মুসলমান কর্তৃক হিন্দুদেরকে গরুর মাংস খাওয়ানো বিষয়ে

বিডিনিউজ২৪ ব্লগে রীতা রায় মিঠু"‘চটি বই লেখিকা’ই যদি, তবে তাঁকে নিয়ে এত কথা কেন!!!" নামক লেখাটিতে প্রসঙ্গক্রমে বাংলাদেশের হিন্দুদের প্রতিদিন শিকার হওয়া একটি নির্যাতনের কথা বলেছেন। ব্লগ থেকে সরাসরি কপি করে রেখে দিলাম। উদারবাদী হিন্দুরা এই ঘটনাগুলোর মাধ্যমে বাংলাদেশের মুসলমানদের জঘন্য মানসিকতার কিছু নিদর্শন পাবেন।

কলামিষ্ট সাহেবের ধর্মীয় অনুভূতির প্রেক্ষিতেই নিজের দুটো কথা বলি। যেহেতু আমি হিন্দু ধর্মাবলম্বী, তাই ছোটবেলা থেকেই জেনে এসেছি হিন্দুরা গরুর মাংস খায় না। আমাদের সাথে সাথে ধর্মীয় সংস্কৃতির এই ব্যাপারটি মুসলিমরাও জানেন, এমনকি অনেক ভিনদেশীও জানেন। কিনতু দেশে যেহেতু আমরা ছিলাম সংখ্যালঘু, সংখ্যাগুরু ছেলেমেয়েরা কোরবাণী ঈদের সময় গরুর মাংস খাওয়ার পর বড় বড় হাড্ডিগুড্ডি আমাদের আঙিনাতে ছুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলত। থালার মধ্যে মুড়ি আর গরুর মাংস নিয়ে আমাদের ঘরের সামনে দিয়ে হেঁটে বেড়াত আর ছড়া কাটত, “ নম নম তুলসীপাতা, হিন্দুরা খায় গরুর মাথা’। ঐসব ছেলেমেয়েদের অভিভাবকরা শুনেও না শোনার ভাণ করতেন। আর খেলতে গিয়ে ঝগড়া লাগলে ‘মালাউনের বাচ্চা’ বলে গালি দিয়ে খেলাতে হেরে যাওয়ার প্রতিশোধ তুলত। এভাবেই আমরা অন্তর ক্ষয়ে বড় হয়েছি।

আমার মা গার্লস স্কুলের শিক্ষিকা ছিলেন। উনার সহকর্মী মুসলিম শিক্ষিকার ছেলে নামকরা এক হিন্দু অধ্যাপকের মেয়েকে বিয়ে করেছে। সেই অধ্যাপককে একনামে সকলেই চিনতো। তখন হিন্দুকে মুসলমান বানানোর মধ্যে দারুন আনন্দের ব্যাপার থাকত। সেই আনন্দের রেশ ধরেই বিয়ের দুই দিন পর সেই শিক্ষিকা স্কুলে এসে তাড়াতাড়ি বাড়ী ফিরে যেতে চাইলেন। কারন হিসেবে বলেছিলেন, “ আজকে আমাদের বৌ কে গরুর মাংস খাওয়ানো হবে। সেই উপলক্ষ্যে বাড়ীতে অনেক মেহমান আসবে”। শুনেই বাকী মুসলিম সহকর্মী শিক্ষকেরা আনন্দোল্লাস করে উঠেছিলেন। শিক্ষকরুমে আমার মা ছাড়াও আরও কয়েকজন হিন্দু ধর্মাবলম্বী শিক্ষক ছিলেন। আনন্দ প্রকাশের সময় তাঁদের অনুভূতির কথা একবারও কেউ ভেবে দেখেনি। সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার মেয়েও একসময় মুসলিম ছেলেকে বিয়ে করে। সেই শিক্ষিকা ছিলেন কমিউনিস্ট পার্টির নেত্রী। ধর্মীয় আচার পালনে বিশ্বাস করতেননা। কিনতু তা বললেই কি হয়? স্কুলের অন্যান্য শিক্ষক শিক্ষিকারা অতি উৎসাহে কোর্ট ম্যারেজ শেষে প্রধান শিক্ষিকার বাড়ীতে মুসলিম রীতি অনুসারে বিয়ের আয়োজন করে। নামে হিন্দু প্রধান শিক্ষিকার মেয়ের মুসলিম রীতিতে বিয়ের অনুষ্ঠানে অনেকের সাথে আমার মা’কেও নিমন্ত্রণ করা হয়েছিল। আমার বাবা একটি কথাই বলেছিলেন, “ প্রয়োজনে চাকুরী ছেড়ে দিও, কিনতু চাকুরী রাখার খাতিরে নিজের আদর্শ জলাঞ্জলী দিয়ে প্রধান শিক্ষিকাকে খুশী করার প্রয়োজন নেই। তুমি যাবেনা এমন বিতর্কিত অনুষ্ঠানে”। পরদিন আমার মা স্কুলে যেতেই প্রধান শিক্ষিকা একফাঁকে বলেছিলেন, “ আপনি আসেননি, আমি খুবই খুশী হয়েছি। এই অনুষ্ঠান আয়োজনে আমার কোন হাত ছিলনা। মিসেস খাতুন নিজ দায়িত্বে এই অনুষ্ঠান আয়োজন করেছেন”। এই একটি কথার মধ্যেই প্রধান শিক্ষিকার মনের অসহায়তার কথা ফুটে উঠেছিল। উনি উনার নীতির কারনে ধর্মীয় আচার পালন করতেন না, কিনতু এটাকে অজুহাত ধরে নিয়ে সেদিন সংখ্যাগুরু শিক্ষকের দল যে কাজটি করেছিল, সেটা ছিল সংখ্যালঘুর ধর্মীয় অনুভূতিতে চরম আঘাত।

এখনও অনেক মুসলিম বন্ধুদের বাড়ীতে বেড়াতে গেলে টেবিলে খাবার দাবারের প্রচুর আয়োজনের মধ্যে ‘গরুর মাংস’ও থাকে। গরুর মাংস খাইনা বললে, সাথে সাথে একদল নিমন্ত্রিত অতিথির উপস্থিতেই আলটপকা কেউ বলে ফেলে,“কেন, অনেক হিন্দুই তো আজকাল গরুর মাংস খায়, আপনি খাবেন না কেনো”? প্রথম কথা, হিন্দু অতিথির সামনে ‘গরুর মাংস’ পরিবেশন করাটাই হচ্ছে এক নম্বর অভদ্রতা, দুই নাম্বার অভদ্রতা হচ্ছে , অন্যেরা গরু খায় বলে তাকেও গরুর মাংস খাওয়ার জন্য অন্যায় আবদার করা। এগুলোওতো একধরনের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের শামিল। ধরে নিলাম, অনুষ্ঠানে হিন্দু –মুসলিম অনেকেই থাকে, তাই গরুর মাংস রান্না করা হয়। কিনতু এমনও হয়েছে, শুধুই আমরাই নিমন্ত্রিত, এমন অবস্থায়ও টেবিলে গরুর মাংস রাখা হয়েছে। আমরা যেহেতু উচ্চশিক্ষিত শ্রেণীর মধ্যে পড়ি, তাই আমাদের যে সমস্ত বন্ধু-বান্ধবের কথা বললাম, তারাও উচ্চশিক্ষিত শ্রেণীর মধ্যেই পড়ে। তাদের কখনও মনে হয়নি, বছরের বারোমাসই তো গরুর মাংস খাওয়া যায়, একটা দিন কী একটি হিন্দু পরিবারের সম্মানে আইটেমটা বাদ দেয়া যায়না! এগুলোও অন্যের ধর্মীয় অনুভূতিকে তোয়াক্কা না করার মতই ব্যাপার।

মূল পোস্টের লিংক। http://blog.bdnews24.com/ritaroymithu/121589

No comments:

Post a Comment