মেয়ের বদলে ৫ লাখ টাকা চাঁদা না পেয়ে হিন্দু পরিবারের ওপর তাণ্ডব

বাগেরহাটে বেপরোয়া সন্ত্রাস- একাধিকবার হত্যার চেষ্টা, ঘরে তালা ॥ গরু ও মাল লুট

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাগেরহাট, ২ নবেম্বর ॥ লক্ষ্মী রানী নামে সুশ্রী তরুণী কন্যাকে সকলের সম্মতিতে সগোত্রের যোগ্য পাত্রের সঙ্গে বিয়ে দেয়ায় বাগেরহাটের যাত্রাপুরের খলসী গ্রামে নিরীহ অনিল হালদারের পরিবারের ওপর স্থানীয় তুহিন খাঁ নামে এক যুবক সাঙ্গোপাঙ্গ নিয়ে বেপরোয়া তাণ্ডব চালিয়েছে। চিহ্নিত তুহিন খাঁ গং ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে এ পরিবারের ৪টি গরু ও মালামাল লুটে নিয়ে গেছে। বসতঘরে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। হত্যা করার জন্য প্রকাশ্যে গৃহকর্তা অনিল হালদার ও তার ছেলেমেয়েকে একাধিকবার ধাওয়া করেছে। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে অনিল হালদার সপরিবারে বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়ে জীবন বাঁচিয়েছেন। ভীতসন্ত্রস্ত ওই পরিবারটি কতিপয় ব্যক্তির সহায়তায় শুক্রবার বিকেলে বাগেরহাটের পুলিশ সুপারের কাছে বিষয়টি জানান। এরপর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়।

বাগেরহাট সদরের যাত্রাপুরের খলসী গ্রামের অনিল হালদার তার স্নাতক পাস মেয়ে সুশ্রী লক্ষ্মী রানীকে গত ২২ সেপ্টেম্বর সোমবার সকলের সম্মতিতে কচুয়া উপজেলার ছোট আন্ধারমানিক গ্রামের কুবের মিস্ত্রি ছেলে পুলিশে চাকুরিরত অসীম মিস্ত্রীর সঙ্গে বিয়ে দেন। এরপর থেকে স্থানীয় ফজলু খাঁর ছেলে তুহিন খাঁ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। সে শ্বশুরবাড়ি থেকে লক্ষ্মীকে ফিরিয়ে নিয়ে আসার দাবিতে অবর্ণনীয় অত্যাচার ও হুমকি-ধামকি দিতে থাকে। এ কথা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জানালে তুহিন আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে দলবলসহ তুহিন বৃহস্পতিবার দুপুরে খুন করার ঘোষণা দিয়ে রামদা নিয়ে নিরীহ অনিল এবং তার স্ত্রী রীনা রানী, ছেলে অলিপ ও মেয়ে জোৎস্নাকে ধাওয়া করে। তাদের আর্তচিৎকারে লোকজন ছুটে এলে ওরা চলে যায়। পরে বিকেলে আবার ফিরে এসে ৪টি গরুসহ মালামাল নিয়ে যায়। বসতবাড়িতে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে ৫ লাখ টাকা দাবি করে। অসহায় অনিলের পরিবার তখন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারের কাছে ছুটে যায়। তারা বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বস্ত করেন। কিন্তু কোন ফল হয় না। উল্টো বেপরোয়া তুহিন দলবল নিয়ে রাতে ফের চড়াও হলে নিরুপায় অনিল হালদার সপরিবারে বাড়িঘর ছেড়ে কচুয়ায় বেয়াই বাড়িতে পালিয়ে গিয়ে প্রাণ বাঁচান।
ঘটনার নিন্দা জানিয়ে স্থানীয় ইউপি মেম্বার মোস্তফা কামাল বলেন, অনিল পরিবারের ওপর অত্যাচার অমানবিক। এ বিষয়ে বাগেরহাটের পুলিশ সুপার খোন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার বিকেলে তিনি বিষয়টি শোনার পর থানায় অভিযোগ দিয়ে বলেন এবং জরুরীভাবে প্রয়োজনীয় এ্যাকশান নিতে সদর থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন।

এ ঘটনায় বাগেরহাট জেলা হিন্দু-বৌদ্ব-খ্রিস্টান ঐক্যপরিষদের সভাপতি শিবপ্রসাদ ঘোষ, আ’লীগ নেত্রী ও জেলা মহিলা সংস্থার সভানেত্রী হ্যাপী বড়াল, পূজা উদযাপন পরিষদের জেলা সম্পাদক অবনীশ চক্রবর্ত্তী সোনা, মহিলা পরিষদের নেত্রী শিল্পী সমাদ্দার, এ্যাডভোকেট পারভীন আহম্মেদসহ বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে অবিলম্বে দোষীদের আটক ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন।


সূত্র: দৈনিক জনকণ্ঠ। লিঙ্ক

No comments:

Post a Comment