অপহৃত সংখ্যালঘু নারীকে উদ্ধারে ৪৮ ঘণ্টা সময়

নিজস্ব প্রতিবেদক,  বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

Published: 2013-01-31

পটুয়াখালীর গলাচিপা থেকে অপহৃত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এক নারীকে উদ্ধার করে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।

বৃহস্পতিবার ফৌজদারি কার্যবিধিতে করা একটি আবেদনের শুনানি শেষে বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি মাহমুদুল হকের বেঞ্চ এই আদেশ দেয় বলে জানান বাদি পক্ষে আবেদনকারী সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. ইউনুস আলী আকন্দ।

আদেশে পটুয়াখালী জেলার গলচিপা উপজেলার ছোটগাবুয়া গ্রামের অপহৃত রিতু মণিকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে হাই কোর্টে হাজির করার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়।

একইসঙ্গে ওই ঘটনায় করা মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার ও পুড়ে যাওয়া ঘর সরকারি খরচে নির্মাণ করাসহ ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে বিবাদিকে আদেশ দিয়েছে আদালত।

এই সংক্রান্ত দুটি রুল জারি করে রুল বিবেচনাধীন থাকা অবস্থায় অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের জন্য এ সব আদেশ দেয়া হয়।

এছাড়া আসামিদের গ্রেপ্তারে এবং অপহৃতকে উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না- তাও জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।

ন্যায়বিচার নিশ্চিতে মো. নাসিমুদ্দিন নামে এক ব্যক্তির পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. ইউনুস আলী আকন্দ বুধবার আবেদনটি দাখিল করেন।

ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৬১ (এ) ধারায় এই আবেদন করা হয়। ন্যায়বিচার নিশ্চিতে কার্যবিধির কোনো বিধানকে ফলপ্রসূ করতে এই ধারায় অন্তর্নিহিত ক্ষমতা অনুসারে হাই কোর্টকে আদেশ দেয়ার এখতিয়ার দেয়া হয়েছে।

গত ২৮ জানুয়ারি দৈনিক জনকণ্ঠে ‌‘গলাচিপায় সংখ্যালঘুর বাড়িতে আগুন, কিশোরী অপহরণ/ ৭ পরিবারে আতঙ্ক’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি সংযুক্ত করে আবেদনটি দাখিল করা হয়।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২১ জানুয়ারি সোমবার গভীর রাতে একই গাঁয়ের প্রভাবশালী জোতদার এবং গলাচিপা শহরে এক আইনজীবীর সহকারী আনোয়ার হোসেন হাওলাদারের ছেলে মজিবর রহমান টিপুর (২৮) নেতৃত্বে ১৫/১৬ জনের একদল দুবৃত্ত অনিল বাঘমারের ঘরে হামলা চালায়।

অনিল বাঘমারের ঘরের দরজা ভেঙে ঢুকে রিতুমণি ওরফে মরিকে তারা তুলে নিয়ে যায়। এ সময় অস্ত্রের মুখে কাজল রানীর কানের রিংসহ ঘরের মালামাল লুট করে। অপহৃতকে ফিরে পেতে তার স্বজনরা কান্নাকাটি শুরু করলে হামলাকারীরা ফিরে এসে সাত পরিবারের বসতঘর জ্বালিয়ে দেয়।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, আনোয়ার হোসেন হাওলাদার সম্প্রতি মনোরঞ্জন বাঘমারের ৮০ শতক জমি দখল করেন। জমি ফেরত পেতে মনোরঞ্জন গলাচিপা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন। এরপর থেকে আনোয়ার হোসেন মামলা তুলে নিতে তাকে হুমকি দিয়ে আসছেন। এর জের ধরেই বর্বরোচিত এ ঘটনা ঘটেছে।

এর আগেও আনোয়ার হোসেন আক্রান্তদের তিন একর ৩৮ শতক জমি দীর্ঘদিন ধরে দখল করে রেখেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে । ওই ঘটনায়ও মামলা চলছে।

হামলা, অগ্নিসংযোগ ও অপহরণের অভিযোগে অনিল বাঘমার ২৩ জানুয়ারি বুধবার গলাচিপা থানায় একটি মামলা করেন। এতে আনোয়ার হোসেন হাওলাদার, মজিবর রহমান টিপু, রাসেল, দেলোয়ার হোসেন, বাচ্চু হাওলাদার, জাহাঙ্গীর হাওলাদার, জৌলাস ওরফে জুলহাস হাওলাদার ও ফজলুল হক হাওলাদারকে আসামি করা হয়েছে।

এদের মধ্যে আসামি রাসেল গ্রেপ্তার হলেও অপহৃত ওই নারী এখনো উদ্ধার হয়নি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে।

হাই কোর্টে দাখিল করা আবেদনে অভিযোগ করা হয়, আনোয়ার হোসেন একজন স্থানীয় সন্ত্রাসী। ২১ জানুয়ারি তিনি এক সংখ্যালঘু নারীকে অপহরণ করেছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ওই নারীকে উদ্ধারে যথাযথভাবে সহায়তা করছে না।

আবেদনে আরো বলা হয়, ‘এই ঘটনার মাধ্যমে বলা যায়, সরকার সংবিধান নির্ধারিত সকল ব্যক্তির নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে। এতে সংবিধানের ২৭, ২৮ (১), (৩) ও (৪) ধারা লঙ্ঘিত হয়েছে।’

সূত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

No comments:

Post a Comment