বাগেরহাটে অর্ধশতাধিক সংখ্যালঘু পরিবারে হামলা ভাংচুর লুট

শ্লীলতাহানির শিকার মহিলা, হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে বাধা
নিজস্ব সংবাদদাতা, বাগেরহাট, ৩১ জুলাই ॥ বাগেরহাটের ফকিরহাটে ফুটবল খেলা নিয়ে বাচ্চাদের ঝগড়ার জের ধরে সংখ্যালঘু একটি গ্রামে হামলা চালিয়ে বেপরোয়া মারপিট, মহিলাদের শ্লীলতাহানি ও ৫টি বাড়ি ভাংচুর ও গণলুটপাট করেছে প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসীরা। সোমবার রাতে স্থানীয় কুখ্যাত সন্ত্রাসী ও মাদক বিক্রেতা সায়েদ আলীর ছেলে শহিদুল ইসলাম ওরফে শহীদ মেম্বর, তার ভাই রিক্ক, মজিদ সরদারের ছেলে মামুন, তার ভাই ছুটে, ইদ্রিস আলী, আইয়ুব আলীর ছেলে বাবুল, আলতাফ হোসেনের ছেলে সুজন, নজরুল ইসলামের ছেলে এরশাদ আলী, মনো ফকিরের ছেলে মোজাম ফকির ও লিটন ফকিরসহ ৪০/৫০ সন্ত্রাসী লাঠিসোটা, দা-কুড়াল ও অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হিন্দু অধ্যুষিত ব্রহ্মডাঙ্গা গ্রামে এ গণহামলা ও লুটপাট চালায়। এ সময় সন্ত্রাসীদের হামলা, মারপিট ও দায়ের কোপে স্থানীয় মেম্বর মকর মণ্ডল, তার স্ত্রী নমিতা মণ্ডল, সুব্রত রায়, তার স্ত্রী বাসন্তী রানী রায়, মেয়ে সুপর্ণা রায়, নিরাপদ মণ্ডলের ছেলে তাপস মণ্ডল ও পলাশ মণ্ডল, পলাশের স্ত্রী মাধুরী রানী মণ্ডল, সমীর মজুমদারের ছেলে সম্রাট মজুমদার, গোপাল রায়ের ছেলে স্বপন রায়, গোপাল রায়ের স্ত্রী শোভা রানী রায় ও বলরাম মন্ডলের ছেলে প্রহ্লাদ মন্ডলসহ ২০জন আহত হয়। আহতদের ফকিরহাট হাসপাতালে নিয়ে গেলেও সেখানে গিয়ে সন্ত্রাসী হামলা করে ও ভয়ভীতি দেখিয়ে তাড়িয়ে দেয়। এ অবস্থায় ওই গ্রামের অর্ধশতাধিক পরিবারের নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ ও শিশুরা ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়। ঘটনার পর স্থানীয় নলধা ফাড়ির পুলিশকে খবর দিলেও তারা দুই ঘন্টা পরে ঘটনাস্থলে যায় বলে আহতরা অভিযোগ করেছে। খবর পেয় মঙ্গলবার সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেবপ্রসাদ পাল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান খান জাহিদ হাসান, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান কাজী মহসীন আলী, সাবেক চেয়ারম্যান আজাহার মোড়ল, জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ ও খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি শিবপ্রসাদ ঘোষ, ফকিরহাট উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনোতোষ রায় কেষ্টসহ নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থল পরির্দশন করে এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচারের দাবি জানিয়েছেন। আতঙ্কের প্রেক্ষাপটে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

আহত ইউপি মেম্বর মকর মন্ডল জানান, চারদিন আগে স্থানীয় স্কুল মাঠে বাচ্চাদের একটি ফুটবল খেলা নিয়ে তারা ঝগড়া করে। পরে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা বসে সেটি মীমাংসা করে দেয়। এ ঘটনার জের ধরে প্রতিপক্ষ বিএনপি ও জোট সরকারের সময়ের ক্যাডার ও চরমপন্থী সন্ত্রাসীরা ও মাদক বিক্রেতা সায়েদ আলীর ছেলে শহিদুল ইসলাম ওরফে শহীদ মেম্বর, তার ভাই রিক্ক, মজিদ সরদারের ছেলে মামুন, তার ভাই ছুটে, ইদ্রিস আলী, আইয়ুব আলীর ছেলে বাবুল, আলতাফ হোসেনের ছেলে সুজন, নজরুল ইসলামের ছেলে এরশাদ আলী, মনো ফকিরের ছেলে মোজাম ফকির ও লিটন ফকিরসহ ৪০/৫০জন সন্ত্রাসী লাঠিসোটা, দা-কুড়াল ও অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পরিকল্পিতভাবে তাকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে বেপরোয়া মারপিট করে। এ সময় তার চিৎকারে তার স্ত্রী বাসন্তী এগিয়ে এসে সন্ত্রাসীরা তাকে ও তার মেয়েকে বেপরোয়া মারপিট করে। এ সময় সন্ত্রাসীরা গ্রামের যাকেই সামনে পায় তাকেই মারপিট ও কুপিয়ে জখম করে। পরে তারা তার বাড়িসহ ৫টি বাড়ি ভাংচুর করে সর্বস্ব লুটপাট করে। সন্ত্রাসীরা গ্রামের অর্ধশতাধিক পরিবারের নারী-পুরুষ ও শিশুদের মারপিট করে বেপরোয়া নির্যাতন করে। সন্ত্রাসীদের হাতে গ্রামের ৮/১০ মহিলা লাঞ্ছনার ও শ্লীলতাহানির শিকার হয়। তখন চিৎকার চেঁচামেচি করে গ্রামের ৩/৪শ’ নারী পুরুষ ঘরবাড়ি থেকে পালিয়ে বাগানে ও জঙ্গলে আশ্রয় নেয়। গ্রামের সন্ত্রাসীরা এক নারকীয় কান্ড সৃষ্টি করে। পরে খবর চেয়ারম্যান এসেও সন্ত্রাসীদের নিবৃত করতে ব্যর্থ হয়। এলাকায় চরম আতঙ্ক বিস্তার করছে।

দৈনিক জনকণ্ঠ, ০১ আগস্ট, ২০১২। খবরের লিংক

No comments:

Post a Comment