সাতক্ষীরায় পেট্রোল পাম্প পুড়িয়ে দিতে চেয়েছিল জামায়াত

শতাধিক সংখ্যালঘুর বাড়ি ও দোকান ভাংচুর, লুট
স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা ॥ বৃহস্পতিবার জামায়াত-শিবির যখন সিটি কলেজের শিক্ষক সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মামুনের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে মামুনকে কুপিয়ে হত্যা করছে সেময় মামুন মোবাইল করে সদর থানা ওসির সহযোগিতা চাইলেও সদর থানার ওসি ইব্রাহিম খলিল ছিলেন নির্বিকার। সিটি কলেজ মোড়ে যখন যুবলীগ কর্মী শাহিনকে পিটিয়ে হত্যা করা হচ্ছে সে সময়ও দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের এ্যাকশনে যাওয়ার অনুমতি দেননি ঐ বিতর্কিত ওসি। জেলা ১৪ দলের সমন্বয়ক এ্যাডভোকেট মোস্তফা লুৎফুল্লাহ সদর থানার ওসিকে জামায়াত-শিবিরের মদদপুষ্ট উল্লেখ করে শুক্রবার জনকণ্ঠকে বলেন, শিবিরের হামলার ঘটনায় তাদের প্রতিহত করতে ১৪ দলের তেমন প্রতিরোধ ছিল না। সাতক্ষীরা শহরের তিনটি পেট্রোল পাম্প পুড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা ছিল জামায়াত-শিবিরের উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিজিবির বলিষ্ঠ ভূমিকার কারণে বৃহস্পতিবার জেলা শহর জামায়াত- শিবিরের পুড়িয়ে দেয়ার নাশকতা থেকে রক্ষা পেয়েছে। এদিকে বৃহস্পতিবার জামায়াতীদের হামলায় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের দুজন নিহত হওয়ার পাশাপাশি বিজিবি ও পুলিশের সংঘর্ষে জামায়াত-শিবিরের ৫জন নিহত হয়েছে বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছে। এ ঘটনায় সদর থানায় পাঁচটি অপমৃত্যু মামলা রেকর্ড হয়েছে। এদিকে আজ শনিবার জেলাজুড়ে আধাবেলা হরতাল ডেকেছে জামায়াত।
এদিকে বৃহস্পতিবার সাতক্ষীরায় বিজিবি ও পুলিশের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের সংঘর্ষের পর পুরো জেলায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। বিকেলের তা-বের পর বৃহস্পতিবার রাতে জামায়াত-শিবির সাতক্ষীরার কদমতলা, সিটি কলেজ মোড়, আবাদের হাট এলাকায় সংখ্যালঘু পরিবারের সদস্যদের শতাধিক বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও লুটপাট করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের পক্ষে রাতে মাইকিং করে সাতক্ষীরা শহরে ও আশাশুনি উপজেলা সদরে অনির্দিষ্ট কালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। এদিকে জামায়াতের হামলায় নিহত কলেজ শিক্ষক (সাবেক সিটি কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি) মামুন হোসেন ও যুবলীগ নেতা শাহিন আলমের জানাজায় আওয়ামী লীগের জেলা সম্পাদক সকল দলের সঙ্গে সম্প্রীতি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে বক্তব্য দেয়ার পর মামুনের লাশের সামনেই উত্তেজিত নেতাকর্মীদের তোপের মুখে পড়েন আওয়ামী লীগের জেলা নেতৃবৃন্দ। জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি সাইফুল করিম সাবুসহ নেতা কর্মীরা এ সময় আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীদের ভূমিকার তীব্র প্রতিবাদ জানালে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। আওয়ামী লীগ জেলা সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মুজিবুর রহমানকে এ সময় নেতাকর্মীরা ব্যারিকেড দিয়ে রক্ষার চেষ্টা করেন।
এদিকে ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট মোস্তফা লুৎফুল্লাহ অভিযোগ করে বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলামের ভাই জামায়াতের রোকন ফিংড়ি ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে কদমতলায় জামায়াত- শিবির এই হামলা চালায়। সদর আওয়ামী লীগের সভাপতি এসএম শওকাত হোসেন বলেন, দুপুরে নেতাকর্মীরা বাড়িতে খাওয়ার জন্য গেলে জামায়াত-শিবির এই হামলার সুযোগ নেয়। তবে জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু নাসিম ময়না, সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলামসহ সকলেই এই হামলার জন্য সাতক্ষীরা পুলিশ প্রশাসনকে দায়ী করে বিতর্কিত পুলিশ কর্মকর্তাসহ বৃহস্পতিবার জামায়াত- শিবিরের হামলার মদদদাতা হিসেবে সদর থানার ওসি গাজী ইব্রাহিম খলিলের অপসারণ দাবি করেছেন।

দৈনিক জনকণ্ঠ। ২ মার্চ ২০১৩। লিঙ্ক

No comments:

Post a Comment