সূত্রাপুরে সংখ্যালঘু পরিবারের বাড়ি দখলের চেষ্টা, লুটপাট

 
 
অপহৃত ৯ জন ৮ ঘণ্টা পর উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৪

কাগজ প্রতিবেদক : রাজধানীর সূত্রাপুরের ঋষিকেশ দাস লেনে গতকাল শনিবার ভোরে সংখ্যালঘু একটি পরিবারের ৯ জনকে অপহরণ করে বাড়ি দখলের চেষ্টা করেছে একটি চক্র। অস্ত্রের মুখে তাদের বাড়ি থেকে তুলে নেয়ার ৮ ঘণ্টা পর পুলিশ তাদেরকে উদ্ধার করে ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। একটি ডেভেলপার কোম্পানি ঘটনার পেছনে ইন্ধন জোগাচ্ছে বলে পুলিশ অভিযোগ পেয়েছে। এ সময় বাড়ির বিভিন্ন মালামাল লুটপাট করা হয় বলেও অভিযোগ করেছেন বাড়ির মালিক নিতাই দাস। গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছে- স্থানীয় জনতা ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসের মালিক বাবুল (৩২), তার সহযোগী আখতার হোসেন (২৭), নিজামউদ্দিন সাগর (২৮) ও সোহাগ (২৮)।

জানা গেছে, ঋষিকেশ দাস লেনের ৯৫ নং দোতলা একটি জরাজীর্ণ বাড়ির মালিক খুরতুতো (চাচাতো) তিন ভাই। এরা হচ্ছেন- মহাবীর দাস, নিতাই দাস ও শম্ভু দাস। ওয়ারিশ সূত্রে তারা বাড়িটির মালিক বলে দাবি করেছেন নিতাই দাস।

নিতাই দাস সাংবাদিকদের বলেন, শুক্রবার রাত প্রায় ৩টার দিকে পুলিশ পরিচয়ে ওই বাড়িতে প্রবেশ করে অস্ত্রের মুখে সবাইকে জিম্মি করে ফেলে সন্ত্রাসীরা। এ সময় তারা সবাই ঘুমিয়ে ছিলেন। একপর্যায়ে বাড়ির সবাইকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় পাশের জনতা ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপে। যাদেরকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে আটকে রেখে বাড়ি দখল করা হয় তারা হলেন - নিতাই দাস, শম্ভু দাস, মহাবীর দাস (৪৫), কাজল রানী দাস (৪২), লক্ষ্মীশ্রী দাস (৪০), বিউটি দাস (১৮), সজল দাস (১৪), সুইটি রানী দাস (১২) ও স্বর্ণা রানী দাস (৮)। বিউটি এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে বলে জানা গেছে। এ ঘটনার জন্য বিউটি গতকাল ব্যবহারিক পরীক্ষা দিতে পারেনি বলে অভিযোগ করেছে।

সূত্রাপুর থানার ওসি তোফাজ্জল হোসেন বলেন, রাত প্রায় ৩টার দিকে ঋষিকেশ দাস লেনের ৯৫নং নিতাই বাবুর বাড়িতে ডাকাতির খবর পেয়ে পুলিশ ওই বাড়িতে যায়। পরে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে জনতা ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের মালিক হোসাইন মোঃ বাবুলসহ ৪ জনকে আটক করা হয়। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল সকাল ১১টার দিকে অপহৃত ৯ জনকে উদ্ধার করা হয়।

ওসি জানান, একটি ডেভেলপার কোম্পানির বিরুদ্ধে ওই এলাকায় একটি মন্দিরসহ বেশ কয়েকটি জমি বিক্রির জন্য চাপ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। বাড়ি দখলের জন্য পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে মনে করেন তিনি। তবে এর সঙ্গে কারা জড়িত তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এদিকে বাবুলসহ গ্রেপ্তারকৃতদের আওয়ামী লীগ কর্মী হিসেবে স্বীকার করে ঢাকা মহানগর ৮০নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেছেন, দলকে ব্যবহার করে অপকর্ম করলে এর জন্য দায়ী সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি। এ ঘটনার সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। আওয়ামী লীগ একটি বিশাল দল। এর সমর্থক ও কর্মী অগণিত। তাই বলে আওয়ামী লীগ পরিচয় দিয়ে অপকর্ম করে পার পেয়ে যাবে এটা হতে পারে না। সব ধরনের অপরাধীর বিচার চায় আওয়ামী লীগ। আর অপরাধ করলে আইনের আওতায় আনতে হবে এটাই দলের আদর্শ।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর এমএলএসএস শম্ভু (৫০) বলেন, তাদের ধরে নিয়ে মারধর করা হয়।
নিতাই দাস বলেন, সন্ত্রাসীরা আমাদের মুখ বেঁধে প্রথমে বাড়িতে লুটপাট চালায়। আলমারি থেকে স্বর্ণালঙ্কারগুলো লুটপাট করে। পরে আমাদের ধরে নিয়ে জনতা ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসে আটকে রাখে। এ ঘটনার সঙ্গে একটি ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের জড়িত থাকার ইঙ্গিত করে নিতাই বলেন, ওই কোম্পানিটি বাড়ি বিক্রি করার জন্য আমাদের চাপ দিচ্ছিল; কিন্ত্ত আমরা রাজি হইনি। বাড়ি বিক্রিতে আমাদের বাধ্য করতে তারা এ কাজ করতে পারে। নিতাই জানান, আটকে রাখার সময় একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর দিতে তাদের বাধ্য করা হয়। নিতাই ওই বাড়ির সামনেই একটি দোকান চালান।

বাড়ির ভাড়াটে কার্তিক চন্দ্র বলেন, শুক্রবার রাতে হঠাৎ শোরগোল শুনে বেরিয়ে দেখি বাড়ির মালিকদের ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সামনে এগিয়ে গেলে দুর্বৃত্তরা মেরে ফেলার হুমকি দেয়। তখন আমরা আবার বাসার ভেতরে ঢুকে পড়ি। পরে বিভিন্ন স্থানে এ ঘটনা জানানোর চেষ্টা করি।

ভোরের কাগজ, ২৩ আগস্ট, ২০০৯

No comments:

Post a Comment