নওগাঁয় ঘুষের বিনিময়ে সংখ্যালঘুর বসতবাড়ি গুঁড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ

নিজস্ব সংবাদদাতা, নওগাঁ, ২৯ ডিসেম্বর ॥ নওগাঁ পৌর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ এখন পৌরবাসীর মুখে মুখে ফিরছে। বৃহস্পতিবার সকালে শহরের প্রধান সড়ক সংলগ্ন সংখ্যালঘু অজয় কুমার কু-ুদের প্রায় দু’শ’ বছরের পুরনো বসতবাড়িসহ নির্মাণাধীন বিল্ডিং গুঁড়িয়ে দেয়ার ঘটনা শুক্রবারের জনকণ্ঠে প্রকাশ হলে শহরের হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশাপাশি সচেতন মহলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। গত দু’দিন ধরে শহরের সকল মহলে একই বিষয় নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। শনিবার পৌর মেয়রসহ অধিকাংশ কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির বিস্তর অভিযোগ শহরে ছড়িয়ে পড়েছে। গৃহ নির্মাণের বিধি প্রয়োগ ছাড়াও বিভিন্ন মন্দির, মসজিদ ও মাদ্রাসার উন্নয়নের নামে সিংহভাগ অথবা সমুদয় অর্থ আত্মসাতের কাহিনী এলাকায় নতুন করে চাউর হয়ে উঠেছে। মন্দির ও মসজিদের ভুয়া কমিটি দেখিয়ে মেয়রের সহযোগিতায় কাউন্সিলররা স্বাক্ষর করে সেসব গম বা চালের সমুদয় অর্থ আত্মসাত করেছে বলে বিএনপি নেতা পৌর মেয়র নজমুল হক সনির দলের নেতাকর্মীরাই অভিযোগ তুলেছেন। তাঁদের মতে, অধিকাংশ কাউন্সিলর ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা দেখালেও বেআইনী অর্থ ভাগবাটোয়ারা বা অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করতে মেয়র-কাউন্সিলররা ঐক্যবদ্ধভাবেই তা সম্পাদন করেন বলে তারা দাবি করেন। সেই সঙ্গে গৃহনির্মাণের প্ল্যান পাস করা বা সেই প্ল্যান বাতিল করে তা ভেঙ্গে দেয়া শুধু প্রতিপক্ষের দেয়া অর্থের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে বলেও অভিযোগ তুলেছেন পৌরবাসী।

অভিযোগ রয়েছে, খোদ পৌর মেয়র সম্পতি তাঁর শ্বশুরবাড়ি সংলগ্ন যে মার্কেট তৈরি করেছেন, সেখানে পৌর বিধি মেনে নির্মাণ করা হয়নি। এছাড়া বাটার মোড় থেকে মাংসহাটির মোড় পর্যন্ত যে ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে, সেখানেও পৌর বিধি মানা হচ্ছে না। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে রাস্তা প্রশস্ত না করে ওই ড্রেনের ওপর নির্মিত দোকানঘরগুলো না সরিয়ে রাস্তার ওপরেই ড্রেন নির্মাণ করায় রাস্তাটি আরও সরু হয়ে যাচ্ছে। শুধু পৌর মেয়র নয় পৌরসভার কর্মকর্তা বা কর্মচারীরাও পৌর বিধি মেনে বাড়ি বা বিল্ডিং নির্মাণ করেননি। অথচ পৌরসভার সার্ভেয়ারের প্রদত্ত রিপোর্টে অজয় কুমার গং অভিযোগকারী পার্শ্ববর্তী তানজিলা নাসরিন ও বিনোদ কুমার পাটোদিয়ার এক ইঞ্চি জমি দখল করেছে বলে উল্লেখ করা হয়নি। তবে বলা হয়েছে, অজয় কু-ুর বাড়ির উত্তর-পূর্ব কোণে কোন জায়গা ছাড়া নেই। এক্ষেত্রে অজয় কুমার জানান, উল্লিখিত কোণে যে ঘরটি রয়েছে, তা তদানীন্তন ব্রিটিশ আমলে নির্মিত। তখন পৌরসভার জন্মই হয়নি। মাপজোখের সময় যেসব স্থানীয ব্যক্তি উপস্থিত থেকে সার্ভেয়ারের হাত নকশায় স্বাক্ষর করেছিলেন, সেই হাত নকশা সরবরাহ করা হয়নি। যেটি সরবরাহ করা হয়েছে, তাতে পক্ষ অজয় কুমারদের কোন স্বাক্ষর নেই। শুধু তানজিলা নাসরিন ও বিনোদ কুমারের স্বাক্ষর নেয়া হয়েছে। এতে করে সরবরাহকৃত হাত নকশাটিও পরবর্তীতে অর্থের বিনিময়ে করা হয়ে বলে অজয় এবং সেদিনের সাক্ষী হিসেবে যাঁরা স্বাক্ষর করেছিলেন তাঁরা জানিয়েছেন। ঘটনার প্রেক্ষিতে অজয় কুমার বৃহস্পতিবার রাতে নওগাঁ সদর মডেল থানায় একটি অভিযোগ করেছেন। আদালত খুললেই তিনি আইনের আশ্রয় নেবেন বলে শনিবার জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন।

দৈনিক জনকণ্ঠ। লিঙ্ক

No comments:

Post a Comment