মসজিদ নির্মাণকে কেন্দ্র করে হিন্দু বাড়িতে আগুন

দিনাজপুর, (ওয়ার্ল্ড নিউজ সার্ভিস) – হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় একটি মসজিদ নির্মাণকে কেন্দ্র করে দিনাজপুরের চিরির বন্দর উপজেলায় হিন্দুদের অন্তত ২০টি বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভাংচুর ও লুটপাট হয়েছে আরো কয়েকটি বাড়িতে।

পরিস্থিতির অবনতির শঙ্কায় প্রশাসনের জারি করা ১৪৪ ধারার মধ্যেই শনিবার সকাল ১০টায় অমরপুর ইউনিয়নের রাজাপুর এবং পাশের আব্দুলপুর ইউনিয়নের মাজপাড়া গ্রামে এই হামলা হয়।

হামলা-ভাংচুরে জড়িত থাকার অভিযোগে আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রশিদুল মন্নাফ কবীর সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

ঘটনার সূত্রপাত হয় কয়েকদিন আগে উপজেলার বলাইবাজার নামে স্থানে একটি মসজিদ নির্মাণকে কেন্দ্র করে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কবীর সাংবাদিকদের বলেন, অমরপুর ইউনিয়নের বলাইবাজারে জনৈকা হামিদা বানু তার নিজস্ব জায়গায় ৩/৪ দিন আগে একটি মসজিদ নির্মাণ শুরু করলে এলাকার হিন্দু সম্ú্রদায় বাধা দেয়।

এ নিয়ে উভয় পক্ষকে সমঝোতার আহবান জানিয়ে পরিস্থিতি অবনতির আশংকায় শুক্রবার বিকাল থেকে সেখানে ১৪৪ ধারা জারি এবং পুলিশ মোতায়েন করে স্থানীয় প্রশাসন।

“কিন্তু আজ (শনিবার) সকাল ১০টার দিকে প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার লোক লাঠি-সোঁটা নিয়ে রাজাপুর গ্রামে আকস্মিক হামলা চালিয়ে হিন্দুয়ের ঘর-বাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে,” বলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

তিনি জানান, বেলা ১টার দিকে আব্দুলপুর ইউনিয়নের মাজাপাড়া গ্রামে হামলা চালিয়ে হিন্দুদের ৬/৭টি বাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

খবর পেয়ে দুটি স্থানে পুলিশ লাঠিপেটা ও রবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান।

অমরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী জানান, দুই গ্রামে প্রায় ২০/২২টি বাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।

“হামলাকারীরা সবাই ছিল অন্য এলাকার। পাশের পার্বতীপুর উপজেলার লোকও ছিল,” বলেন তিনি।

মসজিদ নিয়ে স্থানীয় হিন্দুদের আপত্তির বিষয়ে সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোতালেব হোসেন ও বর্তমান চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী উভয়ই জানান, বলাইবাজার-রাজাপুর এলাকার এক কিলোমিটারের মধ্যে কোনো মুসলমানের বাস নেই। তাই এলাকার হিন্দুরা বলছিল, এখানে মসজিদ করার কোনো যৌক্তিকতা নেই।

মসজিদ নির্মাণকারী হামিদা বানু জানান, ২০০৬ সালে সেখানে তার নিজস্ব জমিতে নির্মিত মার্কেটের সঙ্গে মসজিদটি করা হয়। এখানে বাজারে আসা লোকজন নামাজ পড়েন। মুসল্লিদের অনুরোধে নামাজ ঘরটি নতুন করে পাকা করতে গেলে হিন্দুরা বাধা দেয়।

“আমার নিজের জায়গায় মসজিদ করতে পারব না- এ কোন ধরনের দাবি,” বলেন তিনি।

ওই এলাকায় মুসলমানদের বাস না থাকার বিষয়টি তুলে ধরলে হামিদা বলেন, “এলাকায় মুসলমান বসবাস করে না বলে মসজিদ করা যাবে না, এটা কোনো যুক্তি হতে পারে না।”

সকালে সহিংসতার পর বিকালে জেলা প্রশাসক আজিজুল ইসলাম, পুলিশ সুপার ময়নুল ইসলামসহ জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান। এলাকাজুড়ে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি সদস্যরা টহল দিচ্ছে।


খবর সূত্র: wns24.com

No comments:

Post a Comment