সাতক্ষীরায় চেয়ারম্যান বাহিনীর হুমকির মুখে সংখ্যালঘু পরিবার গ্রামছাড়া


পা কেটে নেয়ার অভিযোগে ইউএনওর নামে জিডি
স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা ॥ একটি খাস খাল খননের বিরোধের জের ধরে জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার ধলবাড়িয়া ইউনিয়নের ডেমরাইল গ্রামের সংখ্যালঘু সাবেক ইউপি সদস্য নিরঞ্জন মণ্ডলের পরিবার গত তিনদিন ধরে গ্রামছাড়া। পা কেটে নেয়ার হুমকি দেয়ার ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নামে থানায় সাধারণ ডায়েরি করার পর চেয়ারম্যান বাহিনীর সদস্যদের অব্যাহত হুমকির মুখে পরিবারটি এখন জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। অব্যাহত হুমকির মুখে এই পরিবারটি শুক্রবার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে লিখিত সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে হুমকি দেয়ার অভিযোগ তুলে ধরে সরকার প্রধানের কাছে বিচার ও নিরাপত্তা দাবি করেন। এই ঘটনার ছবি তোলার অপরাধে স্থানীয় এক সাংবাদিকের ক্যামেরা ও মোবাইল কেড়ে নেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। নিরঞ্জন মণ্ডলের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা দাবি করে ধলবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান কাজী শওকাত হোসেন শুক্রবার সন্ধ্যায় জনকণ্ঠকে বলেন, আওয়ামী লীগের স্থানীয় গ্রুপিং-এর কারণে তার বিরুদ্ধে সাজানো অভিযোগ করা হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মর্কতা তৌফিক এলাহী পা কেটে নেয়ার হুমকি দেয়ার অভিযোগটি মনে হয় মিথ্যা দাবি করে এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান ও কালিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি সম্পাদকের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দিয়ে তার বিরুদ্ধে জিডি হওয়ার কথা স্বীকার করেন।
নিরঞ্জন মণ্ডলের দাবি- তাদের রেকর্ডীয় সম্পত্তির পাশে প্রায় ৪০ বছর ধরে তারা একটি ভরাট হয়ে যাওয়া খালের জমির ওপর বসবাস করছে। বিনিময়ে তারা পানি নিষ্কাশনের জন্য তাদের রেকর্ডীয় জমির ওপর দিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করেছে। গত ৭ মে সকালে চেয়ারম্যান , ইউএনও ও তার লোকজন তাঁদের বাড়ির মধ্যদিয়ে খাল কাটতে গেলে বিরোধের সূত্রপাত হয়। এ সময় ইউএনও নিরঞ্জনের পা কেটে নেয়ার হুমকি দেন। এ ঘটনায় কালিগঞ্জ থানায় নিরঞ্জন বাদী হয়ে ইউএনও’র নামে জিডি করলে ৮ মে সকালে মেম্বর, চৌকিদারসহ ৩ থেকে ৪শ’ লোক নিয়ে নিরঞ্জনের বাড়ি ঘিরে তাদের সকলকে বেঁধে ফেলতে বলে। এ সময় কালিগঞ্জ থেকে যাওয়া এক সাংবাদিক ঘটনার ছবি তোলায় চেয়ারম্যান ও তার লোকজন সাংবাদিকের ক্যামেরা ও মোবাইল কেড়ে নেয় বলে অভিযোগ করা হয়। সাংবাদিকের ক্যামেরা কেড়ে নেয়ার বিষয়ে চেয়ারম্যান বলেন, ঘরে ভাত ছড়িয়ে ছবি তোলার ঘটনায় লেবাররা সাংবাদিকের ক্যামেরা কেড়ে নিয়ে পুলিশকে দিয়ে দেন।

এদিকে ৯ মে রাতে একদল মুখোশধারী নিরঞ্জনের বাড়িতে সকলকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে ইউএনও’র নামে দায়ের করা জিডি প্রত্যাহারের জন্য একটি কম্পিউটার করা কাগজে স্বাক্ষর করার জন্য চাপ দেয়। নিরঞ্জন লাফ দিয়ে বাড়ি থেকে আত্মরক্ষা করলেও সন্ত্রাসীরা তাদের গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি দেয়। এ ঘটনার পর থেকে নিরঞ্জনসহ তার নিকট আত্মীয়রা সাতক্ষীরা শহরে এসে আশ্রয় নিয়েছে। সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে স্বাক্ষর করেন নিরঞ্জনের পুত্র শুভঙ্কর মণ্ডল। এ ছাড়া স্ত্রী রীনা মণ্ডল, কাকি সন্ধ্যা রানী মণ্ডল, মেয়ে সুশীলা মণ্ডল, সুষ্মিতা মণ্ডল, সুদিপ্ত মণ্ডল, পূজা মণ্ডলসহ পরিবারের সদস্যরা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থেকে তাদের নিরাপত্তা দাবি করেন।

খবর সূত্র: দৈনিক জনকণ্ঠ ১২ মে ২০১২

No comments:

Post a Comment