নির্বাচনোত্তর সহিংসতার আতঙ্কে কালিয়ার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়

নড়াইল/কালিয়া প্রতিনিধি

২০০৪ সালের ১০ নভেম্বর। পৌর নির্বাচনে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে হামলা চালানো হয় কালিয়া ঘোষপাড়া এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা কৃষ্ণ কুমার ঘোষের বাড়িতে। সহিংস তাণ্ডবে দিশেহারা হয়ে পড়ে পরিবারটি। এ সময় কৃষ্ণ ঘোষের সন্তানসম্ভবা স্ত্রী আতগ্ধিকত বুড়ি ঘোষের (৩০) শুরু হয় রক্তক্ষরণ। এ সময় তাকে হাসপাতালে নিতে না পারায় বিনা চিকিৎসায় বুড়ি ঘোষ মারা যান। ২০০১ সালের ১ নভেম্বর শবে বরাতের দিন।

কালিয়ার নোয়াগ্রামের ছাত্রলীগকর্মী তুলুকে তার পিতা আব্বাস শেখের সামনেই জবাই করে হত্যা করে বিএনপির সন্ত্রাসীরা। এ দুটি ঘটনাই নির্বাচনোত্তর সহিংসতার- প্রথমটি কালিয়া পৌর নির্বাচন এবং দ্বিতীয়টি ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অব্যবহিত পরেই। এ দুটি ঘটনা উদাহরণ মাত্র। এ কারণেই নির্বাচন এলে আতঙ্ক থাকেন কালিয়া এলাকার আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী-সমর্থকরা।

জানা গেছে ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং ২০০৪ সালের কালিয়া পৌর নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীর পরাজয়ে বড় কালিয়া, ছোট কালিয়া, ঘোষপাড়া, বেন্দা, উথলী, আউলী, কানাইপুর, চালনা, গাজীপুর, পিরোলী, ভোমবাগ, মোখলেসপুর, পহরডাঙ্গা, পুরুলিয়া, কলিমন, ঘড়িডাঙ্গা, শিবানন্দপুর, পাটনা এবং চররামসিধিসহ ৩০টি গ্রামের ২ শতাধিক আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী-সমর্থক ও সংখ্যালঘু পরিবারের ওপর নেমে আসে খড়গ। চারদলীয় জোটের ক্যাডারদের অত্যাচারে অসংখ্য আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী ও সংখ্যালঘু পরিবারের স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী জেলার বাইরে, এমনকি ভারতে গিয়েও আশ্রয় নেয়। দীর্ঘদিন শিক্ষার্থীরা স্কুল কলেজে যেতে এবং পরীক্ষাও দিতে পারেনি। কালিয়ায় অসংখ্য রাজনৈতিক সহিংস ঘটনা ঘটলেও নির্বাচনোত্তর সহিংসতায় মামলা হয় মাত্র ৩টি। পুলিশ প্রশাসন সরকারি দলের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ার কিছুদিন পর ভুক্তভোগীরা এসব মামলা তুলে নিতে বাধ্য হন।

সরেজমিন এসব এলাকায় গিয়ে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা পুরনো দিনের দুঃস্বপ্নের স্মৃতি ভুলতে চান। তারা শুধু প্রত্যেক প্রার্থী এবং তাদের নেতা-কর্মীদের কাছে নিরাপত্তা দাবি করেছেন।
নড়াইল-১ আসনে চারদলীয় জোট প্রার্থী বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলমকে এ ব্যাপারে প্রশু করা হলে প্রথমে তিনি ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনোত্তর সহিংস ঘটনার কথা মনে নেই বলে মন্তব্য করেন। পরে জানান, ভোটাররা যাকেই ভোট দিক না কেন, এ রকম কোনো সহিংস ঘটনা ঘটলে ভুক্তভোগীদের পাশে গিয়ে দাঁড়াবেন। একই মন্তব্য করেন এই আসনে মহাজোট প্রার্থী বিমল বিশ্বাস। তিনি এক ধাপ এগিয়ে বলেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলা এবং ভুক্তভোগীদের পাশে গিয়ে দাঁড়ানোই তো আমাদের কাজ।

এ ব্যাপারে নড়াইলের পুলিশ সুপার মোঃ কামরুল আহসান সমকালকে জানান, কোনো ভোটারকে ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে কি-না তা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং নির্বাচনের পর যাতে এসব স্পর্শকাতর এলাকায় কোনো সহিংস ঘটনা না ঘটে, সেজন্য প্রশাসন শক্ত অবস্থানে রয়েছে।

সমকাল, ২৮ ডিসেম্বর, ২০০৮

No comments:

Post a Comment