মসজিদ-মন্দিরে হামলা

লেখক: হাটহাজারী(চট্টগ্রাম)সংবাদদাতা | শনি, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০১২, ২৯ মাঘ ১৪১৮

হাটহাজারীতে ১৪৪ ধারা জারি

হাটহাজারীতে ভাংচুর, সড়ক অবরোধ ও অগ্নিসংযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গোটা উপজেলায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ ফরিদ আহমদ গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপজেলায় সকল প্রকার সভা, সমাবেশ ও জমায়েত নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ১৪৪ ধারা জারি করেন। প্রশাসনের এই পদক্ষেপের পর চট্টগ্রাম-হাটহাজারী ও রাঙ্গামাটি সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার নন্দীরহাটে নামাজ চলাকালে একটি মসজিদের সামনে লোকনাথ ব্রক্ষ্মচারী সেবাশ্রমের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে ঢোল বাদ্য বাজানোকে কেন্দ্র করে ওই দিন দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার এক পর্যায়ে মসজিদে ইটপাটকেল ছোঁড়ার ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে বিষয়টি উভয় পক্ষের ধর্মীয় নেতাদের মধ্যস্থতায় মীমাংসার জন্য শুক্রবার বাদ জুমা সময় নির্ধারণ করা হয়। গতকাল এলাকায় গিয়ে জানা যায়, বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে কে বা কারা ফের মসজিদে হামলা চালায়। এই ঘটনার জের ধরে জুমার নামাজের পর হাটহাজারী সদরসহ বেশ কয়েকটি এলাকার কয়েকটি মন্দিরে ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। জানা যায়, নন্দীরহাট কালীমন্দির, হাটহাজারী কালীবাড়ি, জগন্নাথবাড়ি মন্দিরেও হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এসময় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কয়েকটি বাড়িঘর ও দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ ও হামলা চালানো হয় বলেও জানা গেছে।

একই সময়ে উত্তেজিত জনতা হাটহাজারী-রাঙামাটি সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। তাদের প্রতিরোধ করতে গিয়ে হামলায় হাটহাজারী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারসহ ৩ পুলিশ এবং আরো ৫ জন গ্রামবাসী আহত হন। এসময় পুলিশ কয়েকজনকে আটক করে বলে জানা গেছে।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সেখানে ছুটে যান প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী ডা. আফসারুল আমীন ও স্থানীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। এসময় তারাও উত্তেজিত জনতার তোপের মুখে পড়েন। রাতে তারা স্থানীয় ধর্মীয় নেতাদের সাথে বৈঠকে বসেন বলে জানান জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার সহকারী পুলিশ সুপার ফারুক আহমদ। এদিকে স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্ধৃতি দিয়ে বার্তা সংস্থা বিডিনিউজ জানায়, জামায়াতে ইসলামী এই ঘটনায় ইন্ধন দিচ্ছে। তবে এই বিষয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের কেউই মুখ খুলছেন না।

অন্যদিকে মন্দির ভাংচুরের মাধ্যমে পরিস্থিতিকে অস্থির করতে স্থানীয় জামায়াত-শিবিরের ইন্ধন রয়েছে বলে মনে করছেন চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রশাসক এমএ সালাম।

আওয়ামী লীগের এই নেতা বিডিনিউজকে বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হওয়ার পর জামায়াত-শিবির পরিস্থিতি অস্থির করতে ইন্ধন যোগাচ্ছে।

হাটহাজারীর নন্দীরহাট থেকে তিন কিলোমিটার দূরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বুধবার ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবিরের সংঘর্ষে দুই ছাত্র নিহত হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যায়। বৃহস্পতিবারের পর উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় ওই এলাকায় যথেষ্ট সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়নি বলেও মনে করেন তিনি। তবে হাটহাজারী থানা বিএনপির সভাপতি এসএম ফজলুল হক পরিস্থিতির অবনতির জন্য প্রশাসনিক ব্যর্থতাকেই দায়ী করেন।

এলাকায় সম্প্রীতি রক্ষায় বিএনপির সব নেতা-কর্মীকে কাজ করতে বলা হয়েছে জানিয়ে ফজলুল হক বলেন, এখন সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে।

দোষীদের বিচারদাবি

মুফতি আমিনীর

ইত্তেফাক রিপোর্ট ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান ও ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটির আমির মুফতী ফজলুল হক আমিনী হাটহাজারীর মসজিদে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ভাংচুরের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, সরকারের ইসলাম বিরোধী অবস্থানের কারণেই হিন্দুরা মসজিদ ভাঙ্গার সাহস পেয়েছে। তিনি অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানান।

গতকাল বাদ জুমা লালবাগস্থ দলীয় কার্যালয়ে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন মসজিদের ইমামগণ ও সুধী সমাজের প্রতিনিধিরা মুফতী আমিনীর সঙ্গে সাক্ষাত্ করতে গেলে তিনি তাদের উদ্দেশ্যে এসব কথা বলেন।

দৈনিক ইত্তেফাক

No comments:

Post a Comment