চার স্থানে প্রতিমা ভাংচুর আনন্দ আশ্রমে আগুন

সমকাল ডেস্ক
জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার পুনট উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে শিব মন্দিরে মঙ্গলবার রাতে প্রতিমা ভাংচুর করে দুর্বৃত্তরা
জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার পুনট উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে শিব মন্দিরে মঙ্গলবার রাতে প্রতিমা ভাংচুর করে দুর্বৃত্তরা। সমকাল
এবার জয়পুরহাটের কালাইয়ে শিব এবং ভোলার বোরহানউদ্দিনসহ চার স্থানে কালী প্রতিমা ভাংচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। ফরিদপুরের সালথায় পুড়িয়ে দিয়েছে আনন্দ আশ্রম মন্দির।

কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি জানান, জয়পুরহাটের কালাইয়ে শিবমন্দিরের প্রতিমা ভাংচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। এ নিয়ে উপজেলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
থানা ও এলাকা সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার রাতে উপজেলার পুনট ইউনিয়নের পুনট উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে অবস্থিত শিবমন্দিরের বেশ কয়েকটি প্রতিমা ভাংচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। তবে ঘটনার দায় স্বীকার করে 'আল্লাহর দল' নামে একটি সংগঠনের পক্ষে হাতে লেখা একটি লিফলেট মন্দিরে পাওয়া গেছে। লিফলেটে এ বলে হুশিয়ারি দেওয়া হয়েছে যে, ওই স্থানে ফের প্রতিমা তৈরি করা হলে পরবর্তী সময়ে কঠিন পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
শিবমন্দিরের তত্ত্বাবধায়ক নিবারণ চন্দ্র মহন্ত বলেন, 'আমি সাত বছর ধরে এ মন্দির দেখাশোনা করছি। এবারই প্রথম প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনা ঘটল।' তিনি ভাংচুরকারী দুর্বৃত্তদের কঠিন শাস্তি দাবি করেন।
কালাই থানার ওসি তরিকুল ইসলাম বলেন, 'আমি প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। মন্দিরের বেশকিছু প্রতিমা ভাংচুর করা হয়েছে। এ বিষয়ে এখনও কেউ মামলা করেনি।'

ভোলা/বোরহানউদ্দিন প্রতিনিধি জানান, ভোলার বোরহানউদ্দিনে রাতের আঁধারে পক্ষিয়া ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের রায়মোহন ডাক্তার বাড়ির কালীমন্দিরের একটি প্রতিমা ভাংচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। এছাড়া কাচিয়া ইউনিয়নের বোরহানগঞ্জ এলাকায় একই সময়ে ২৬টি বাড়ির খড়ের গাদা, গোয়ালঘর ও রান্নাঘরে অগি্নসংযোগ করে সংখ্যালঘু এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা চালানো হয়েছে। অগি্নসংযোগ করা বাড়ির মধ্যে ৬ হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি রয়েছে। গতকাল বুধবার ভোর রাতে পৃথকভাবে এসব ঘটনা ঘটে। অগ্নিসংযোগের দায়ে পুলিশ মন্নান পঞ্চায়েত নামের এক প্রতিবন্ধীকে গ্রেফতার করে। পরে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। এদিকে রাতের আঁধারে পক্ষিয়ার ৮নং ওয়ার্ডের রায়মোহন ডাক্তার বাড়ির কালীমন্দিরে প্রতিমার মাথা ভেঙে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।
বোরহানউদ্দিন থানার ওসি এনায়েত হোসেন জানান, এটি রাজনৈতিক সহিংসতা নয়। স্থানীয় জমি-সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে এ ঘটনা ঘটতে পারে।

সালথা (ফরিদপুর) সংবাদাতা জানান, ফরিদপুরের সালথায় দুর্বৃত্তরা পুড়িয়ে দিয়েছে আনন্দ আশ্রম মন্দির। মঙ্গলবার মধ্য রাতে উপজেলার বল্লভদী ইউনিয়নের ফুলবাড়িয়া বাজারে অবস্থিত এ মন্দির পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে মন্দিরের দুটি মূর্তি পুড়ে যায়। মন্দির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি তাপস কুমার হোড় বলেন, মঙ্গলবার মধ্য রাতে দুর্বৃত্তরা মাদুরে আগুন ধরিয়ে আধাপাকা এ মন্দিরের ভেতর ফেলে দেয়। বাজারের পাহারাদারদের চিৎকারে এলাকাবাসী উপস্থিত হয়ে তাৎক্ষণিকভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে মন্দিরের দুটি মূর্তি পুড়ে যায়। খবর পেয়ে সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাউল বারী ও সালথা থানার ওসি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

নেত্রকোনা প্রতিনিধি জানান, নেত্রকোনা সদর উপজেলার মেদনী ইউনিয়নের ধরের বাংলা গ্রামে কালীমন্দিরে ভাংচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার ধরের বাংলা গ্রামের মন্দিরের কালীর মাথা দুর্বৃত্তরা ভেঙে ফেলে। মঙ্গলবার বিকেলে গ্রামের লোকজন মন্দিরের কাছে গিয়ে মাথাটি ভাঙা দেখতে পায়। এ নিয়ে এলাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। নেত্রকোনা মডেল থানার ওসি মো. আজিজুর রহমান জানান, কে বা কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে জানা যায়নি। এ ব্যাপারে থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি।

দাউদকান্দি (কুমিল্লা) প্রতিনিধি জানান, উপজেলার মোহাম্মদপুর পূর্ব ইউনিয়নের চাপাতলি গ্রামের সার্বজনীন কালীমন্দিরে দুর্বৃত্তরা প্রতিমা ভাংচুর ও মন্দিরে অগি্নসংযোগ করে। গতকাল বুধবার ভোরে চাপাতলি গ্রামের বণিক বাড়িতে অবস্থিত সার্বজনীন কালীমন্দিরে এ ঘটনা ঘটে। এতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে ভীতি ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। ঘটনাস্থলে কুমিল্লা জেলা আওয়ামী লীগ নেতা মো. বশিরুল আলম মিয়াজী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কেরামত আলী, মুক্তিযোদ্ধা কুদ্দুস সরকার, থানার ওসি আবুল ফয়সল, উপজেলা প্রশাসন পরিদর্শন করেছে।

খুলনা ব্যুরো জানায়, আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন খুলনার কয়রা উপজেলার আমাদী ইউনিয়নের হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যরা। হামলার পর রজতপাড়ার ৫০টি পরিবার গত মঙ্গলবার নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে। ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ৩৬ ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও এখনও তাদের সাহায্যে কেউ এগিয়ে আসেনি। বতর্মানে খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাচ্ছে বিএনপি-জামায়াতের হামলার শিকার কার্তিক দাস ও সোনা দাসের পরিবারের সদস্যরা।

এদিকে আমাদী বাজারের দোকান এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িতে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় কয়রা থানায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী আতিয়ুর রহমান জানান, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সরকার সব ধরনের সাহায্য করবে। এজন্য জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। অনুরূপ চিঠি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েও পাঠানো হয়েছে। কয়রা থানার ওসি মীর খায়রুল কবির জানান, ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

গোপালগঞ্জ/কোটালীপাড়া প্রতিনিধি জানান, কোটালীপাড়ায় মন্দিরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। লাখিরপাড় সাতকান্দি সার্বজনীন দুর্গামন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিকাশ চন্দ্র মজুমদার বাদী হয়ে কারও নাম উল্লেখ না করে মঙ্গলবার রাতে কোটালীপাড়া থানায় মামলাটি করেন।
এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আটক কোটালীপাড়া উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমির আ. মান্নান শেখ, ইউসুফ আলী শেখ, চৌরখুলি গ্রামের কাশেম আলী শেখের ছেলে সাইফুল শেখ, ধোড়াল গ্রামের কাওসার দাড়িয়া ও আমবাড়ি গ্রামের মো. বাবুল শেখকে গতকাল বুধবার আদালতে হাজির করে পুলিশ ৫ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে। আদালত আগামী ১০ মার্চ শুনানির দিন ধার্য করে তাদের জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
মন্দিরে আগুন দেওয়ার প্রতিবাদে ও বিচারের দাবিতে হিন্দু ছাত্র মহাজোট, সার্বজনীন কেন্দ্রীয় কালীবাড়ি ও পূজা উদযাপন পরিষদ গোপালগঞ্জে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ও সংবাদ সম্মেলন করেছে।

নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে খড়ের গাদায় আগুন দিয়ে আতঙ্ক ছড়ানোর চেষ্টা করছে একশ্রেণীর লুটেরা চক্র। কয়েকদিনের ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার রাতে সেনবাগ এবং বেগমগঞ্জে চারটি হিন্দু বাড়িতে খড়ের গাদায় আগুন দেওয়া হয়।
স্থানীয় লোকজন জানায়, মঙ্গলবার রাতে সেনবাগ উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের রাজারামপুর গ্রামের চাইলতাতলি এলাকার গোপীনাথ বাড়ি ও দক্ষিণ মোহাম্মদপুর গ্রামের বড় কর্মকার বানোয়াখালীড়ির সামনের খড়ের গাদায় অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা অগ্নিসংযোগ করে। স্থানীয় লোকজন এগিয়ে আসার আগেই খড়ের গাদা দুটি ভস্মীভূত হয়। এ ঘটনায় হিন্দু এলাকাগুলোতে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।
সেনবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আকরাম হোসেন জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গেছে। এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টির জন্যই এমন ঘটনা ঘটানো হচ্ছে।

সমকাল

No comments:

Post a Comment