সিলেটে গৃহবন্দী চিকিৎসককে উদ্ধার

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট | তারিখ: ০৯-১১-২০১২
সিলেটে ধর্মান্তরিত ডা. নন্দিতা হজ্বগামী স্বামীর হাতে নির্যাতিত ও গৃহবন্দি
গৃহবন্দী নারী চিকিৎসক ডা. নন্দিতা
আজ শুক্রবার পুলিশ এক ‘গৃহবন্দী’ নারী চিকিৎসককে তাঁর বাড়ি থেকে উদ্ধার করেছে। ওই চিকিৎসক অভিযোগ করেছেন, তাঁর স্বামী তাঁকে ঘরে তালাবদ্ধ করে বাইরে পাহারাদার রেখে এক মাস আগে হজে গেছেন। সিলেট নগরের মীরের ময়দান এলাকার কেওয়াপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ জানায়, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের তিলপাড়ার বাসিন্দা চিকিৎসক নন্দিতা সিনহা আহমেদ ১৯৮৬ সালে ধর্মান্তরিত হয়ে বিয়ে করেন সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হূদরোগ বিশেষজ্ঞ জুলফিকার আহমেদকে। তাঁদের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। নন্দিতা সিলেটের বেসরকারি হাসপাতাল জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক। নগরের মীরের ময়দান এলাকার কেওয়াপাড়ার নাবিদ ভিলার (পড়শী-২০৯) দ্বিতীয় তলায় তাঁরা থাকতেন।
নন্দিতার ভাই বিজিত সিনহা সিলেট কোতোয়ালি থানায় লিখিত অভিযোগ করেন, তাঁর বোনকে নিজ বাড়িতে বন্দী করে রেখে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে রাখা হয়েছে। যেকোনো সময় তিনি মারা যেতে পারেন। এ অভিযোগ পেয়ে বেলা তিনটায় সিলেট কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শাহ মো. মুবাশ্বিরের নেতৃত্বে একদল পুলিশ কেওয়াপাড়ায় ওই বাসায় গেলে তালাবদ্ধ ফটকে নিয়োজিত পাহারাদার বাধা দেন। এ সময় দোতলা থেকে নন্দিতা নিজের পরিচয় দিয়ে তাঁর বন্দী থাকার বিষয়টি পুলিশকে জানান। তাঁকে অনবরত ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে রাখা হয়েছে বলে চিৎকার করে বাবার বাড়ি যাওয়ার আকুতি জানান। এ সময় পুলিশ চিকিৎসক জুলফিকারের আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পুলিশের ভাষ্য, আত্মীয়রা এ ব্যাপারে কোনো সহায়তা করতে রাজি হননি। পরে পুলিশ স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল খালিককে খবর দিয়ে ঘটনাস্থলে নিয়ে যায়। কাউন্সিলরের মধ্যস্থতায় বিকেল সাড়ে চারটায় নন্দিতাকে ঘরের তালা খুলে মুক্ত করা হয়।
চিকিৎসক নন্দিতা অভিযোগ করেন, তাঁর স্বামী সম্প্রতি দ্বিতীয় বিয়ে করেন। এ বিয়ের প্রতিবাদ জানানোয় তাঁকে প্রায় ছয় মাস ধরে মানসিক নির্যাতন করা হচ্ছে।
নন্দিতা প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, বাসার মূল ফটক ও সিঁড়ির ফটকে দুটো তালা দিয়ে শোবার ঘরের দরজায়ও আরেকটি তালা মেরে রাখা ছিল। খাবার দেওয়ার সময় ফটকে নিয়োজিত দুজন পাহারাদার সঙ্গে নিয়ে তাঁর স্বামীর আত্মীয়রা ঘরে ঢুকতেন। প্রায় এক সপ্তাহ আগে তিনি জানালা দিয়ে প্রতিবেশী একজনকে তাঁর ভাইয়ের নাম-ঠিকানা দিলে তিন ভাই পুলিশকে নিয়ে বাসায় আসেন। নন্দিতা বলেন, ‘আমি একজন চিকিৎসক। আমার স্বামী আমাকে পরিকল্পিতভাবে মানসিক রোগী বানানোর চেষ্টা করছেন। অযথা ঘুমের ওষুধ খাইয়ে আমাকে এক ধরনের ঘোরের মধ্যে রাখা হয়েছিল।’
চিকিৎসক জুলফিকারের ভগ্নিপতি পরিচয়দানকারী আ ন ম জাকির সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা জানি না কেন বন্দী করে রাখা হয়েছে। তবে কোনো কারণ নিশ্চয় আছে। না হলে চিকিৎসক দম্পতির ক্ষেত্রে এ ঘটনা ঘটত না।’ জাকির অবশ্য স্বীকার করেন, জুলফিকার হজে গেছেন এবং দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন।
ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল খালিক বলেন, ‘দ্বিতীয় বিয়ে নিয়ে ওই পরিবারে স্বামী-স্ত্রীর দ্বন্দ্বের বিষয়টি জানি। নন্দিতা আমার কাছে একাধিকবার অভিযোগ করেছেন, তাঁর স্বামী তাঁকে প্রায়ই ঘুমের ওষুধ খাইয়ে নির্যাতন করেন। হজে যাওয়ার আগে এভাবে স্ত্রীকে বাসায় বন্দী করে যাওয়াটা আসলেই একটি অমানবিক ঘটনা।’
কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শাহ মো. মুবাশ্বির প্রথম আলোকে জানান, বাসায় থাকা নন্দিতার ছেলেমেয়ের ব্যাপারে তাঁর স্বামী এলে সিদ্ধান্ত হবে। এ ব্যাপারে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি হয়েছে। তাঁরা (নন্দিতার বাবার পরিবার) চাইলে যেকোনো আইনি সহায়তা দেওয়া হবে।

প্রথম আলো। ১১/১১/১২। লিঙ্ক

No comments:

Post a Comment