ভাঙচুর ও অবরোধের পর হাটহাজারীতে ১৪৪ ধারা

চট্টগ্রামের হাটহাজারীর নন্দীর হাটে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর হয়েছে। পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় স্থানীয় প্রশাসন হাটহাজারী সদরে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করেছে।
এর আগে এক পক্ষ গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত চট্টগ্রাম-রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি সড়ক সাত ঘণ্টা অবরোধ করে রাখে। এতে স্বল্প ও দূরপাল্লার যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়ে।

বৃহস্পতিবার রাতে নন্দীর হাটে দুই পাড়া-প্রতিবেশীর মধ্যে বিরোধের জের ধরে এ ঘটনার সূত্রপাত হয়। এ নিয়ে গতকাল একাধিক স্থাপনায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ সময় পুলিশ বাধা দিতে গেলে পাঁচ পুলিশসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে হাটহাজারী সার্কেলের এএসপি বাবুল আক্তারও রয়েছেন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিকেল পাঁচটার দিকে হাটহাজারী সদরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। পরে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে সড়ক থেকে লোকজনকে হটিয়ে দেয়। এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহম্মদ বলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আমরা ১৪৪ ধারা জারি করেছি। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে।’ পরিস্থিতি এখন পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলেও তিনি জানান।

গতকাল সরেজমিনে দেখা গেছে, হাটহাজারীর নন্দীর হাটে সকাল থেকে এক পক্ষ অবস্থান নিয়ে রাস্তার গাছ ফেলে অবরোধ সৃষ্টি করে। এ সময় তারা নন্দীর হাট থেকে হাটহাজারী সদর পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে টায়ার জ্বালিয়ে দেয়। এতে সড়কের দুই পাশে শত শত যানবাহন আটকা পড়লে যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়ে। পরিস্থিতি শান্ত করতে পুলিশ বারবার চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অবরোধকারীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। জুমার নামাজের পর হাটহাজারী সদরে সড়কের ওপর মাদ্রাসাছাত্র ও স্থানীয় কিছু লোকজন অবস্থান নেয়। এর পরই কয়েকটি স্থানে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

বিকেল সাড়ে চারটার দিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী আফছারুল আমীন ও নগর আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা নন্দীর হাট এলাকায় পৌঁছান। এ সময় তাঁরা সেখান থেকে হেঁটে হাটহাজারীর দিকে রওনা দেন। পথে পথে দাঁড়ানো লোকজনকে তিনি শান্ত থাকার অনুরোধ জানান। এর পরপর নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মহিউদ্দিন চৌধুরী ও অন্যান্য নেতা হাটহাজারীতে পৌঁছে প্রশাসনের লোকজনের সঙ্গে বৈঠক করেন। ঘটনাস্থলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহম্মদ, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নওশের আলী, পুলিশ সুপার জেড আই মোরশেদসহ পুলিশ ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকলেও এ বিষয়ে কেউ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

পরে পাঁচটার দিকে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। এর পরপর মাইকিং করে ও পুলিশ দিয়ে সদরের অবরোধকারীদের হটিয়ে দেওয়া হয়। মন্ত্রীর আগে সকালে স্থানীয় সাংসদ ও জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ সেখানে গেলে স্থানীয় ব্যক্তিদের রোষানলে পড়েন।

মন্ত্রী আফছারুল আমীন বলেন, পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। একটা ভুল-বোঝাবুঝি থেকে এ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে গেছে। এখন যাতে আর কোনো ধরনের ঘটনা না ঘটে, সে জন্য পাড়া ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, এর সঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিবিরকর্মীর হত্যার ঘটনার সম্পৃক্ততা থাকতে পারে।

প্রথম আলো

No comments:

Post a Comment