পটিয়ায় বৌদ্ধ বসতিতে রাত জেগে পাহারা

উত্তম সেনগুপ্ত
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

ধ্বংসকৃত পটিয়া মন্দির
চট্টগ্রাম, অক্টোবর ০৬ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- চট্টগ্রামের পটিয়ায় সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের পর এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও উপজেলার লাখেরা ও কোলাগাঁও গ্রামের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষ এখনও শঙ্কিত।

বৌদ্ধ ও হিন্দু মন্দিরে হামলার ঘটনার পর থেকে রাত জেগে বাড়ি পাহারা দিচ্ছে এ এলাকার মানুষ।

ফেইসবুকে কোরআন অবমাননার অভিযোগে গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধ মন্দির ও ঘরবাড়িতে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর চালায় ধর্মীয় উগ্রপন্থীরা। পরদিন চট্টগ্রামের পটিয়া এবং কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফেও হামলার ঘটনা ঘটে।

৩০ সেপ্টেম্বর দুপুরে কয়েকশ’ উগ্রপন্থি মিছিল করে এসে পটিয়ার লাখাড়া অভয় বৌদ্ধ বিহারে হামলা চালায় এবং অগ্নিসংযোগ করে।

এ সময় তারা কোলাগাঁও রত্নাঙ্কুর বৌদ্ধ বিহার, কোলাগাঁও নবারুণ সংঘ দুর্গা মন্দির ও জেলে পাড়া মাতৃমন্দিরে হামলা চালায়।

লাখাড়া গ্রামের বাসিন্দা সমীরণ বড়ুয়া বলেন,“আপাতদৃষ্টিতে আমরা নিরাপদ। কিন্তু ভবিষ্যতেও যাতে কোনো ধরনের হামলা না হয়, তার নিশ্চয়তা চাই”।

গ্রামের পুরুষেরা সকাল বেলা সবাই কাজে চলে যায় বলে বাড়ির মহিলা আর শিশুদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত সমীরণ।

তিনি জানান, গ্রামের পুরুষ মানুষেরা দিনের বেলা চাকরি করে আবার রাত জেগে তারা পাহারা দেয়।

এলাকার বৌদ্ধ সমাজের সভাপতি অজিত বড়ুয়া জানান, “আমাদের গ্রামের পশ্চিম দিকে মুসলমান পাড়া, পূর্ব দিকে হিন্দু পাড়া, মাঝে আমাদের বৌদ্ধ পাড়া। এলাকায় সব সময় সম্প্রীতি বজায় ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালেও আমাদের গ্রামে কোন সমস্যা সৃষ্টি হয়নি।”

“কিন্তু এবার কেন এ হামলা বুঝে উঠতে পারছি না,” যোগ করেন তিনি।

‘হামলা চালায় শ্রমিকরা’

এলাকাবাসীর অভিযোগ, হামলার ঘটনায় জড়িতদের বেশিরভাগই শ্রমিক। তবে কয়েকজন স্থানীয় লোকও এ ঘটনার সাথে জড়িত ছিল।

সেদিনের হামলায় আহত বুদ্ধানন্দ শ্রমণ জানান, “আমি মন্দিরের ভেতর একটি রুমে বসেছিলাম, লোকগুলো মন্দিরের দরজা ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে হামলা করে ও বিভিন্ন মালামালে আগুন দেয়।

হামলার ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সেদিনের হামলায় সাতশ থেকে আটশ লোক জড়িত ছিল। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিল ওয়ের্স্টান মেরিন শিপ-ইয়ার্ডের শ্রমিক।

শ্রমিকরা কারখানার পোষাক পড়ে হামলায় অংশ নেয়। এ সময় তাদের হাতে কারখানার বড় হাতুড়ি এবং লোহার জিনিসপত্র ছিল বলেও তারা জানান।

পুলিশ ঘটনার দিন সন্ধ্যায় পুলিশ ওয়ের্স্টান মেরিন শিপ ইয়ার্ডের সিসি ক্যামেরা দেখে ২৬ জন শ্রমিক এবং পরবর্তীতে আরও ১২ জনকে গ্রেপ্তার করে।

এ ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে দুইটি এবং ক্ষতিগ্রস্থ রত্নাঙ্কুর বৌদ্ধ বিহারের বৌদ্ধ ভিক্ষু বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/ইউএস/এসইউ/১২১১ ঘ.

লিংক

No comments:

Post a Comment