়। মূল আইনের বিধান অনুযায়ী ২০০১ সালের ১১ এপ্রিল অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনটি কার্যকর হওয়ার পর থেকে অর্পিত সম্পত্তির ইজারা দেওয়া বন্ধ ছিল। আইনের ১৪ (১) উপধারা পরিবর্তন করে ২০০২ সালে আবারো অর্পিত সম্পত্তি জেলা প্রশাসকের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ইজারা দেওয়ার ক্ষমতা তার হাতে অর্পণ করা হয়।
একইসঙ্গে প্রত্যর্পণযোগ্য অর্পিত সম্পত্তির তালিকা প্রকাশের জন্য নির্ধারিত ১৮০ দিনের বিধানটি তুলে দিয়ে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জেলাভিত্তিক তালিকা প্রস্তুত করে প্রজ্ঞাপন জারির বিধান করা হয়। এর মধ্যদিয়ে আইনটি বলবৎ থাকার পরও ‘সরকার মনে করলে’ প্রত্যপর্ণের প্রক্রিয়া শুরুর বিধান সংযোজন করায় বাস্তবে আইনটি অকার্যকর হয়ে পড়ে। এমনকি এ অবস্থায় অর্পিত ঘোষিত হওয়ার পর আদালত থেকে ডিক্রি পাওয়া সম্পত্তি হস্তান্তরও অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষিদ্ধ হয়ে যায়। আইনটি বলবৎ হওয়ার পর থেকে প্রত্যর্পণযোগ্য সম্পত্তি এ হস্তান্তর, দান বা বন্ধকি প্রদানের ক্ষমতা রহিত হয়ে আছে।

এ পরিস্থিতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রত্যর্পণযোগ্য সম্পত্তির তালিকাটি আইনের বিধান অনুসারে গেজেট আকারে প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছে। ২০০১ সালে প্রণয়ন করা আইন অনুযায়ী তালিকাটির দুটি অংশ থাকবে। প্রত্যর্পণযোগ্য জনহিতকর সম্পত্তির পৃথক তালিকা হবে। জনহিতকর সম্পত্তি দেবোত্তর হলে তার সেবায়েত, মঠ হলে তার মোহন্ত, শ্মশান বা সমাধিক্ষেত্র কিংবা দাতব্য প্রতিষ্ঠান অথবা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হলে এর পরিচালনা কমিটির কাছে হস্তান্তরযোগ্য হবে।

তালিকা প্রকাশের পর দাবিদার ব্যক্তি সম্পত্তি হস্তান্তরের জন্য ৯০ দিনের মধ্যে ট্রাইব্যুনালের কাছে উপযুক্ত প্রমাণসহ আবেদন করতে পারবেন। জনহিতকর প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে আবেদনের সময়সীমা হবে ১৮০ দিন। তবে এ আবেদন করতে হবে জেলা প্রশাসকের কাছে।

প্রত্যর্পণযোগ্য সম্পত্তির দাবিদারের কাছ থেকে আবেদন পাওয়ার পর ৩০ দিনের মধ্যে ট্রাইব্যুনাল কাগজপত্র পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত দেবে। দাবি গ্রহণযোগ্য হলে ট্রাইব্যুনাল সরকারকে নোটিশ দেবে। প্রয়োজনে উভয় পক্ষকে শুনানি করে মোট ১৮০ দিনের মধ্যে রায় দেবে। রায় অনুযায়ী ৪৫ দিনের মধ্যে জেলা প্রশাসন সম্পত্তি হস্তান্তর করবে। সঠিক দাবিদার না পাওয়া গেলে সম্পত্তি সরকারি খাস তালিকায় চলে যাবে।

যেসব অর্পিত সম্পত্তি নিয়ে আদালতে মামলা চলছে সেসব সম্পত্তি প্রত্যর্পণের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হলে গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর সেসব মামলা আপনাআপনি অকার্যকর হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে সম্পত্তির দাবিদারকে ট্রাইব্যুনালে আবেদন করতে হবে।

আইন অনুযায়ী অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ ট্রাইব্যুনাল গঠিত হবে প্রতিটি জেলায়। ক্ষেত্রবিশেষে কোনো জেলায় অতিরিক্ত ট্রাইব্যুনালও স্থাপন করা হতে পারে। জেলা জজ বা অতিরিক্ত জেলা জজ পর্যায়ের বিচারককে ট্রাইব্যুনালের বিচারক নিয়োগ করা হবে। আবার ৬০ বছরের বেশি বয়স হয়নি এমন কোনো অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজকেও চুক্তির ভিত্তিতে ট্রাইব্যুনালের বিচারক নিয়োগ করা হতে পারে। ট্রাইব্যুনালের রায় বা ডিক্রিতে সন্তুষ্ট না হলে আপিলের সুযোগ থাকবে। অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আপিল টাইব্যুনাল নামের এ আদালতে বিচারক নিয়োগ করা হবে প্রধান বিচারপতির পরামর্শে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হওয়ার যোগ্য কোনো ব্যক্তি কিংবা অবসরপ্রাপ্ত কোনো বিচারপতিকে এ পদে নিয়োগ করা হবে।

আইন মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ট্রাইব্যুনালে নিয়োগের প্রস্তুতি চলছে। ভূমি মন্ত্রণালয় প্রত্যর্পণযোগ্য সম্পত্তির তালিকা প্রকাশের আগে সার্বিক পরিস্থিতিতে এর পর্যালোচনা করছে। পর্যালোচনা শেষ হলেই ট্রাইব্যুনাল স্থাপনের লক্ষ্যে বিচারক নিয়োগের কাজ শুরু হবে।

সমকাল, ২৩ অক্টোবর, ২০০৮

2 comments:

  1. শালা মালাউনের বাচ্চা, তোগোরে জমি দিব, একেবারে গোয়া দিয়া জমি ঢুকায়া দিবনে।

    ReplyDelete