এমপির বাড়িতে ডাকাতি, ঢাকেশ্বরী মন্দিরে চুরি।

বাড়ির ৬৫ ভরি ও মন্দিরের ২০০ ভরি স্বর্ণালংকার লুট

ইত্তেফাক রিপোর্ট

রাজধানীর পল্লবীতে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য শাহীদা তারেক দীপ্তির বাসায় ডাকাতি হয়েছে। শনিবার গভীর রাতে ডাকাতরা তার পরিবারের সকলের হাত-পা বেঁধে ৬৫ ভরির স্বর্ণালঙ্কার ও সাড়ে ৫ লাখ টাকা নিয়ে যায়। অন্যদিকে, বকশি বাজারে ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে ২০০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও সাড়ে ৪ লাখ টাকা লুট হয়েছে। এ ঘটনায় রবিবার মন্দিরে পূজা উদযাপন বন্ধ ছিল। এছাড়া শনিবার গভীর রাতে সবুজবাগে এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে ডাকাতরা হানা দিয়ে ১০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও পৌনে ৬ লাখ টাকা নিয়ে গেছে।

পল্লবী থানা পুলিশ জানায়, পলস্নবী মডেল টাউনের ৩৪ নম্বর রোডের ২ নম্বর বাড়ির নিচতলায় দীপ্তি সপরিবারে ভাড়া থাকেন। বাড়ির মালিক মৃত মেজর (অব.) জিয়াউল হক। তার স্ত্রী নিগার সুলতানা ও নিকট আত্মীয় জুলেখা বেগম বাড়ির দোতলায় থাকেন। শনিবার রাত ২টার দিকে বাড়ির দোতলার বারান্দার গ্রিল কেটে ৪/৫ জন মুখোশধারী ডাকাত প্রবেশ করে। ডাকাতরা নিগার সুলতানা ও জুলেখা বেগমের হাত-পা বেঁধে তাদের মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে দেয়।

ডাকাতরা তাদের কাছ থেকে গাড়ির চাবি চায়। তারা জানায়, গাড়ির মালিক বাড়ির নিচতলার ভাড়াটিয়া। পরে ডাকাতরা আলমারি থেকে ৫০ হাজার টাকা ও সাড়ে ছয় ভরির স্বর্ণালঙ্কার নেয়। ডাকাতরা বাড়ির দোতলা থেকে নিচতলায় গিয়ে ড্রইং রুমের জানালার গ্রিল ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে। ডাকাত দল আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো ছুরি দেখিয়ে সংসদ সদস্য দীপ্তি, তার স্বামী নাট্য পরিচালক তারেক মিন্টু, মেয়ে মন্দিরা ও গৃহপরিচারিকা লাইজু'র হাতপা বেঁধে ফেলে। ডাকাতরা মোবাইল ফোনের সিমকার্ড সেট থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। তারা আলমারির চাবি নিয়ে আলমারি থেকে সাড়ে ৫ লাখ টাকা ও ৬৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার লুট করে। এসময় ডাকাতরা সংসদ সদস্যের বাড়ির জিনিসপত্র তছনছ করে। প্রায় দুই ঘন্টা ঐ বাড়িতে অবস্থানের পর রাত ৪টার দিকে ডাকাতরা বেরিয়ে যায়।

পরে সংসদ সদস্যের পরিবারের চিৎকারে আশপাশের লোকজন চলে আসে। ঘটনার পর পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপ-কমিশনার, পল্লবী থানার ওসিসহ পদস্থ কর্মকর্তারা ছুটে যান। সকাল ৮টার দিকে সংসদ সদস্য ইলিয়াস মোল্লা ও কামাল আহমেদ মজুমদার দীপ্তির বাড়িতে যান। তারা দীপ্তিকে সান্ত্বনা দেন। সংসদ সদস্য দীপ্তি অভিযোগ করেন, ডাকাতদের মধ্যে একজনকে তিনি চিনতে পেরেছেন। এ ডাকাতির পেছনে বিরোধী দলের কোন হাত থাকতে পারে বলে তিনি অভিযোগ করেন। বেলা ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে যান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। ২৪ ঘন্টার মধ্যে ডাকাত দলকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সংসদ সদস্যের বাড়িতে ডাকাতিতে রাজধানীর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কোন অপরাধের ঘটনা ঘটলে অপরাধী সঙ্গে সঙ্গে ধরা পড়ছে। অতীতের সরকারের চেয়ে বর্তমানে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো। পলস্নবী থানায় একটি ডাকাতির মামলা হয়েছে। ডাকাতির ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ কাদের ওরফে কাদু নামে একজনকে আটক করেছে।

ঢাকেশ্বরী মন্দিরে চুরি

ঢাকেশ্বরী মন্দিরে প্রতিমার সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে লাগানো প্রায় ২০০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার চুরি হয়েছে। শনিবার রাত ৯ টা থেকে রাত ৩ টার যেকোন সময়ে এই চুরি সংঘটিত হয়। এ ব্যাপারে মহানগর সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট তাপস পাল জানান, আটশ' বছরের পুরনো পূজামন্ডপে এই চুরি হয়েছে। শনিবার রাত ৯ টার দিকে মন্দির বন্ধ হয়ে যায়। রবিবার ভোরে তারা জানতে পারেন মন্দিরে চুরি হয়েছে। চোর মন্দিরের পূজামন্ডপের প্রবেশ গেটের ৪ টি তালা ভেঙ্গে ফেলেছে। এর মধ্যে একটি তালা কেটে ফেলা হয়। পূজামন্ডপে রাখা ৬ টি প্রণামী বক্সের তালা ভেঙ্গে তারা ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা লুট করে। পূজামন্ডপে সকল প্রতিমার মাথায় স্বর্ণের মুকুট চুরি করে। এছাড়া প্রতিমাগুলোর গায়ে সকল স্বর্ণালঙ্কার চুরি করে। প্রতিমার গায়ে প্রায় ২শ' ভরির স্বর্ণালঙ্কার চুরি করে।

ঘটনার পর মহানগর সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দ ছুটে আসেন। সিআইডির একটি টিম মন্দির থেকে চুরি হয়ে যাওয়ার বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করে। চুরির কারণে মন্দির অপবিত্র হয়েছে বলে রবিবার পূজা বন্ধ রাখা হয়। ঘটনার পর মহানগর সার্বজনীর পূজা উদযাপন কমিটি জরুরি বৈঠক করে এ ঘটনার ক্ষোভ প্রকাশ করে। চুরির ঘটনায় মহানগর সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি বীরেশ চন্দ্র সাহা বাদী হয়ে চকবাজার থানায় একটি মামলা করেছেন।

সবুজবাগে ব্যবসায়ীর বাড়িতে ডাকাতি

সবুজবাগের মধ্য বাসাবোর ১৩৩ নম্বর বাড়ির দ্বিতীয় তলায় শেয়ারবাজার ব্যবসায়ী মাহবুবল হক তালুকদারের বাসায় শনিবার রাতে ডাকাতি হয়েছে। রাত ৩ টার দিকে ৭/৮ জনের মুখোশধারী ডাকাত দল বাড়ির দোতলার জানালার গ্রিল ভেঙ্গে ঢুকে পড়ে। ডাকাতরা মাহবুবলের বাবা, মা, স্ত্রী, ছোট ভাই ও দুই সন্তানের হাত-পা বেঁধে ফেলে। পরে আলমারি থেকে ৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা ও ১০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার এবং ২ টি মোবাইল সেট ডাকাতি করে নিয়ে যায়। মাহবুবল হক অভিযোগ করেছেন, ডাকাত দলের দুই-একজনকে তিনি চেনেন। তাদের বাসা মধ্য বাসাবোতে।
সূত্র: ইত্তেফাক

No comments:

Post a Comment