দক্ষিণ চট্টগ্রামে তাণ্ডব, হিন্দু বৃদ্ধ নিহত

নিজস্ব প্রতিবেদক,  বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

Published: 2013-02-28 16:46:41.0 Updated: 2013-02-28 16:46:41.0
দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পর দক্ষিণ চট্টগ্রামের কয়েকটি উপজেলায় তাণ্ডব চালিয়েছে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মীরা।

বৃহস্পতিবার বিকালে বাঁশখালীতে হামলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

এছাড়া তাণ্ডব চলে সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলায়ও। লোহাগাড়ায় নিহত হন এক পুলিশ সদস্যসহ দুজন।

স্থানীয়রা জানায়, বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বাঁশখালী সদর, চেচুরিয়া, চাম্বল, বৈলছড়ি, প্রেমবাজার, কালীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা-ভাংচুর চলে।

বাঁশখালী সদরে অদূরে কয়েকটি মন্দিরে হামলার অভিযোগ পাওয়া গেলেও তা স্বীকার করেনি পুলিশ।

তবে জামায়াতের হামলায় চাম্বল গ্রামে দয়াল হরি শীল (৬৫) নামে এক ব্যক্তি নিহত হন বলে জানিয়েছেন বাঁশখালী থানার ওসি আবদুস সবুর।

নিহতের বাড়ি বাঁশখালীর চাম্বল গ্রামে। তিনি বাঁশখালীর ধোপাপাড়া এলাকায় মেয়ের বাড়িতে বেড়াতে আসার সময় হামলায় পড়েন।

ওসি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিকালে হামলার সময় হরি শীল আহত হন। হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে তার মৃত্যু হয়।

পুলিশ জানায়, জামায়াত-শিবিরকর্মীরা চট্টগ্রাম-বাঁশখালী সড়কের দুই পাশে দোকানপাট ও গাড়ি ভাংচুর এবং মালামাল লুট করে।

হামলায় পুলিশসহ কমপক্ষে ৩০ জন আহত হন।

পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী এবং উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শিবিরকর্মীরা বাঁশখালী থানা অবরোধ করে, ইউএনও কার্যালয়, উপজেলা প্রশাসন কার্যালয়, সহকারী জজের আদালতেও হামলা চালায়।

স্থানীয়রা জানায়, একপক্ষীয় তাণ্ডব চালিয়ে হামলাকারীরা ফিরে যায়। প্রশাসন ছাড়াও স্থানীয় আওয়ামী লীগ বা অন্য কোনো দলের পক্ষ থেকে প্রতিরোধ করা হয়নি।

বাঁশখালী থানার ওসি সবুর থানা অবরোধের কথা স্বীকার করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শিবিরকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছোড়ে। এসময় আনসার সদস্য জয়নালসহ কয়েকজন আহত হয়েছে।

তিনি বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফাঁকা গুলি ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়া হয়।

হামলাকারী কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি বলেও জানান ওসি।

বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাব্বির ইকবাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, হামলাকারীরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে ভাংচুর করে ফাইলপত্র তছনছ এবং গ্যারেজে থাকা একটি জিপে আগুন দেয়।

পৌর সদরে অবস্থিত সহকারী জজ আদালতে আগুন দেয়ায় বিভিন্ন দলিল পুড়ে গেছে বলে জানান তিনি।

সাতকানিয়া উপজেলায় তাণ্ডব তিন ঘণ্টা ধরে চলে বলে জানায় স্থানীয়রা।

দুপুর দেড়টার দিকে কেরানি হাটে জামায়াত-শিবিরকর্মীরা লাটিসোঁটা নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায়।

তারা যানবাহন ও বিভিন্ন দোকান ভাংচুর করে বলে জানান সাতকানিয়া থানার ওসি মো. ইসমাইল।

তিনি বলেন, জামায়াত-শিবির কর্মীরা লাটিসোঁটা নিয়ে প্রথমে সাতকানিয়া ফায়ার সার্ভিস অফিসে হামলা চালায়।

পুলিশ ও র‌্যাবকব সদস্যরা তাদের ধাওয়া দিলে শিবিরকর্মীরা পিছু হটলেও ফিরে এসে ফায়ার সার্ভিসের একটি গাড়িতে আগুন দেয়। তখন দুই পক্ষের সংঘর্ষ বাঁধে। 

হামলায় সাতকানিয়া সার্কেলের এএসপি রুহুল আমিন সিদ্দিকীসহ ১২ জন পুলিশ সদস্য আহত হন বলে জানান ওসি।

স্থানীয় সাংবাদিকরা জানান, শিবিরকর্মীরা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দোকানে হামলা ও লুটপাট করে।

তবে এই বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি ওসি ইসমাইল।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শিবিরকর্মীরা চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কে অর্ধশতাধিক গাড়ি ভাংচুর করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ শতাধিক রাউন্ড রবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে।

এদিকে সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ড ফায়ার স্টেশনের সামনে একটি কাভার্ড ভ্যানে আগুন দেয় জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা। এতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়।

সীতাকুণ্ড থানার ওসি সামিউল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শিবিরকর্মীরা সীতাকুণ্ড সদরের অদূরে সড়কে একটি কাভার্ড ভ্যানে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়।

এই কারণে যানজট সৃষ্টি হওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, রাত ৯টার দিকে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক গতি পায়।

এছাড়া সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত মহাসড়কের সীতাকুণ্ড এলাকার বিভিন্ন স্থানে হরতালকারীরা বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করে।


বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

No comments:

Post a Comment