সমকালীন প্রসঙ্গ
অজয় রায়
অজয় রায়
এ লেখাটি কিছুটা ব্যক্তিগত, সুধী পাঠক মাফ করবেন। গত ৮ জুন থেকে কঠিন নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী আক্ষরিক অর্থেই শয্যাশায়ী। ডাক্তার বন্ধুর আদেশ কেবল বাথরুমে যাওয়া ছাড়া সবসময় বিছানায় শুয়ে থাকতে হবে। এর নাম নাকি ‘পরিপূর্ণ বিশ্রাম’। কিন্তু চাইলেই কি বিশ্রাম নামের সেই দুর্লভ বন্ধুটির সাক্ষাৎ মেলে? জোর করে খাটে শুইয়ে রেখে হয়তো শারীরিক বিশ্রাম চাপিয়ে দেওয়া গেল; কিন্তু মানসিক শান্তি ও বিশ্রাম কি সহজলভ্য? রোগশয্যায় প্রতিদিন নিষ্কর্মার মতো শুয়ে থেকে কিছু অভিজ্ঞতা হয়েছে, যা সুধী পাঠকের সঙ্গে বিনিময় করতে চাই। যখন তাপমাত্রা ১০৩ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যেত, তখন তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে অর্ধচেতন-অর্ধঅচেতন সময় কেমনভাবে জানি কেটে যেত, আমার হদিস থাকত না। কোথা দিয়ে দিন-তারিখ-রাত কেটে যেত আমার চেতনায় তা রেখাপাত করত না। কেননা চেতনা বোধটিকেই তো হারিয়ে ফেলেছিলাম সে সময়। বৌমার মাথায় জলসিঞ্চনে বা জলপট্টি দানকালে আরাম বোধ হলে মাঝে চোখে মেলে তাকাতাম মাত্র। প্রায় সময় যন্ত্রণাবিদ্ধ অচেতন অবস্থা। বৌমা মাথা নিচু করে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করত, বাবা এখন কি একটু আরাম বোধ করছেন? জবাবে ‘হ্যাঁ’ বলতাম, আরাম বোধ করি বা না করি। বৌমা খুশি হতো। মানুষকে আমরা কতভাবেই না ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা করি!
দিন আটদশেক পর জ্বর যখন নেমে ১০০ ডিগ্রি তাপমাত্রা বা তার নিচে নামতে শুরু হলো, সে আরেক বিচিত্র অভিজ্ঞতা। সে কথাটি আপনাদের বলি। এতদিন তবু প্রবল জ্বরে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে বেহুঁশ হয়ে পড়ে থাকতাম। এখন রাতে আর ঘুমুতে পারি না, তাপমাত্রা না থাকায় শারীরিক আরাম বোধ হতো ঠিকই, কিন্তু ঘুমের পরীরা আর আমার চোখে বসে না। ঘুম হয়ে গেল হারাম। রাত ১০টায় বৌমা রাতের শেষ ওষুধ খাইয়ে, মশারি ভালোভাবে গুঁজে দিয়ে, আলো নিভিয়ে বলত, ‘বাবা শুভরাত্রি, এবার আপনি ঘুমান।’ আমার শুরু হতো বিনিদ্র রজনী। চোখ মুদলেই আমার রেটিনার পর্দায় শুরু হতো চলচ্চিত্র প্রদর্শনী। একটার পর একটা দৃশ্যপট ভেসে আসছে, বায়োস্কোপের রিল ক্রমেই আবর্তিত হচ্ছে। কখনো জহির রায়হানের ‘ঝঃড়ঢ় এবহড়পরফব’-এর খণ্ড খণ্ড চিত্র, আবার সেই কবে দেখা আভা গার্ডনার অভিনীত ‘ব্রিজ অন দ্য রিভার কিওয়াই’-এর দৃশ্যাবলি, আবার কখনো দেখছি পাকসেনারা হত্যা করছে নিরীহ স্ত্রী-পুরুষ-শিশুদের- এমন লোমহর্ষক দৃশ্যাবলি, কখনো ভেসে উঠছে দার্জিলিংয়ের পাহাড়, গহিন বন আর জলপ্রপাতের মনোরম রোমান্টিক দৃশ্য। এক কথায় আমার মস্তিষ্ক নির্মিত চলচ্চিত্রের চলছে অবিরত প্রদর্শনী। কখনো ভেসে ওঠে রেটিনার পর্দায় ছেলেবেলার কথা, সাইকেলে করে স্কুল বা কলেজে যাচ্ছি, আবার কখনো দেখি মা আমার শিয়রে বসে পাখায় বাতাস করছে পরম মমতায়। এমনতরো কত ছবি। চোখ খুললেই সব উধাও, বন্ধ করলে পুনঃ পুনঃ প্রত্যাবর্তন তবে ভিন্ন আঙ্গিকে, ভিন্ন দৃশ্যাবলি নিয়ে। এত ঘটনা আমার মস্তিষ্কের স্মৃতিকোষগুলোতে সঞ্চিত হয়ে আছে ভাবা যায়। বুঝতে পারি আমার মস্তিষ্কের সচেতন অংশের স্নায়ুতন্ত্রের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে মস্তিষ্কের অবচেতন অংশের স্নায়ুতন্ত্র প্রবল হয়ে ভিন্ন ভিন্ন ঠিকানায় মস্তিষ্ক কোষগুলোয় সঞ্চিত ঘটনাবলিকে ইতস্ততভাবে তুলে এনে অপটিক নার্ভের মধ্য দিয়ে রেটিনা নামক সংবেদনশীল পর্দায় প্রক্ষেপ করতে থাকে ক্রমাগত। ঘুম তখন অদৃশ্য জগতে পলায়িত। মনোবিজ্ঞানীরা এর কী ব্যাখ্যা দেবেন জানি না।
আরেকটি অভিজ্ঞতার কথা বলি। অলস-দুর্বল শরীরে আর কাহাতক শয্যায় শুয়ে থাকা যায়! ই-মেইল, টেলিফোনের কল্যাণে তো আমরা চিঠি লিখতে ভুলে গেছি। এ প্রসঙ্গে ষাটের দশকের গোড়ার দিকে বিলেতের পোস্টাল বিভাগ একটি চমৎকার বিজ্ঞাপন ছেপেছিলাম, ‘ঝড়সব ড়হব ংড়সব যিবৎব ধিহঃং ধ ষবঃঃবৎ ভৎড়স ুড়ঁ. ঝবহফ রঃ ঃড়ফধু, হড়.ি’ ভাবলাম প্রিয়জনদের কাছে চিঠি লিখে সময় কাটানো যাক। হা-হুতোস্মি, স্থম্ভিত হয়ে আবিষ্কার করলাম যে, আমার চিঠি লেখার ব্যক্তি ও প্রিয়জনদের সংখ্যা প্রায় শূন্যের কোঠায়। স্ত্রী, ছোট পুত্র ও বৌমা সঙ্গেই থাকে, তাদের কাছে চিঠি লেখা অবান্তর ও অবাস্তব। দেশ-বিদেশে যেসব বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে চিঠি আদান-প্রদান হতো তাদের অধিকাংশই প্রয়াত। যারা ঢাকায় রয়েছেন তাদের সঙ্গে তো টেলিফোনেই আলাপ সারা যায়, ঘটা করে চিঠি লিখলে তারা কৌতুকবোধ করবেন, ভাববেন মশকরা করছি। আগে দেশ-বিদেশ থেকে ছাত্রছাত্রীরা প্রয়োজনে বা এমনিতেই চিঠি লিখত, এখন তারা সবাই সুপ্রতিষ্ঠিত, নিজ নিজ জগতে ব্যস্ত, তাদের চিঠি লেখার সময় কোথায়। কেজো কথা তো দূরালাপনীর মাধ্যমেই সারা যায়। অতএব চিঠি লেখার আমার মহাপরিকল্পনা বাতিল করতে হলো। রোগশয্যায় পড়ে থেকে আমার আরেকটি মহতী আবিষ্কার, আমার শুভানুধ্যায়ীদের সংখ্যা কম নয়। আমরা গণিতের ভাষায় এভাবে প্রকাশ করে থাকি, ‘ওহভরহরঃবষু ষধৎমব হঁসনবৎ’. কেমন করে জানি, হয়তো আমি যেসব সংগঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তাদের কল্যাণে, আমার অসুস্থতার কথা দু’একটি দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছিল। খবরটিতে বলা হয়েছিল, ‘আমাকে পরিপৃর্ণ বিশ্রামে থাকতে চিকিৎসকদের নির্দেশ ও আমার দ্রুত আরোগ্য কামনা। বেশ ক’জন সাংবাদিক বন্ধু টেলিফোনে আমার ছেলের কাছ থেকে খোঁজখবর নিয়েছেন এবং এখনো মাঝে মধ্যে নিয়ে থাকেন, তাদের ধন্যবাদ। তবে ব্যতিক্রম নেই, তা নয়। বেশ ক’জন ‘অশুভানুধ্যায়ী’ ডাক্তার ও পরিবারের নির্দেশ অমান্য করে হুড়মুড় করে মাঝে মধ্যে বাসায় হানা দিয়েছে। এর মধ্যে বেশ ক’জন আমার নানা সংগঠনের সহকর্মী ও সাবেক ছাত্রছাত্রী। এসব অশুভানুধ্যায়ীর মধ্যে মাত্র একজনের কথা বলব। তিনি আমার অনুজপ্রতিম সুহƒদ পরিচিত শিক্ষাবিদ ও কলামিস্ট শহীদুল ইসলাম। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক। বর্তমানে ঢাকায় আছেন। দৈনিকে আমার অসুস্থতার কথা জানতে পেরে আমার পরিবারের কাছ থেকে খবরাখবর নিয়েছেন। আমি জানতাম না, আমি তখন ১০৩-৪ ডিগ্রি জ্বরে অচেতন। ১৫ জুন হঠাৎ করেই সকাল ১০টায় বাসায় এসে উপস্থিত। ঘণ্টাখানেকের ওপর নানা বিষয়ে আলাপ করে আমার অসুস্থ’ মনকে অনেকখানি চাঙ্গা করে বিদায় নিলেন। অমন অশুভানুধ্যায়ীদের সংখ্যা যত বেশি হয় পৃথিবীটা বোধহয় তত ‘শিবম সত্যম সুন্দরম’ হয়ে ওঠে। সাম্প্রতিককালের কয়েকটি ঘটনা আমার বিবেককে বড্ড তাড়িত করছে, এর মধ্যে দু’একটি উল্লেখ করি-
১. বর্ণালী ঘোষের হত্যার বিচার বিলম্বিত কেন? : একজন স্বঘোষিত মানবাধিকার কর্মী হিসেবে, বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের নিপীড়ন সংশ্লিষ্ট সমস্যা হলে, মাঝে মধ্যেই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যাতায়াত করি। গত বছরের জুলাই মাসে বাগেরহাট জেলার রামপাল থানার চিত্রা ইউনিয়নের চিত্রা গ্রামের দরিদ্র কৃষক বিপুল ঘোষের কন্যা দ্বিতীয় বর্ষ অনার্সের ছাত্রী বর্ণালী ঘোষকে গভীর রাতে বাড়ি থেকে অপহরণ করে একদল দুর্বৃত্ত। প্রথমে দু’তিনদিন ধরে পালাত্রক্রমে গণধর্ষণ, পরে হত্যা ও লাশ গুম করার অপচেষ্টায় এসিডে দগ্ধ করে দেহটিকে শনাক্ত অনুপযুক্ত করে তোলে। এ লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে শুধু অধঃপতিত একদল যুবকই জড়িত নয়, স্থানীয় একটি রাজনৈতিক প্রভাবশালী গোষ্ঠীও মদদদাতা। আমরা কোনো এক সময় অকুস্থলে যাই, স্থানীয় পুলিশ তদন্তকর্তা, ডিসি ও এসপির সঙ্গে কথা বলে এই নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের আসল নায়কদের খুঁজে বিচারে সোপর্দ করার দাবি জানাই। পরে ঢাকায় আমরা আইজিপির সঙ্গেও দেখা করে তদন্তকাজ দ্রুত নিষ্পত্তির আবেদন করি। যা-ই হোক, শেষ পর্যন্ত তদন্ত শেষে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ তারিখ পুলিশ নিম্ন আদালতে ১২-১৩ জনকে আসামি করে চার্জশিট দাখিল করে। আমাদের যোগাযোগের ফলে বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মামলাটি যাতে দ্রুত বিচারালয়ে স্থানান্তরিত হয় এ মর্মে স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে সুপারিশ করেছেন বেশ ক’মাস আগে। কিন্তু বিষয়টি সেখানেই আটকে আছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয়ের যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করি বিষয়টির চূড়ান্ত ফয়সালা করার। হতভাগ্য কন্যাটির বাবা-মা বড্ড মনোকষ্টে আছেন। আমাকে বারবার টেলিফোনে আবেদন জানায়, কোনো কিছু একটা করার জন্য। কবে তারা এ মনোকষ্ট থেকে মুক্তি পাবেন সেই আশায় দিন গুনছি আমিও। মামলাটি বাগেরহাট বা খুলনা জেলার দ্রুত বিচারালয়ে স্থানান্তরিত হলে আমার উৎকণ্ঠার মুক্তি হবে।
২. অপহৃত স্কুলছাত্রী উপমা দত্তের মুক্তির স্বাদ ও মা-বাবার উৎকণ্ঠার অবসান : দিনাজপুর শহরের স্কুলছাত্রী উপমা দত্ত, পিতা চঞ্চল কুমার দত্ত, গত ২৬ এপ্রিল, ২০০৮ তারিখ একদল দুর্বৃত্ত কর্তৃক অপহৃত হয়। গোপন স্থানে নিয়ে দুর্বৃত্তরা তার ওপর মানসিক ও শারীরিক পীড়ন চালায় তাদের ইচ্ছার সঙ্গে সহযোগিতা না করায়। আমাদের তৎপরতায় সিভিল ও পুলিশ প্রশাসনের ওপর ক্রমেই চাপ রাখার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ কিছুদিন আগে দুর্বৃত্তদের কবল থেকে উপমাকে উদ্ধার করেছে। কোর্ট তাকে জামিন দিয়ে মা-বাবার কাছে রাখার অনুমতি দিয়েছেন। উপমা নিশ্চয়ই মুক্তির স্বাদ অনুভব করছে আর সেই সঙ্গে মা-বাবার স্নেহ-ভালোবাসা। আমিও তার এ মুক্তির আনন্দের স্বাদ পাচ্ছি। ছোট ছোট ঘটনা, কিন্তু কত আনন্দঘন।
৩. সিলেটের শ্রমিক কন্যা এখন মুক্ত : জকিগঞ্জ থানার খোলাদাপুনিয়া গ্রামের শ্রমিক খোকা মালাকারের কন্যা মিলি রানীকে একদল সশস্ত্র দুর্বৃত্ত অপহরণ করে গত ২৪ এপ্রিল, ২০০৮ তারিখ। একটি অজ্ঞাতনামা স্থানে তাকে আটকিয়ে রেখে পশ্বধমরা পালাত্রক্রমে ৭ দিন গণধর্ষণ করে। পরে তার অবস্থা খারাপ হলে তাকে গত ১ মের পবিত্র শ্রমিক দিবসে গভীর রাতে স্থানীয় ভট্টপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অচৈতন্য অবস্থায় ফেলে রেখে যায়। ঘটনাটি জানতে পেরে আমরা জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করি। ওখানকার মানবাধিকার সচেতন ব্যক্তিদের সঙ্গেও যোগাযোগ করি। সবার সমবেত চেষ্টায় অপহৃতাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালে অচৈতন্য অবস্থায় ভর্তি করা হয়। ডাক্তারদের চেষ্টায় সে এখন সুস্থ এবং মা-বাবার কাছে ফিরে গিয়ে রোগমুক্তির স্বাদ নিচ্ছে।
৪. গাজীপুরের খ্রিষ্টান কন্যা ধর্ষিত ও নিহত : ঢাকার এত কাছে যে এ ধরনের লোমহর্ষক কাণ্ড ঘটতে পারে ভাবা যায়? ঘটনার চরিত্র সেই আদি অকৃত্রিম। সংখ্যালঘু কন্যাকে প্রথমে অপহরণ, ধর্ষণ ও পরে হত্যা। সংখ্যালঘু নির্যাতনের এটি একটি প্যাটার্নে পরিণত হয়েছে। গত ৩০ এপ্রিল, ২০০৮ তারিখ গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার অধীনস্থ দক্ষিণ ভদার্তি গ্রামে একদল দুর্বৃত্ত এক খ্রিস্টান মাতা ও তার কন্যাকে যুগপৎ ধর্ষণ করে। পরে কন্যাটিকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। আমরা কবে এ নিষ্ঠুর দুর্বৃত্তমুক্ত সমাজ তৈরি করতে পারব যেখানে উমারানীরা, বর্ণালীরা এবং আমাদের মতো ছাপোষা নিরীহ নাগরিকরা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পারব? প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টামণ্ডলী, যাদের হাতে এখন রাষ্ট্র পরিচালনার ভার অর্পিত, তারা কেবল গ্রহণযোগ্য অবাধ নির্বাচন করার প্রতিশ্রুতিই আমাদের শোনাবেন আর পুলিশের বড় কর্তাদের লৌহদণ্ডের তলায় দুর্বৃত্তরা তাদের স্বর্গরাজ্য কায়েম করে চলবে এবং অসৎ ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক বাজার ও মুক্তবাজার অর্থনীতির দোহাই দিয়ে গরিব শোষণ চালাতেই থাকবে?
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জামিনে মুক্তি এবং আওয়ামী লীগারদের স্বস্তি : শেখ হাসিনার মুক্তি, স্বল্পদিনের জন্য হলেও আওয়ামী ঘরানায় উল্লাস ও স্বস্তির উদ্রেক হয়েছে অস্বীকার করার জো নেই। সরকার কীভাবে আইনসিদ্ধভাবে এই মুক্তি দিল আইনবিদরা চুলচেরা বিচার-বিশ্লেষণ করুন সে আলোচনায় আমি যাব না। তার চিকিৎসার স্বার্থে এবং কোনো মামলা তুলে না নিয়েও, সরকার তাকে ৮ সপ্তাহের জন্য মুক্তি দিয়েছে, এতেই আমি দেশবাসীর সঙ্গে খুশি। শেখ হাসিনা এবারই প্রথম দীর্ঘমেয়াদি কারাযন্ত্রণা ভোগ করলেন। যত স্বল্পকালীনই হোক এ মুক্তির স্বাদ নিশ্চয়ই পরিচিত পরিজনদের পরিবেশে তাকে আনন্দিত, উৎফুল্ল এবং দৈহিক ও মানসিকভাবে চাঙ্গা করবে। তার আরোগ্য কামনা করি। চিকিৎসা শেষে সুস্থ শরীরে দেশে প্রত্যাবর্তন করে আইনি লড়াই চালিয়ে সব অভিযোগ থেকে মুক্তি পান আমরা তা সর্বান্তকরণে চাইব। সরকারের সঙ্গে সমঝোতা (ড. কামাল হোসেনের প্রতিত্রিক্রয়া অনুযায়ী) করে আইনকে পাশ কাটিয়ে তিনি মুক্ত হন তা আমরা অবশ্যই চাইব না।
লেখক : শিক্ষাবিদ ও বিজ্ঞানী
সমকাল, ২২ জুন, ২০০৮
No comments:
Post a Comment