ধর্মান্ধদের হামলায় জ্বলছে সাতক্ষীরার ফতেপুর গ্রাম

পুলিশের ভূমিকা রহস্যজনক
স্টাফ রিপোর্র্টার, সাতক্ষীরা ॥ কালিগঞ্জের ফতেপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মিতা রানীকে স্কুলে ডেকে এনে গ্রেফতার করে থানার ওসি ফরিদ আহমেদ। একই সময়ে গ্রেফতার করা হয় প্রধান শিক্ষক রেজওয়ান হারুনকে। স্বাধীনতা দিবসের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছাত্রদের অভিনীত একটি নাটকে নবীজী সম্পর্কে কটূক্তি করা হয়েছে এই অভিযোগে দায়ের করা একটি মামলায় তাদের গ্রেফতার করা হলেও শনিবার কয়েক হাজার মানুষ হামলা চালিয়ে লুটপাট করেছে হাজতে আটক থাকা মিতা রানীর বসতবাড়ি। আগুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সদস্য আকুল মেম্বরসহ তাঁর তিন ভাইয়ের বসতবাড়ি। পোড়ানো হয়েছে স্থানীয় সাংস্কৃতিক পরিষদ। ভেঙ্গে তছনছ করা হয়েছে ফতেপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের চেয়ার, টেবিলসহ আসবাবপত্র। লুট করা হয়েছে হাকিমের বাঁশতলা বাজারের কম্পিউটারের দোকান। শনিবার সকাল ১১টায় ইউনিয়নের বাইরে থেকে আসা কয়েক হাজার মানুষ এই অতর্কিত হামলায় অংশ নেয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, হামলায় অংশ নেয়া অধিকাংশই ছিল বিভিন্ন মাদরাসার ছাত্র ও মৌলবাদী সংগঠনের সদস্য। অভিযোগ, হামলার সময় পুলিশের ভূমিকা ছিল রহস্যজনক। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের দাবি করে পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান খান সাংবাদিকদের বলেন, ক্ষোভ প্রশমনের জন্য ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সমন্বিত উদ্যোগে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত জেলা প্রশাসক ড. মুহা. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, আনওয়ানটেড ঘটনার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। বিচ্ছিন্নভাবে ঘটনা ঘটায় নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত স্কুলের পাশে লক্ষ্মীপদ ম-লের বাড়িতে হামলাকারীরা নতুন করে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। বাড়িটি এখনও জ্বলছে।
স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানের নাটকে নবীজী সম্পর্কে কি কটূক্তি করা হয়েছিল এ বিষয়টি এলাকার কারও কাছে স্পষ্ট না হলেও এই ঘটনার জন্য সংশ্লিষ্ট স্কুল প্রধান শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দিদারুল ইসলামসহ সকলে প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা করার ঘোষণা দেন। এরপরও এ ঘটনায় দক্ষিণ শ্রীপুর ইউপি সদস্য আবু জাফর সাঁপুই বাদী হয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি, তিন সদস্য, দু’জন শিক্ষক ও নাটক পরিচালনাকারীর নাম উল্লেখ করে শুক্রবার থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলা করার পরই ওসি স্কুলে এসে শিক্ষকদ্বয়কে স্কুলে ডেকে এনে তাদের গ্রেফতার করেন।
এদিকে মামলা ও গ্রেফতারের ঘটনার পরও শনিবার সকাল ১১টার দিকে কৃষ্ণনগর, বালিয়াডাঙ্গা ও রামনগর গ্রাম থেকে কয়েক হাজার মানুষ লাঠি নিয়ে হামলিয়ে পড়ে ফতেপুর গ্রামে। কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান জামায়াত নেতা আনছার উদ্দিন, সাবেক চেয়ারম্যান জাপানেতা মোশারাফ হোসেনের নেতৃত্বে হাজার হাজার মানুষ হামলা চালিয়ে ভাংচুর, লুটপাট ও অংগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটালেও সেখানে থাকা পুলিশ সদস্যরা ছিল একেবারেই নির্বিকার। পুলিশ সুপার জানান, শনিবারের এই হামলার বিষয়টি সম্পর্কে তাদের গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক ব্যর্থ হয়েছে। তারা কোন ভাবেই অবগত ছিলেননা।
সাতক্ষীরা শহর থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দূরের এই ফাতেপুর গ্রামে বেলা দেড়টায় গিয়ে দেখা যায়, সকাল ১১টায় ধরিয়ে দেয়া আগুনে জিবির সদস্য আকুল মেম্বারসহ তার তিন ভাইয়ের বসতঘর তখনও জ্বলছে। হাজতে আটক মিতা রানীর বাড়িতে প্রথমে আগুন দেয়া হলেও প্রতিবেশীদের অনুরোধে আগুন না দিয়ে বাড়িটি ভাংচুর করে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। লুটপাট করা হয়েছে প্রতিটি জিনিস। ৩ বছরের ছোট ছেলে দীপুর বালিশটি পড়ে আছে পুকুর ধারে। মায়ের শাড়ির ছেড়া অংশ পড়ে আছে বাড়ির সামনে।
এই হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের পর সেখানে প্রায় ৪ প্লাটুন পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা চেয়ারম্যানসহ সকলে এলাকায় অবস্থান করছেন। হামলাকারীদের ভয়ে গ্রামের মানুষ এখন মুখ খুলতে ভয় পাচ্ছে। অনেকের অভিযোগ, ধর্মীয় ইস্যুর পাশাপাশি স্কুল ম্যানেজিং কমিটির বিরোধ নিয়ে প্রতিপক্ষকে জব্দ করতে এই হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটানো হয়েছে পরিকল্পিত ভাবে। সরকারকে বিব্রত কর অবস্থায় ফেলতে এবং ইমেজ নষ্ট করতেই এই ঘটনা বলে অনেকের অভিযোগ। এ ছাড়া কালিগঞ্জ থানার ওসি ফরিদ উদ্দিনের ভূমিকাও রহস্যজনক এমন অভিযোগ করে এলাকাবাসী জানান, পুলিশ সতর্ক থাকলে ভাংচুর, লুটপাটের ঘটনা ঘটতনা। স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেফতার করতে এই ওসির আগ্রহ অনেক বেশি- এমন অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখার দাবি করেছে এলাকাবাসী।
সূত্র: দৈনিক জনকণ্ঠ

2 comments:

  1. চুদির ভাইরা তোমরা নবিকে অপমান করবা আবার ফাল পাড়বা। লাত্থি দিয়া ইন্ডিয়া পাঠাইয়া দিমু।

    ReplyDelete
  2. না জেনে না বুঝে অন্ধের মত মন্তব্য করার জন্য আপনার এই মন্তব্যটি বাতিল করে দেয়া উচিত।

    এই অনুসন্ধানী প্রতিবেদনটি পড়ে দেখুন।
    http://bdnews24.com/bangla/details.php?cid=2&id=191844&hb=top

    ReplyDelete