পালাক্রমে ধর্ষণ শেষে নিথর দেহ ভাসিয়ে দেয় নদীতে

মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ (১)
তপন বিশ্বাস ॥ ২০০১ সাল, নির্বাচন পরবর্তী ঘটনা বাংলাদেশে নতুন কলঙ্কের জন্ম দেয় । সারা দেশে একযোগে সামপ্রদায়িক সম্প্রীতি লণ্ড ভণ্ড, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী শক্তির নারকীয় তাণ্ডব, হত্যা, ধর্ষণ, উচ্ছেদ, লুণ্ঠন, জোরপূর্বক চাঁদা আদায়, নির্যাতন ও অগ্নিসংযোগসহ এমন কোন হীন কাজ নেই যা ঘটেনি। পাশবিক। জান্তব আক্রোশ। হিংস্রতা। প্রতিটি ঘটনা যেন মথিত হৃদয়ের বেদনার্থ সমগ্রতা নিয়ে জীবন্ত অসহায় চিৎকারে বলেছিল_ এই কি আমাদের জন্মভূমি।

আসলে কি ঘটেছিল ওই সময়ে। এই ঘটনা তদন্তের লক্ষে গঠিত তদন্ত কমিশনের অনুসন্ধানে তার চিত্র ফুঁটে উঠেছে। ধারাবাহিক পর্বে চাঞ্চল্যকর এ সব ঘটনার বর্ণনা থাকছে।

অবশ্য ইতোমধ্যে ওই সময়ের ঘটনা তদন্ত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পেশ করেছে কমিশন। অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ মুহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে প্রধানকরে গঠিত তিন সদস্যের কমিশন মর্মস্পর্শী তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়ার পর দেড়মাস মাস অতিবাহিত হলেও রহস্যজনকভাবে সরকার রয়েছে নীরব। সরকারের রহস্যজনক এই ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অথচ এ ঘটনা প্রতিহিংসার রাজনীতিতে মানবতা হয়েছিল লাঞ্ছিত। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি হয়েছিল লণ্ডভণ্ড। মহান মুক্তিযুদ্ধের অবিনাশী চেতনাবিরোধী শক্তি বাংলাদেশ জুড়ে শুরু করে নারকীয় তা-ব। এদের সংঘটিত হত্যা, ধর্ষণ, সম্পত্তি থেকে উচ্ছেদ, সম্পদ লুণ্ঠন, জোরপূর্বক চাঁদা আদায়, শারীরিক নির্যাতন ও অগ্নিসংযোগের মতো অসংখ্য ঘটনা মানবতা ক্রন্দনরত। বিদীর্ণ বাংলাদেশ। নির্মম। পাশবিক। জান্তব আক্রোশ। হিংস্রতা। প্রতিটি ঘটনা যেন মথিত হৃদয়ের বেদনার্থ সমগ্রতা নিয়ে জীবন্ত অসহায় চিৎকারে বলছে: এই কি আমাদের জন্মভূমি। এই প্রতিবেদন অশ্রু, আর্তনাদ, নীরব বেদনা, হৃদয়ানুভূতি ও উপলব্ধির বিবেক যন্ত্রণায় বিদ্ধ রুদ্ধকালের ঘটনাপঞ্জি।

তদন্ত কমিশন ৮ম জাতীয় সংসদ ২০০১ নির্বাচনোত্তর খুন, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, অগ্নি সংযোগসহ সকল মানবতাবিরোধী সহিংসতায় আক্রান্ত নিরীহ ব্যক্তি ও পরিবারের শোক, দুঃখ ও বেদনার কাহিনী তুলে ধরেছে। এ সময় চারদলীয় জোটের নেতাকর্মীরা সারা দেশে যে সহিংসতা চালিয়েছে তা মধ্যযুগীয় নির্যাতনকেও হার মানিয়েছে।

তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে, ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রাত অর্থাৎ ২০০১ সালের ১ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে শুরম্ন হয় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাচন। সংখ্যালঘুর পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের ওপরও শুরু হয় এই নির্যাতন। নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার অভিযোগে নির্যাতন শুরু হলেও মুহূর্তে এতে নতুন মাত্রা যোগ হয় অসহায় সংখ্যালঘু নারী ধর্ষণ। যুবদল-ছাত্রদলের এই মিশন থেকে রেহাই পায় না বৃদ্ধা। গর্ভবতী মহিলারাও এমনকি সম্ভ্রম রক্ষা করতে গিয়ে পাট ক্ষেতে বাচ্চা প্রসব করার ঘটনাও ঘটে এ সময়। জোট সরকারের পৈচাশিক চেহারা মুহূর্তে প্রকাশ পায় তাদের অনুসারীদের কর্মকাণ্ডে। রাতভর ধরে চলে ধর্ষণ। গ্রাম ঘিরে ধর্ষণে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে এই নরপিচাশরা। এ সময়ে বাগেরহাটে এক কিশোরীকে পালাক্রমে ধর্ষণকালে তার মা উচ্চস্বরে বিলাপ করতে করতে বলেছিল, বাবারা তোমরা একজন করে আস, আমার মেয়ে ছোট। এতেও ক্ষান্ত হয়নি নরপিচাশরা। কিশোরী মেয়ের ওপর হায়নার দল যেন আছড়ে পড়ে।

একই পরিবারের তিন থেকে পাঁচ সংখ্যালঘু নারী এক সঙ্গে ধর্ষিত হওয়ার ঘটনাও ঘটে। কোথাও মা মেয়ে এক সঙ্গে, কোথাও মা মেয়ের সঙ্গে পুত্রবধু এবং পুত্রবধুর মাও ধর্ষণের শিকার হয়েছে। আবার কোথাও স্বামীকে বেঁধে তার ও সন্তানদের সামনে মাকে ধর্ষণ করেছে তারা। অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী থেকে ডিগ্রী পড়ুয়া সংখ্যালঘু মেয়েদের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয় যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। সংখ্যালঘু পরিবারের মেয়েদের তুলে নিয়ে এরা মদ খেয়ে পালক্রমে ধর্ষণ করে। ভোলার লাল মোহনে অন্নদাপ্রসাদ গ্রামের চার পাশের ধানক্ষেত ও জলাভূমি পরিবেষ্টিত ভেন্ডার বাড়িতে অর্ধশতাধিক মহিলারা তাদের সম্ভ্রম রক্ষার লৰ্যে আশ্রয় নেয়। কিন্তু সে বাড়িটিও এই নরপিচাশদের নজর এড়ায়নি। শত শত বিএনপি সন্ত্রাসীরা ৮/১০টি দলে বিভক্ত হয়ে অত্যনত্ম পরিকল্পিতভাবে ওই রাতে হামলা চালায়। মহিলারা তাদের সম্ভ্রম রৰা করতে পারেনি। সম্ভ্রম রৰায় অনেকে, প্রাণের মায়া তুচ্ছ করে অন্ধকারে ঝাঁপিয়ে পড়ে আশেপাশের ধানৰেত ও জলাশয়ে। কিন্তু তাদের শিশুদের পানিতে ফেলে দেয়ার হুমকি দিয়ে পানি থেকে ওঠে আসতে বাধ্য করায়। সেখানে ধর্ষিত হয় ৮ বছরের শিশুও। মা, মেয়ে, পুত্রবধূকে ধর্ষণ করা হয় এক সঙ্গে। ছেলের চেয়েও ছোট বয়সী সন্ত্রাসী কর্তৃক মায়ের বয়সী নারী ধর্ষিত হয়। এদের কবল থেকে রক্ষা পায়নি পঙ্গু, অন্ধ, প্রতিবন্ধী নারীরাও। কোন কোন ক্ষেত্রে ধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেয়াসহ লোমহর্ষক অনেক ঘটনার বর্ণনা রয়েছে এতে ।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জয়লাভ করায় যশোরের চৌগাছায় এক আওয়ামী লীগ ভক্ত আব্দুল বারিক মণ্ডলকে তার বাড়িতে এনে গাছের সঙ্গে বেঁধে দিনে দুপুরে রামদা দিয়ে কোপ দিয়ে দুপা কেটে ফেলে। বড় ছেলে বাধা দিতে গেলে তার দুপায়ে গরম রড ঢুকিয়ে দেয়। এর পর তার বাড়িতে তারই গরু জবাই করে ভোজের আয়োজন করে। নির্বাচনের পর কয়েকদিন ধরে চলে এই নারকীয় অত্যাচার। কিন্তু প্রশাসন থাকে নীরব। কোথাও কোথাও বরং এই নরপিচাশদের সহযোগিতা করেছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্টে এ বিষয়গুলো স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।

তদন্ত প্রতিবেদনে সহিংস ঘটনার প্রকৃতি অনুযায়ী ছয়টি সুপারিশ করে। এর মধ্যে ওই সময়ের অনেক ঘটনা রয়েছে, যা মামলা দায়ের করা সম্ভব হয়নি। এ জাতীয় সকল বিষয়ে সুনির্দিষ্ট মামলা দায়ের করা, কোন কোন মামলা পুনুজ্জীবিত করা, তদন্ত না করে যে সকল মামলা চূড়ান্ত রিপোর্ট প্রদান করা হয়, সে সকল মামলার পুর্নতদন্ত করা, কিছু মামলা রিভিউ করা, কিছু মামলা আপীল করা এবং সহিংস প্রতিটি ঘটনা তদন্ত করে বের করতে প্রতিটি জেলায় ছোট আকারে তদন্ত কমিশন বা কমিটি গঠন করা।

পরবর্তী করণীয় কী এমন এক প্রশ্নের জবাবে তদন্ত কমিশনের সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ মুহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু জনকণ্ঠকে বলেছিলেন, যে রায়ের আলোকে তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে, সে রায়ের আলোকে পরবর্তী পদৰেপের জন্য সরকারই উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ। এ ব্যাপারে নতুন করে আদালতের নির্দেশনা নেয়ার প্রয়োজন নেই। তবে সরকার কোন ক্ষেত্রে প্রয়োজন মনে করলে আদালতের কাছে পরবর্তী নির্দেশনা চাইতে পারে।

এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র সচিব বলেছিলেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে আদালতের নির্দেশনার প্রয়োজন হতে পারে। ২০০১ সালের অনেক ঘটনায় তখন মামলা দায়ের করা হয়নি বা করতে পারেনি। এ ঘটনার প্রেক্ষিত্রে এখন মামলা দায়ের করতে আদালতের নিদের্শনার প্রয়োজন হতে পারে। তবে আমরা বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দ্রুত বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করব। কিন্তু তদন্ত কমিশন রিপোর্ট প্রদানের পর ৪৯ দিন অতিবাহিত হলেও এখনও কোন প্রকার উদ্যোগ নেয়া হয়নি।

কমিশনের সদস্য মনোয়ার হোসেন আখন্দ জনকণ্ঠকে বলেছিলেন, ২০০১ নির্বাচন পরবর্তী সহিংস ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে দেখতে পাই জনকণ্ঠ পত্রিকা দায়িত্বশীল ভূমিকা রেখেছে। জনকণ্ঠ পত্রিকার রিপোর্ট আমাদের সহায়ক হয়েছে। রিপোর্টে যে ঘটনাগুলো তুল ধরা হয়েছে, তদন্ত করতে গিয়ে প্রতিটি ক্ষেত্রে তার সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে। ওই সময়ের প্রতিদিনের নির্যাতনের চিত্র জনকণ্ঠের পাতায় ফুটে ওঠে। তিনি বলেন, এ ছাড়া দায়িত্বশীল একটি ইংরেজী পত্রিকাতে মাত্র দুটি লেখা ছাপা হয়েছে। এ সময় বাকি মিডিয়া রহস্যজনকভাবে নীরব ছিল। তবে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন প্রচার না করলেও তাদের ধারণকৃত দুটি ফুটেজ পেয়েছি। কমিশনের সভাপতিও একই কথা বলেছেন জনকণ্ঠ সম্পর্কে। তিনি বলেন, কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, জনকণ্ঠ কতবড় দায়িত্বলীল পত্রিকা। পত্রিকাটি সকল সময়ে নির্যাতিত মানুষের পার্শে দাঁড়ায়। অপর এক কর্মকর্তা বলেন, জনকণ্ঠ নির্যাতিত সংখ্যালঘু এই জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়িয়েছিল বলে তাকেও কম মাসুল গুনতে হয়নি। এতে রীতিমতো সরকারের রোষানলে পড়তে হয়। তৎকালীন সরকার পত্রিকাটির সকল বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি। কোম্পানির সকল ব্যবসায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে সরকার।

প্রতিবেদনে বলা হয়, অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় সংখালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশাপাশি কিছু আওয়ামী নেতাকর্মীদের ওপর নেমে আসে মধ্যযুগীয় বর্বরতা। বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকের বাড়ি লুট, মায়ের সামনে কন্যাকে ধর্ষণ, স্বামীকে বেঁধে তার সামনে স্ত্রীকে ধর্ষণ, কোন কোন ক্ষেত্রে ধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেয়াসহ লোমহর্ষক অনেক ঘটনার বর্ণনা রয়েছে এতে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর একের পর এক হামলা হতে থাকে। ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া, বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদ, জমি দখল করা, হাত-পা কেটে নেয়া এবং খুন-ধর্ষণের ঘটনা ঘটে।

দলীয় আনুগত্যের কারণে সে সময়কার তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্যাতন বন্ধ করতে প্রশাসনিকভাবে কোন ধরনের ব্যবস্থা নিতে পারেনি বলে উলেস্নখ করা হয় প্রতিবেদনে। আবার জনগণের কাছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোন জবাবদিহি না থাকায় খেয়ালখুশিমতো প্রশাসন চালিয়েছে। বিশেষ করে, ২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রশাসনে রদবদলের মাধ্যমে সহিংস ঘটনার জন্য পথ সৃষ্টি করে গেছেন।

এ ধরনের নৃশংস ঘটনার কারণ উদ্ঘাটন এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে 'হিউম্যান রাইট ফর পিস' নামের একটি মানবাধিকার সংগঠন হাইকোর্টে রিট আবেদন করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৯ সালের ৬ মে এসব নির্যাতনের অভিযোগ তদনত্মের জন্য সরকারকে নির্দেশ দেন আদালত। এরপর ২০১০ সালের ২৭ ডিসেম্বর অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ মুহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে প্রধান করে তিন সদস্যের বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। কমিশনের দুই সদস্য হলেন উপসচিব মনোয়ার হোসেন আখন্দ ও ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মীর শহিদুল ইসলাম।

তদন্ত কমিশনের সুপারিশে ২০০১ সালের নির্বাচনোত্তর ঘটনার জন্য দায়ী অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার কথা বলা হয়েছে। অপরাধীদের বিরুদ্ধে দ্রুত মামলা করারও সুপারিশ করা হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০০১ সালের নির্বাচনের পরপরই যেসব নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে, তার সঙ্গে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ছিল। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের প্রতিহিংসার কারণেই এসব ঘটনা ঘটেছে।

পাঁচ খণ্ডের তদন্ত প্রতিবেদনটি এক হাজার ৭৮ পৃষ্ঠার। তদন্তকালে কমিশন মোট অভিযোগ পেয়েছে পাঁচ হাজার ৫৭১টি। ২০০১ সালের অক্টোবর থেকে ২০০২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যনত্ম পাওয়া অভিযোগের সংখ্যা তিন হাজার ৬২৫। এর মধ্যে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ৩৫৫টি এবং লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ, গণধর্ষণ, পঙ্গুত্ব, গুরুতর আঘাত, সম্পত্তি দখল ও অন্যান্য গুরুতর অভিযোগ তিন হাজার ২৭০টি। অভিযোগ বাতিল করা হয়েছে এক হাজার ৯৪৬টি। কমিশনের তদনত্ম করা তিন হাজার ৬২৫টি ঘটনায় ১৮ হাজারেরও বেশি লোক জড়িত। কমিশনের প্রতিবেদনে সহিংস ঘটনার কিছু উদাহরণ, কারণ ও পটভূমি, সহিংসতার ধরন, সারসংক্ষেপ, প্রাসঙ্গিক মতামত ও সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে ভোলা, বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, খুলনা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, সিলেট ও ঢাকা বিভাগের বিবরণ আলাদাভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে রাজনৈতিক বিবেচনায় নেতাকর্মীদের পাঁচ হাজার ৮৯০টি মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে উল্লেখ করে তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০১ সালের নির্বাচনের পর সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়। রাজনৈতিক আক্রোশের কারণে কারও হাত-পা কেটে ফেলা হয়, কারও চোখ তুলে ফেলা হয়, অনেক নারীকে ধর্ষণ করা হয় মায়ের সামনেই।
কমিশন জানায়, ২০০১ সালে নির্বাচনোত্তর সহিংসতার ঘটনায় যেসব ব্যক্তির ওপর আক্রমণ করা হয়েছিল, লুটপাট চালানো হয়েছিল, গণধর্ষণ করা হয়েছিল, তাঁরা থানায় বা আদালতে অভিযোগ দায়ের পর্যন্ত করতে পারেননি। আবার কেউ কেউ অভিযোগ করতে পারলেও রাজনৈতিক কারণে তদন্ত করা হয়নি।

কোন মামলা হয়ে থাকলে দ্রম্নত বিচারের ব্যবস্থা করার জন্য প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপক্ষ এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সহায়তা করবে। অন্যান্য সুপারিশের মধ্যে রয়েছে এ ধরনের সহিংস ঘটনা তদারকি করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি সেল গঠন করা, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের আর্থিক সহায়তা করা, রাজনৈতিক দলগুলোর আচরণে পরিবর্তন আনা, নির্বাচনে জয়লাভের পর পরাজিতদের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব, জয়লাভের পর তাৎক্ষণিক বিজয়োল্লাস পরিহার করা, জনগণের রায়কে স্বীকৃতি দেয়া, স্থানীয় প্রশাসনকে দলীয়করণ ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখা, এ সব ঘটনা তদন্তের জন্য প্রতিজেলায় একটি করে স্বল্পমেয়াদি কমিটি বা কমিশন গঠন করা ইত্যাদি।
সূত্র: জনকণ্ঠ ১২ জুন ২০১১

No comments:

Post a Comment